‘নাটক নির্মাণে পর্যাপ্ত বাজেট, ভাল গল্প, চিত্রনাট্য নির্বাচন ও প্রচারের নীতিমালা থাকা উচিৎ’

নির্মাতা মোরশেদ হিমাদ্রী হিমুর পরিচালনায় নির্মিত শর্টফিল্ম ‘একটি খুনের বিবরণ’ ‘ষষ্ঠ পামে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে’ শর্টফিল্ম সেকশনে অফিশিয়াল নির্বাচিত হয়েছে। নেপালের পোখরা শহরে আগামী ২৭-৩১ ডিসেম্বর এ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে হিমু নিয়মিত নাটক ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। চট্টগ্রামের এ নির্মাতা ঢাকা ভিত্তিক নাটক নির্মাণ করলেও বর্তমানে নিজ জেলার দিকে নজর দিতে চান। নাটক ও চলচ্চিত্র নিয়ে ভবিষ্যৎ পকিল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সাথে।

প্রশ্ন: স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘একটি খুনের বিবরণ’ আন্তর্জাতিক উৎসবের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। আপনার অনুভূতি কি?

মোরশেদ হিমাদ্রী হিমু: স্বাভাবিকভাবেই খুব ভাল লাগছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করা তো গর্বের বিষয়।

প্রশ্ন: ‘একটি খুনের বিবরণ’ এর বিশেষত্ব কি?

মোরশেদ হিমাদ্রী হিমু: প্রথম বিশেষত্ব হচ্ছে- ভাল লাগা। একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে গল্পের প্রতি ভাল লাগা নির্মাণের প্রথম শর্ত বলে আমার মনে হয়। কথা সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরীর ছোট গল্প ‘একটি খুনের বিবরণ’ মূলত একটি প্রেমের গল্প। এ গল্পের প্রাসঙ্গকিতা, গভীরতা ও অন্তর্নিহিততা একেবারেই গতানুগতিকতার বাইরে এবং আমি বরাবরই গতানুগতিকতার বাইরের গল্পে কাজ করতে পছন্দ করি। দ্বিতীয় বিশেষত্ব হচ্ছে- এর নির্মাণশৈলী। সম্পূর্ণ চলচ্চিত্রটির অভিনেতা, অভিনেত্রী, কলাকুশলী নির্বাচনসহ বেশীরভাগ কাজ অর্থাৎ প্রিপ্রোডাকশ থেকে পোস্ট প্রোডাকশন সম্পূূর্ণভাবে চট্টগ্রামেই করা হয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষন, সাবরিন আজাদ, প্রয়াত শাহিনুর সরোয়ার, রফিউল কাদের রুবেল, সুনীল ধর, বিটু ভৌমিকসহ আরো অনেকে। একটা সময় ছিল যখন চলচ্চিত্রের সাউন্ড ডিজাইন ও ডাবিংয়ের জন্য ঢাকার অত্যাধুনিক স্টুডিওর সরনাপন্য হতে হত। কিন্তু বর্তমানে চট্টগ্রামেও এর যথাযথ সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রামের কেএস ডিজিটাল স্টুডিওতে এ চলচ্চিত্রটির ডাবিং ও সাউন্ড ডিজাইনের কাজ করা হয়েছে। সর্বোপরী স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ না হলেও ভাল কিছু সুযোগ-সুবিধা চট্টগ্রামে গড়ে উঠছে।

প্রশ্ন: চট্টগ্রামের অভিনয়শিল্পীদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?

মোরশেদ হিমাদ্রী হিমু: দেখুন, নাটক বা চলচ্চিত্রে গল্পের চরিত্র অনুযায়ী অভিনয়শিল্পীদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে একজন নির্মাতার পাশাপাশি প্রকল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গির সকলকে অভিনেতাদের উপযুক্ততা মূল্যায়ন করতে হবে- সেটাই স্বাভাবিক। সে দিক থেকে চট্টগ্রামের অভিনয়শিল্পীরা অনেকাংশে এগিয়ে আছেন বলে আমি মনে করি। চট্টগ্রামে গ্রুপ থিয়েটার চর্চার ৫০ বছরে পদার্পণই প্রমান রাখে- চট্টগ্রামের অভিনয়শিল্পীদের কাজের ধারাবাহিকতার। এসএম সোলায়মান, সদরুল পাশাসহ চট্টগ্রামের তুখোড় অভিনেতারা সেই ৮০/৯০ এর দশকেই মঞ্চ আর বিটিভি পর্দা কাঁপিয়েছেন তাাদের অভিনয়ের আর নির্মাণের মাধ্যমে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ পর্যন্ত চট্টগ্রামের অভিনয়শিল্পীরা মঞ্চ, টিভি নাটক আর চলচ্চিত্রে তাদের অভিনয়ের সক্ষমতা আর যোগ্যতার প্রমাণ করে আসছেন নানা পর্যায়ে। আমাদের দেশে বর্তমানে টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে কাজের পরিমাণ আগের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রামসহ দেশের নানা অঞ্চলের অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের কাজের সুযোগও তৈরি হয়েছে অনেক এবং টেলিভিশন থেকে ওটিটি প্লাটফর্ম সব জায়গায় আমাদের চট্টগ্রামের অভিনয়শিল্পরা যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।

