দেখছি বুয়েট নিয়ে অতি আগ্রহী হয়ে পড়েছে সরকার

সালেক সুফী

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ বুয়েট ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে সরকারী দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে দেশ জুড়ে এখন তুলকালাম। কেন কি উপলক্ষে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে সবার জানা। একজন সত্তর দশকে ছাত্র রাজনীতি করা গর্বিত বুয়েট আলমনি হিসাবে আমি বিচলিত উদ্বিগ্ন।  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে বুয়েট অন্য ৮-১০ প্রতিষ্ঠান থেকে ভিন্ন। দেশের সেরা মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা মুক্ত স্বাধীন মেধাভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যািলয়ে ভর্তি হয়। কঠিন ক্যাম্পাস জীবনে কঠোর নিয়ম মেনে পড়াশুনো করেই স্নাতক এবং স্নাতোকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করতে হয়। গড্ডালিকা প্রবাহে গা এলিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সবাই জানে দেশে বিদেশে বুয়েট স্নাতকদের কদর।

কয়েক বছর আগে বুয়েটের শেরেবাংলা আবাসিক হলে আবরার ফরহাদ নামের একজন ছাত্রকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল একটি ছাত্র সংগঠনের এক্টিভিস্টরা। বিচারাধীন সেই ঘটনার জের ধরে বেশ কয়েকজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে বিচারিক আদালত। ওই ঘটনার জের ধরে সাধারণ ছাত্র শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একটি সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের কিছু নেতা এবং সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী কোন তথ্যের ভিত্তিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসীর লালন করতে দেখলেন? সরকারের কোনো গোয়েন্দা সংস্থা কি রিপোর্ট দিয়েছে?

আমরা ১৯৭৩-৭৭ বুয়েট ক্যাম্পাসে পড়েছি। ছাত্রলীগার হিসাবে ছাত্র রাজনীতি করেছি। বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ, ছাত্রশিবির সহ সকল দলের শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থান দেখেছি।  এখন কিন্তু ছাত্র রাজনীতি পাল্টে গেছে। প্রবাস থেকে সাময়িক সময়ের জন্য দেশে ফিরে খবর পেয়ে আবরার হত্যার পরদিন বুয়েট ক্যাম্পাসে ছুটে গিয়েছিলাম। সেখানে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা ছাত্র রাজনীতির বীভৎস রূপ আমাদের বর্ণনা করেছিল।

বুয়েটে যারা পড়ার সুযোগ পায় তারা সবাই মেধাবী। তাই বঙ্গবন্ধু স্বয়ং বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র শিক্ষকদের রাজনীতিতে জড়ানোর পক্ষপাতী ছিলেন না। ঐতিহ্যগত ভাবে বুয়েট ক্যাম্পাসে কিছু ছাত্র তবলীগ জামাত করে। আমি নিশ্চিত নই সেখানে মৌলবাদিদের কোনো ঘাঁটি গড়ে উঠেছে  কি না। যদি তাই হয় সরকারের এতো গোয়েন্দা সংস্থা তাদের নজর এড়ানোর কোন কারণ নেই. আমি এই মুহূর্তে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি শুরু করার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ দেখি না। এমনিতেই পেশাদার প্রকৌশলীদের নেতৃত্বে মূলত বুয়েট আলমনিরা আছেন।  তাদের নেতৃত্বে পেশাদার হিসাবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে।  আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুয়েট ক্যাম্পাস অশান্ত হবে এমন কিছু করবেন না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

17 + 6 =