দুর্গম দুর্গে সফল প্রত্যাবর্তন

বাংলাদেশ ২০৭ অল আউট (তাওহীদ হৃদয় ৫১, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ৪৪, নাজমুল হোসেন শান্ত ৩১, রিশাদ হোসেন ২৬, জেইডন সিলস ৩/৪৮, রোস্টন চেজ ২/৩০, জাস্টিন গ্রিভস ২/৩২)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩৩ অল আউট ( ব্রেন্ডন কিং ৪৪, অলিক অর্থানেজ ২৭ , রিশাদ হোসেন ৬/৩৩, মুস্তাফিজুর রহমান ২/১৬)

বাংলাদেশ ৭৪ রানে জয়ী।

ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় : রিশাদ হোসেন।

বিশ্ব ক্রিকেটে প্রিয় ফরম্যাটে নাকানি চুবানি খেতে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল মিরপুরে নিজেদের অভয় অরণ্যে ফিরেই ছন্দ ফিরে পেলো। ঘূর্ণি বলের স্থথ উইকেটে সিরিজের প্রথম খেলায় নিজেদের হারিয়ে খুঁজতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অনায়াসে কাল হারিয়েছে ৭৪ রানে। শুরু থেকেই স্পিন ধরা কালো মাটির উইকেটে আগে ৪৯.৪ ওভার ব্যাট করে বাংলাদেশ সংগ্রহ করেছিল ২০৭ রান. জবাবে রিশাদ হোসেনের ( ৬/৩৫) দুর্দান্ত লেগ স্পিন জাদুতে বিপর্যস্ত হয়ে ক্যারিবিয়ানরা ৩৯ ওভারে ১৩৩ রানে গুটিয়ে যায়. বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুটি দলের জন্যই সিরিজটি গুরুত্বপূর্ণ। দুটি দলের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ ঘুরে দাঁড়িয়ে ২০২৭ বিশ্বকাপ সরাসরি খেলা নিশ্চিত করা. বাংলাদেশের কথা না হয় নাই বা বলি একসময়ের অপ্রতিদ্বন্দী ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখন বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার জন্য সংগ্রাম করতে হয়. আর বাংলাদেশ  নানা কারণে নানা ভাবতাদের স্বর্ণযুগের সেরা পাঁচ খেলোয়াড় বিদায় নেজায়ার পর সম্প্রতি ওডিআই ক্রিকেটে খাবি খাচ্ছে। সম্প্রতি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজ ধবল ধোলাইয়ের পর দেশে ফিরে ভক্ত সমর্থকদের রোষানলে পড়েছিল ক্রিকেট দল।

অনেক কথা হয়েছে মীরপুরে শের এ বাংলাদেশ স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে।  বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুল্বুল নিজেও কথা বলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার পিচ বিশেষজ্ঞ তিনি হেমিংসকে নিয়ে আসা  হয়েছে। কাল মীরপুর উইকেট থেকে খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে মনে হলো না. শুরু থেকে উইকেটে বাড়তি স্পিন ছিল, বল নিচু হয়ে আসছিলো। বাংলাদেশের ইনিংসের সূচনা ভালো হয়নি। ৮ রান তুলতেই সাজঘরে ফিরেছিল সাইফ হাসান আর সৌম্য সরকার। তবে কাল পরিচিত পরিবেশে নাজমুল শান্ত নিজেকে ফিরে পায়।  তৌহিদ হৃদয়কে সঙ্গী করে উইকেট এবং পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ধীরে সুস্থে ব্যাট করে তৃতীয় উইকেট জুটিতে মূল্যবান ৭১ রান যোগ করে. শান্ত ৩২ রানে আউট হলেও হৃদয় করে ৫১ রান. এই ম্যাচে নির্বাচকরা জাকের আলী এবং শামীম হোসেনকে বিশ্রাম দিয়ে মাহিদুল অঙ্কনকে সুযোগ দিয়েছে। আর নিজের অভিষেক ম্যাচেই দায়িত্বপূর্ণ ব্যাটিং করে ৪৬ রান করে প্রমান করেছে ওকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করা বিবেচনা প্রসূত ছিল না. শেষ দিকে রিশাদ দ্রুত ১৩ বলে ২৬ রান তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ২০৭  স্কোর গড়ে তুলতে অবদান রাখে।  ইনিংস বিরতির সময় ধারণা করা হয়েছিল ক্রমশ নিচু হয়ে আসা ঘূর্ণি উইকেটে ২০৮ টার্গেট তাড়া করা সহজ হবে না.

ভালোই সূচনা করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্রেন্ডন কিং (৪৪) আর আলিক অথ্যানেজ (২৭) প্রথম উইকেট জুটিতে যোগ করেছিল ৫১ রান. কিন্তু সহায়ক উইকেটে রিশাদ হোসেনের (৬/৩৫)  বিধ্বংসী লেগ স্পিন আর মুস্তাফিজের ঘাতক কাটার খেলতে হিমশিম খাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫১ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৯ ওভারেই ১৩৩ রানে গুটিয়ে যায়. ৭৪ রানের বিশাল ব্যাবধানে জয়ী হয়ে সিরিজে শুভ সূচনা করে বাংলাদেশ। জয়টি প্রত্যাশিত ছিল।  কিন্তু আমাদের উৎফুল্ল করে নি. কাল দলে ফিরে আসা সৌম্য বার্থ হয়েছে। শান্ত ,হৃদয় আর অঙ্কন ছাড়া অন্যরা ব্যাট হাতে অবদান রাখতে পারে নি. বুঝতে পারি বিসিবি শংকিত হয়ে স্পোর্টিং উইকেট বানাতে সাহসী হয়নি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুর্গম দুর্গ মিরপুরের ধীর, ঘূর্ণি উইকেটে অতিথি দলগুলোকে কোনঠাসা করে জয়ে সাময়িক তৃপ্তি থাকলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটের টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে নানা বলাই বাহুল্য।

তবুও বাংলাদেশকে অভিনন্দন জয়ের ধারায় ফিরে আসায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই ধরণের উইকেটে ওদের সংগ্রামরত দল নিয়ে ঘুরে দাড়াতে পারবে কিনা নিশ্চিত নই। সুযোগ বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 × 3 =