প্রশ্ন: বর্তমানে আর কি কাজ করছেন?

মোরশেদ হিমাদ্রী হিমু: নতুন চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করছি। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পরিকল্পনা রয়েছে। সম্প্রতি শেষ করেছি নাজমুস সাকিবের গল্প ও জোনায়েদ রশিদের চিত্রনাট্যে থ্রিলার ধর্মীটিভি নাটক ‘দ্য ডে অব মেরিজ এ্যানিভার্সারি।’ খুব শিগরিই বেসরকারী একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারের অপেক্ষায় আছে নাটকটি। প্রযোজনা করেছেন সুমন শাহেদ সিদ্দিকী। অভিনয়ে ছিলেন মনোজ প্রামাণিক, নাসিরুদ্দিন খান, নাজিবা বাশার, রফিউল কাদের রুবেল ও অন্যান্য।

প্রশ্ন: নির্মাতা হিসেবে আপনার শুরুটা কিভাবে হয়েছিল?

মোরশেদ হিমাদ্রী হিমু: ১৯৯৫ সালে এইচএসসি পাশ করার পর প্রতিভাস নাট্যদলের সাথে মঞ্চে কাজের সুযোগ তৈরি হয়। অভিনয় করেছি কিনুকাহারের থেটার, কোর্ট মার্শাল, জায়া প্রজায়িনী, চাঁদ বনিকের পালা, চোপ আদালত চলছে নাটকে। তবে অভিনয়ের চাইতে মঞ্চের পেছনের কাজ যেমন লাইট ডিজাইন, সেট নির্মাণ, প্রোডাকশন ইত্যাদির প্রতি আগ্রহটা ছিল বেশী। পাশাপাশি ফটোগ্রাফি করতাম শখের বসে। এক সময় মঞ্চের অভিনয় আর আলো ছায়ায়ই হয়ে উঠে আমার ফটোগ্রাফির সাবজেক্ট। মঞ্চ নাটকের আলোকচিত্র নিয়ে আমার একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী হয় দুইটি- ‘পয়েজি অব প্লে’ ও ‘আলোছায়ায় বাংলাদেশের নাটক’। এখনো মঞ্চ নাটকের ছবি তুলে যাচ্ছি। স্থিরচিত্র নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এক সময় চলচ্চিত্রের সখ পেয়ে বসে আমাকে। ২০০৮ এর দিকে বন্ধু ও চলচ্চিত্র নির্মাতা রফিকুল আনোয়ার রাসেলের অনুপ্রেরনায় চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হই ও ২০১৩তে ‘স্বপ্নের শিখরে হলুদ কোলাজ’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে আমার যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী ২০১৪-তে টিভি নাটক নির্মানের কাজ শুরু করি। এনটিভি, আরটিভি, মাছরাঙাতে এখনো পর্যন্তু প্রচারিত উল্লেখযোগ্য নাটাকের মধ্যে আছে আবর্তন, শুভ্র ও জোছনার গল্প, তোমার চিবুক ছোঁব কালিমা ছোঁবনা, মিথিলা, শীলার গল্প, চোর, তবুও ভোর হয়, ছায়া শিকারী, পরী ইত্যাদি। এ পর্যন্ত নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সংখ্যা পাঁচটি- স্বপ্নের শিখরে হলুদ কোলাজ, তাড়া, গুম, বাইশ বছর পরে ও একটি খুনের বিবরণ।

প্রশ্ন: নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে কি কি সীমাবদ্ধতার মুখোমুখী হয়েছেন? দর্শক টিভি নাটকে আগ্রহ হারাচ্ছে- এ বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন?

