নবাব পরিবারের রাজকন্যা সারা আলী খান

নীলাঞ্জনা নীলা

এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সারা আলী খান যাকে নিয়ে চলছে বলিউড পাড়া থেকে সোশ্যাল মিডিয়াসহ সব জায়গায় আলোচনা। ১৯৯৫ সালে ১২ আগস্ট সাইফ আলি খান ও অমৃতা সিংয়ের কোল জুড়ে পাতৌদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সারা আলি খান।

জন্ম থেকেই পরিবারে দেখছেন অভিনয়ের চর্চা। মাত্র ৪ বছর বয়সে বিজ্ঞাপনে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন সারা আলি খান। ২০১৮ সালে সিনেমাতে পা রাখেন ‘কেদারনাথ’ সিনেমার মাধ্যমে। তবে এই সিনেমায় সারা আলি খান যে অভিনয়ে খুব দক্ষ হয়ে উঠেননি তা দর্শকের চোখে পড়েছে। একই বছর অভিনয় করেন ‘সিম্বা’ সিনেমাতে। এরপরে ২০২০ সালে ‘লাভ আজকাল’ ও ‘কুলি নাম্বার ওয়ান’ করেন। তবে ২০২৩ সালে তার সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা ‘জারা হটকে, জারা বাচকে’ রিলিজ হয়। এই সিনেমায় প্রথমবারের মতো তিনি জুটে বাঁধেন ভিকি কৌশলের সাথে। শোনা গেছে সিনেমাটি প্রথম সপ্তাহেই প্রায় ২২ কোটি টাকার ব্যবসা করে। এই ছবির সবচেয়ে হিট গান ‘তেরে ভাস্তে’, যা এখন সবার মুখে মুখে।

গানের দৃশ্যে দর্শক দেখতে পেয়েছেন নতুন বাড়ি হওয়ার খুশিতে মেতেছেন তারা। সিনেমার গল্প সবাই পছন্দ করেছেন। কলেজ জীবনে চুটিয়ে প্রেম করছেন  কপিল ও সৌম্যা। প্রেমের পর তারা বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধও হন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর তাদের প্রেম ফিকে হয়ে যেতে থাকে। এরপর তারা বিচ্ছেদের পথ বেছে নেন। কিন্তু তাদের আশেপাশের সবার কৌতূহল থাকে কেন তারা আলাদা হতে চাচ্ছেন। সম্পর্কের টানাপড়েন ও নানা দিক নিয়ে গল্প এগিয়েছে। এই সিনেমার প্রচারের জন্য সারা আলি খানকে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।

কলকাতায় প্রচার করতে গিয়ে ফুচকাসহ বাঙালি সব খাবারের প্রেমে পড়েন তিনি। বিশেষ করে ফুচকা খেতে খেতে ক্যামেরার সামনে পোজ দিতেও দেখা যায় তাকে। বাদ দেন না মিষ্টি খেতেও, ডায়েট ভুলে সকল খাবার উপভোগ করেন তিনি। সকলের ধারনা, এই ছবি প্রমাণ করেছে যে ভালো সিনেমা বানানো হলে অবশ্যই দর্শক তা সাদরে গ্রহণ করবে। ভালো সিনেমার অভাবেই দর্শক হলে যাওয়া বন্ধ করছে। তবে ভালো সিনেমা ও অভিনয় তাদের আবার হলমুখি করছে।

ক্যারিয়ার ও অভিনয় ছাড়াও সারা আলি খানকে নিয়ে সবসময়ই চলেছে আলোচনা ও সমালোচনা। তার ব্যক্তিজীবন নিয়ে ভক্তদের আগ্রহের শেষ নেই। ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন বাবা-মায়ের সম্পর্কের উত্থান-পতন। সাইফ আলি খান ও অমৃতা সিং ১৯৯১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বয়সে অমৃতা সাইফের থেকে প্রায় ১৩ বছরের বড়। পরিবারের সবার অমতেই তাদের বিয়েটা হয়। সে বছর তাদের বিয়ে বেশ সাড়া জাগানো বিয়ে ছিল। বিয়ের পর ১২ বছর সংসারও করেন তারা। বেশ সুখেই দিন যাচ্ছিল বলে মনে হতো বাইরে থেকে। কিন্তু ২০০৪ সালে হঠাৎ তাদের বিচ্ছেদের গুঞ্জন শোনা যায় এবং অবশেষে বিচ্ছেদও হয়ে যায়। হঠাৎ বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে সবার আগ্রহের শেষ ছিল না। কিন্তু সে বিষয়ে তারা কখনো কিছু বলেননি।

