দুর্গম দুর্গে নতুন ফ্রন্ট জয়

সালেক সুফী

আরেক মার্চের অগ্নিঝরা দিনে বাংলাদেশ শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার সুপার স্পোর্টস পার্ক দুর্গে মোক্ষম মিসাইল হেনে নতুন  ফ্রন্ট জয় করেছে। ২০ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানে এই প্রথম বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক মোকাবিলায় প্রথম জয় পেলো। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ সূচনার অগ্নিঝরা মার্চ মাসে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের জন্য উল্লসিত হবার আরো একটি উপাদান সৃষ্টি হলো। ২১ ম্যাচে মুখ মুখী হয়ে এযাবৎ ১৭ ম্যাচ সাউথ আফ্রিকা জিতে নিয়েছিল। বাংলাদেশের ৪ জয়ের ২টি এসেছিলো ২০১৫ বাংলাদেশে। বাকি দুটি ২০০৭ এন্ড ২০১৫ বিশ্বকাপে। আজকের জয়টি দুর্গম দুর্গে প্রথম জয় ছাড়াও আরো মধুর কেননা পূর্ণ শক্তির দক্ষিণ আফ্রিকা এইতো সেদিন বিশ্ব মোড়ল ভারতকে ধবল ধোলাই করেছিল। বাংলাদেশের জয়োধ্বনি কান পাতলেই শুনা যাচ্ছে। ৩৮ রানের এই জয় অনেক কারণেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জয়ের কৃতিত্ব পুরো দলের। যেন ডোনাল্ড, মর্কেলদের জিওন কাঠির পরশে এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।

 

আমি সব সময় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছি বাংলাদেশ অন্তত ওডিআই ফরম্যাটে অত্যন্ত সুসংহত অভিজ্ঞ দল। নিজেদের দিনে ভয়হীন ক্রিকেট খেলে দুনিয়ার যে কোনো স্থানে যে কোনো দলের বিরুদ্ধে জয়ের ক্ষমতা রাখে। শুধু প্রয়োজন দলের সঠিক রসায়ন। খেলার বাইরের বিষয়গুলো যেন দলকে সংক্রমিত না করা। অনেক টালবাহানা,  নাটক শেষে সেই সাকিবের ৭৭ রান আজ প্রেরণা জুগিয়েছে। উদ্ভদনী জুটিতে লিটন (৫০) তামিমের (৪১) রুখে দাঁড়ানো আর নবীন ইয়াসির রাব্বির ঝকঝকে ইনিংস (৫০) বাংলাদেশকে রানের মাউন্ট এভারেস্টে (৩১৪/৭) তুলে দিয়েছিলো। রাবাদা (১/৫৭) , এনজিডিকে (১/৭৫) নিয়ে ম্যাচের আগে যে ভীতি ছড়ানো হয়েছিল তার ছিটে ফোটাও চোখে  পড়েনি।  যাদের কাছ থেকে আশা ছিল একমাত্র মুশফিক (৯) নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। নাহয় তামিম, লিটন, সাকিব, ইয়াসির, মাহমুদুল্লাহ, মিরাজ সবাই রান পেয়েছে।

 

এমনি এক দিনে বোলিং ইউনিট জলে উঠবে সেটিও কাঙ্খিত ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্গে শুরুতেই তাসকিন, শরিফুল আঘাত হেনে (৮.৪ ওভারের মাঝে ৩৬/৩ উইকেট) কোনঠাসা করে ফেলে। দেয়ালে পিঠ রেখেই লড়াই করে ভান্ডার ডুসেন আর ডেভিড মিলার। ওদের ৫ম উইকেট জুটিতে যোগ করা ৭০ রান বাংলাদেশকে রাক্ত চক্ষু দেখছিলো। তাসকিন শেষ স্পেলে এসে দুর্দান্ত খেলতে থাকা ভান্ডার ডুসেনকে ফিরিয়ে কাজের কাজটি করে দেয়। মিলার প্রোটিযা দুর্গের শেষ প্রহরী হয়ে যুদ্ধ চালিয়েছিল বীরের মতোই। কিন্তু শেষ স্পেলে মেহেদী মিরাজ জলে উঠে একে একে চার চারটি উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে অবিস্মরণীয় বিজয় এনে দেয়। বৃথা যায় মিলারের ৫৭ বলে ৮ চার আর ৩ ছয়ে করা বীরোচিত ৭৯ রানের ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকা কিন্তু বিনা যুদ্ধে দুর্গ দখল হতে দেয়নি। মহারাজ, এনজিডি লড়াই করেছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। কিন্তু জয়ের সম্ভাবনা তখন সীমানা পেরিয়ে গাছে। তামিম শেষ উইকেটই মাহমুদুল্লাহকে দিয়ে কিনে নিলো। ৩৮ রানে জয় পেলো বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × three =