মোরশেদ হিমাদ্রী হিমু: যে কোন কাজেই কম-বেশী সীমাবদ্ধতা থাকে। তবে, আমার মনে হয়, টিভি নাটকে সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হল বাজেট। বাজেট কম থাকায় একটা ভাল গল্পকে ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে শিল্পী নির্বাচন, নির্মাণের সময়, টেকনোলজিসহ নির্মাণের প্রতিটা স্তরেই নির্মাতাকে অনেক বেশী কম্প্রোমাইজ করতে হয়। ফলে মানসম্মত নাটক তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ে। সীমাবদ্ধতার আরেক দিক বললে বলতে হয়, ভাল চিত্রনাট্যের অভাব। নাটক বা চলচ্চিত্রের মূল বিষয় হল- চিত্রনাট্যের মাধ্যমে গল্পটা দর্শককে উপস্থাপন যেখান থেকে দর্শক তার বাস্তবজীবনের মিল খুঁজে পাবে। ভাল চিত্রনাট্যের অভাবে ভাল গল্প বলা হয়ে উঠছে না। ফলে গল্পের মূল বিষয়বস্তু থেকে সরে এসে এর চাকচিক্যই প্রাধান্য পাচ্ছে বেশী। ইদানিং অসৎ এক শ্রেণির প্লাটফর্ম সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সস্তা জনপ্রিয়তা, চাকচিক্যের লোভে নাটক বা চলচ্চিত্রকে তাদের অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে পরিণত করায় নানা রকম রুচিহীন কন্টেন্ট তৈরি করছে; যা পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ফলে রুচিশীল দর্শকরা নাটক দেখায় আগ্রহ হারাচ্ছেন এতে করে আমরা আমাদের নিজস্ব শিল্প, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের গল্পও হারাতে বসেছি। তবে ভাল দিক হল- বর্তমানে বিশ্বায়নের এ যুগে আমাদের দর্শকরা এখন নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, ইউটিউবসহ নানা প্লাটফর্মে পৃথিবী বিখ্যাত নাটক, চলচ্চিত্র দেখে অভ্যস্থ হচ্ছেন ও তাদের রুচিরও পরিবর্তন হচ্ছে। ভাল কন্টেন্টের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ছে। এ বিষয়টি চিন্তায় রেখে আমাদের নিজেদের সচেতনতার পাশাপাশি টিভি চ্যানেলগুলোরও নাটক নির্মাণে পর্যাপ্ত বাজেট নির্ধারণ, ভাল গল্প ও চিত্রনাট্য নির্বাচন ও প্রচারের ক্ষেত্রে নীতিমালা নির্ধারণের পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ; যা নির্মাতা বা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভুমিকা রাখবে। আমার জানা মতে, অনেক বেসরকারী টিভি চ্যানেল ইতিমধ্যে পদক্ষেপও নিয়েছে। পাশাপাশি আমাদের দেশের ওটিটি প্লাটফর্মগুলোও এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভুমিকা রাখছে। ওটিটির অনেক নাটক, চলচ্চিত্র বর্তমানে দর্শক হৃদয় জয় করছে। এর পেছনে ভাল বাজেটের পাশাপাশি ভাল নির্মাণশৈলীও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ফলে আমাদেও দেশের অনেক ভাল নাটক, চলচ্চিত্র, ওয়েব সিরিজ বিদেশে প্রশংসা পাচ্ছে। এটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইতিবাচক দিক।

প্রশ্ন: চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ইতিহাস ও গল্প এবং অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে আপনার কোন পরিকল্পনা আছে কি?