তবে কিছুদিন আগে সাইফ সংবাদমাধ্যমে তাদের বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে বলেন, বিয়ের পর অমৃতা প্রায়ই তাকে বলতেন সাইফ নাকি তার যোগ্য না। এভাবেই সমস্যার শুরু হয়। সাইফ বলেন, অমৃতা নাকি তার পরিবারকেও অপমান করতো। এছাড়া আরো কিছু ব্যক্তিগত কারণ ছিল। পরে তারা দুজন মিলেই আলাদা হবার সিদ্ধান্ত নেন। আলাদা হওয়ার পরে অমৃতা সাইফের সাথে বাচ্চাদের দেখা করতে দিতেন না বলে অভিযোগ করেন সাইফ। পরবর্তীতে ২০১২ সালে অভিনেত্রী কারিনা কাপুরকে বিয়ে করেন সাইফ আলি খান। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায়, মেয়ে সারা আলি খানের সাথে সাইফ ও তার পরিবারের বেশ সুসম্পর্ক রয়েছে। যেকোনো পারিবারিক আয়োজনে সাইফ ও কারিনার সাথে একই ছবির ফ্রেমে থাকেন সারা আলি খান।

বাবা-মায়ের পর এখন সারা আলিকে নিয়েও কিন্তু চলে অনেক আলোচনা। কবে বিয়ে করছেন, কার সাথে চলছে প্রেম ইত্যাদি নানা ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই তাকে করা হয়। জানা গেছে, প্রয়াত অভিনেতা সুশান্তের সাথে ছিল সারার প্রেমের সম্পর্ক। কেদারনাথ সিনেমাতে তারা একসাথে জুটি বেঁধে কাজ করেন। ধারণা করা হয়, তখন থেকেই তাদের প্রেমের শুরু। এই বিষয়ে সুশান্তের বন্ধু হাওকিপ স্যামুয়েল ইনস্টাগ্রামে লিখেছিলেন যে সুশান্ত ও সারা কেদারনাথ সিনেমার পর থেকে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। তারা একে অপরকে যথেষ্ট সম্মান করতেন। যা আজকাল চোখে পড়ে না। এরপর কেকেআরের প্রাক্তন ক্রিকেটার শুভমন গিলের সাথেও সারা প্রেম করেছেন বলেও কথা রটেছে। মুম্বাইয়ের একটি নামী রেস্তোরাঁয় দু’জনকে ডিনার করতে দেখা যায়। সেই ডিনারের ছবি কিছুক্ষণের মধ্যে নেটে ভাইরাল হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় তাদের প্রেমের গুঞ্জন।

সারার প্রেমের জীবন নিয়ে রয়েছে অনেক সমালোচনা। অনেকে বলে থাকেন, মাস বদলে গেলে সারা বয়ফ্রেন্ডও বদলে ফেলেন। তবে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সারা নিজের বিয়ে নিয়ে বলেন, তিনি বিয়ে নিয়ে আগ্রহী তবে তার এখনও বিয়ের সঠিক সময় হয়নি। সারা আরো বলেন, আমি একজন অন্ধ পাগলকে খুঁজছি যে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে। বিয়ে খুব ভারী একটি বিষয়। তাই আমি অপেক্ষা করছি ভালো মনের অধিকারী এমন কারো জন্য। মজার ছলে বলেন, খুব বুদ্ধিমান ছেলেকে বিয়ে করতে চাই না। তাহলে বিয়ের দুদিনের মধ্যেই আমাকে চিনে ফেলবে ও আমাকে রেখে পালিয়ে যাবে।

