নন্দিত সাকিব নিন্দিত সাকিব

সালেক সুফী

বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে আলোকিত, সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বিশ্বমঞ্চে শীর্ষ চৌকষ ক্রিকেটার হিসাবে মর্যাদার আসনে আসীন এবং একই সঙ্গে মাঠের ভেতরে এবং বাইরে আচরণের কারণে বিতর্কিত, কলংকিত সাকিব আল হাসান ক্রিকেটের দীর্ঘতম এবং সংক্ষিপ্ততম আসর থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছে। ভারতের কানপুরে অনুষ্ঠানরত বাংলাদেশ ভারত চলতি টেস্ট বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে সাকিবের শেষ টেস্ট।

সাকিবের ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকায় স্মৃতিময় শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিতব্য টেস্ট ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র সাকিবের বিদায়ী আসর হওয়ার কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র জনতার আন্দোলন চলা কালে সাকিবের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা হয়েছে। সম্প্রতি শেয়ার মার্কেট কারসাজি নিয়ে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সাকিব বাংলাদেশে আসা, খেলা এবং বাংলাদেশ থেকে নিরাপদে বিদেশে যাওয়া বিষয়ে ঝামেলা মুক্ত থাকার নিশ্চয়তা চেয়েছে। বিসিবি বিষয়টি তাদের আওতার বাইরে বিবেচনা করে এই বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেছে। সরকার পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য  প্রদান করা হয় নাই. এমতবস্থায় কানপুর টেস্ট বাংলাদেশের হয়ে সাকিবের শেষ টেস্ট ম্যাচ হতে পারে। গত বিশ্ব টি২০ আসরে সাকিব এ ফর্মে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছে।

চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার থাকা অবস্থায় সাকিবের হঠাৎ করে রাজনীতিতে যোগদান এবং শাসক দলের হয়ে বিতর্কিত জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকেই বাংলাদেশে ওর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। তদুপরি ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় সাকিবের নীরবতা বৃহত্তর সাকিব ভক্ত সহ সাধারণ জনতাদের আহত করেছে।

জানি নানা কারণে মাঠের বাইরে সাকিবের নানা কর্মকানণ্ড বিভিন্ন সময়ে বিসিবিকেও বিব্রত করেছে। বেশ কয়েকবার শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে সাকিব সাময়িক বসিহকার সহ অর্থদণ্ড পেয়েছে বিসিবি এমনকি আইসিসি থেকেও। কিন্তু প্রতিবার দণ্ডের মেয়াদ শেষে পারফরম্যান্স দিয়ে দারুন ভাবে ফিরেছে সাকিব।

দেশের মাটিতে খেলা একটি সিরিজ চলা কালে তামিমের সবাইকে অবাক করা নাটকীয় অবসর ঘোষণা ঘিরে সাকিব-তামিমের ব্যাক্তিত্বের দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই নানা গুজব প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ডালপালা মেলতে থাকে। সাকিবের বেপরোয়া মনোভাব। নানা কারণে খেলা চলাকালে আসর ছেড়ে এসে বিজ্ঞাপনে অংশ গ্রহণ, কাউকে না মানার মতো উগ্রতা সত্ত্বেও দলে পারফরমেন্স দিয়ে একের ভেতর তিন হওয়ায় দলে স্থান নির্ধারিত থাকে।

কিন্তু সম্প্রতি মাঠের বাইরের নানা ঘটনার প্রভাবে সাকিব সাকিবময় করতে পারছে না কোনো ক্রিকেট আসর। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সকল ক্ষেত্রেই পতনের আওয়াজ অনুভব করা যাচ্ছে। হয়তো ক্রিকেট থেকেই মনসংযোগ হারিয়ে ফেলেছে। তাই মনে হয় নিজে থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাকিব।

দুনিয়ায় কেউ চিরদিন কোনো কিছুর জন্য অপরিহার্য থাকে না। সবাইকেই একসময় সরে যেতে হয়। ক্রিকেটেও অনেক রথী মহারথী ফর্মের শীর্ষে থাকা অবস্থায় অবসর গ্রহণ করেছে। সাকিব ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে সেটি কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। নিজ দলের পাশাপাশি বিশ্বের সকল দেশের ফ্রাঞ্চাইজি আসরে খেলে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেকে এবং বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছে।

সর্বকালের শ্রেষ্ট চৌকষ ক্রিকেটার হিসেবে সাকিবের নাম স্যার গারফিল্ড সোবার্স, জ্যাক কালিস, স্যার ইয়ান বোথাম, ইমরান খান, কপিল দেব, স্যার রিচার্ড হ্যাডলির কুলিন ক্লাবে আলোচিত হতে থাকবে। বেশ কিছু রেকর্ড দীঘ দিন অম্লান থাকবে। এহেন সাকিব হয়ত আরো দুই বছর খেলতে পারতো। কিন্তু বর্তমান পরিবেশ এবং পরিস্থিতি সাকিবের অনুকূলে নেই বলাই বাহুল্য।

আইন সবার জন্য সমান এবং নিজস্ব গতিতে চলে। আমি নিজেও মাঠের বাইরে সাকিবের আচরণের কঠোর সমালোচনা করেছি। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ক্রিকেট মাঠে খেলোয়াড় হিসেবে অবদানের জন্য সাকিবকে মীরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্ট খেলে ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ দেয়া উচিত।

আর সাকিবের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগটিও রাজনৈতিক মামলা।  সাকিব এখনো প্রমাণিত দোষী বলে বিবেচিত হননি। একজন চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার কোনো মামলায় দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত বিসিবির উচিত তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

ten − 4 =