নবাব পরিবারে জন্ম সারা আলি খানের। অনেকে তো তাকে রাজকন্যাও বলেন। তবে রাজকন্যা হলেও তার চলাফেরা নাকি সাধারণ পরিবারের মেয়েদের মতো। এই কথা গণমাধ্যমে সারা নিজেই বলেছেন যে তিনি যথেষ্ট কিপটে, খরচ করার আগে অনেকবার ভাবেন তিনি। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে সারা আলি খান ও ভিকি কৌশল কথা বলেন।  ভিকি বলেন, ‘শ্যুটের সময় একদিন দেখি সারা তার মায়ের সাথে তুমুল তর্ক করছে। আমি ভাবলাম, পারিবারিক ব্যাপারে হয়তো কথা কাটাকাটি হচ্ছে। আমি আর তাদের সামনে যাইনি। পরে জিজ্ঞেস করি, কি হয়েছিল, সব ঠিক আছে? সারা বলেন, কিছু ঠিক নেই। মা ১৬০০ টাকা দিয়ে একটা তোয়ালে কিনেছে। এতো বাড়তি দাম দিয়ে তোয়ালে কেনার কি আছে?’ ভিকি খুব অবাক হয়েছিলেন সারার কথা শুনে। সারা আলী খান বলেন, তিনি নিজেকে কখনো সেলেব্রেটি কিংবা নবাব পরিবারের কন্যা ভাবেন না। তিনি অকপটে রিকশায় উঠেন, দোকানে কিছু কেনার সময় দামাদামি করেন ও বাড়ির কাঁচাবাজার করতেও বের হয়ে পড়েন। এসবের মধ্যে কোনো লজ্জা নেই বলে মনে করেন সারা আলী খান। অসাধারণ হয়েও এই সাধারণ হয়ে থাকার ব্যাপারটা তার ভক্তদের মুগ্ধ করে। সারার ব্যবহার, ভদ্রতা ও মানুষের প্রতি সম্মান দেখে অনেকেই তার  প্রশংসা করেন।

ক্যারিয়ার, প্রেম, বিয়ে, পরিবার সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে সারা আলি খান বেশ কিছুদিন শিরোনামে ছিলেন তার ওজন কমানো নিয়ে। অভিনয়ে আসার আগে তার ওজন ছিল ৯৬ কেজি। তার বর্তমান ওজন ৫০ কেজি। মানে ৪৬ কেজি ওজন কমিয়েছেন তিনি। যা খুব সহজ ব্যাপার না। তার ওজন কমাতে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ বর্ষে থাকা অবস্থায় তার ওজন কমানোর জার্নি শুরু হয়। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, যে করে হোক তার ফিট হতেই হবে। সারা আলী খান পলিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত। যার ফলে তার ওজন কমাতে অন্য যে কারো থেকে বেশি সময় লেগেছে। হরমোনের উঠানামা থাকার কারণে তার মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। নিয়ম অনুযায়ী না চললেই তার ওজন বেড়ে যায়। তিনি একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ওজন কমানো শুরু করেন। কিছুটা ওজন কমানোর পর তিনি জিমে যান।

সারা জানান, ওজন কমানোর পথটা তার জন্য খুব কঠিন ছিল। কারণ তিনি প্রচুর খেতে ভালোবাসেন। সবকিছু বাদ দেওয়া খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। তিনি তার ডায়েটে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখতেন। কার্বোহাইড্রেট বাদ দিয়েছিলেন। এখনো তিনি ওজন ধরে রাখার জন্য নিয়ম করে খাবার খান। কারণ সচেতন না থাকলে খুব দ্রুত তার ওজন বেড়ে যায়। তিনি প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা ব্যায়াম করতেন, তবে টানা ৪ ঘণ্টা নয়। দুইবেলা ২ ঘণ্টা করে ব্যায়াম করতেন। অনেক সাধনার পর ওজন কমিয়ে হয়ে উঠেন তিনি সবার ফিটনেস আইকন। সারা আলী খান বলেন, ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে শুরু করতে হবে। ওজন কমাতে চাইলে তাড়াহুড়ো করা যাবে না, প্রচুর ধৈর্য রাখতে হবে। তবেই ভালো ফল আশা করা যাবে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: সেলিব্রেটি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

7 + 4 =