মোরশেদ হিমাদ্রী হিমু: বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে নাটক বা চলচ্চিত্রে আমরা শুধুমাত্র চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাষা বা চটুল বিষয়কে হালকাভাবে উপস্থাপন করে বিনোদন পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের সমস্যা, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির নানা ঘটনা বা গল্পগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছি না। অথচ, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোসহ পৃথিবীর অনেক দেশ নাটক, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাদের নানা সমস্যাসহ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সমাজ সংস্কৃতির গল্প বলে চলেছেন। এতে করে ঐ জাতি বা গোষ্ঠি সম্পর্কে আমরা পরিচত হতে পারছি। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায়, ভারতের নির্মাতা কেতন মেহতা’র ‘মাঝি – দ্য মাউন্টেন ম্যান’ চলচ্চিত্রটির কথা। এটি ২০১৫ সালের ভারতীয় হিন্দি-ভাষার জীবনীমূলক একটি চলচ্চিত্র; যা দশরথ মাঝির জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। দশরথ মাঝি, যিনি ‘মাউন্টেন ম্যান’ নামে পরিচিত। তিনি ভারতের বিহারের গয়ার কাছে গেহলাউর গ্রামের একজন দরিদ্র শ্রমিক ছিলেন, যিনি সুদীর্ঘ ২২ বছর ধরে একাই সাত দশমিক ছয় মিটার পাথরের পাহাড় খোদাই করে তার মধ্য দিয়ে এক দশমিক এক মিটার (৩০ ফুট) চওড়া ও ১১০ মিটার (৩৬০ ফুট) দীর্ঘ একটি পথ তৈরি করেছিলেন শুধুমাত্র একটি হাতুড়ি ও ছেনি ব্যবহার করে। মুক্তির পর ছবিটি ইতিবাচক প্রশংসা পায়। এটা ভারতের একটি অঞ্চলের একজন সংগ্রামী মানুষের বিজয়ের গল্প। যেখানে হাসি, কান্না, বিনোদন সবই আছে। এখানে গল্পটির বিষয়বস্তুকে শুধুমাত্র আঞ্চলিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ঐ অঞ্চল, জাতি বা গোষ্ঠিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যে কোন বিষয়কে গতানুগতিক বা তার নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে বৃহত্তর পর্যায়ে দেখা এবং এর ইতিবাচক দিক তুলে ধরার যে কনসেপ্ট আমার মনে হয়, এ চিন্তা চেতনা থেকে আমরা অনেক দুরে অবস্থান করছি। এর থেকে বেরিয়ে আসা জরুরী। হাজার বছরের ইতিহাস চট্টগ্রামের। আঞ্চলিতকতা শুধুমাত্র তো ভাষা দিয়ে নির্ণয় করা হয় না। ভাষার পাশাপাশি এর প্রতিটি স্তরেই রয়েছে নানা জনপদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির গল্প। আমি মনে করি, নাটক বা চলচ্চিত্র যেহেতু দেশ, জাতি বা গোষ্টির আত্মপরিচয়ের একটা শক্তিশালী মাধ্যম, তাই এর মাধ্যমে আঞ্চলিকতার শুধুমাত্র হালকা, চটুলতাকে প্রাধান্য না দিয়ে জনপদের নানা গল্প উঠে আশা দরকার। আমি আমার নির্মাণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের অভিনয়শিল্পীদের সাথে নিয়ে এখানকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গল্প বলার চেষ্টা করছি এবং এ চেষ্টা সব সময়ই অব্যহত থাকবে- আশা রাখছি।

প্রশ্ন: চট্টগ্রামে টিভি নাটকের ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে?

মোরশেদ হিমাদ্রী হিমু: যে কোন সেক্টরেই পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ না থাকলে এর ভবিষ্যৎ ভার হতে পারে না। শুধুমাত্র একটি আঞ্চলিক টিভি স্টেশনকে কেন্দ্র করে টিভি নাটকের ভবিষ্যৎ চিন্তা করাটা ভুল। যে জায়গায় যত প্রতিযোগীতা, সেখানে কাজের মান ততই উন্নত- এটাই স্বাভাবিক। নাটক ও চলচ্চিত্রসহ পুরো মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি যেহেতু রাজধানী কেন্দ্রিক, তাই স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার অভিনয়শিল্পীসহ কলাকুশলীদের অগ্রাধিকার থাকে এবং তারা সহজেই এ ইন্ডাস্ট্রিকেই তাদের পেশাগত প্লাটফর্ম হিসেবে বেছে নিতে পারছেন। চট্টগ্রামে এখনো কোন মিডিয়া ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে উঠে নি; ফলে এখানে কাজের ক্ষেত্র নেই বল্লেই চলে। তাই চট্টগ্রামের শিল্পীদের যথেষ্ট যোগ্যতা ও সক্ষমতা থাকা সত্বেও পেশাগত দিক থেকে মিডিয়া ইন্ডাষ্ট্রিতে ঢাকার শিল্পীদের তুলনায় পিছিয়ে আছেন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, শুধু নাটক বা চলচ্চিত্র ছাড়াও শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমেও যে সব শিল্পী ও কলাকুশলীরা আজকে জাতীয় পর্যায়ে কাজ করছেন; তাদের অনেকেই চট্টগ্রামের ও তারা পেশাগত খাতিরে অনেক আগেই ঢাকায় থিতু হয়েছেন এবং যোগ্যতার সাথেই কাজ করে যাচ্ছেন। চট্টগ্রামের একজন ছাত্র সরকারী বা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করে যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও পেশাগত কারণে তাকে ঢাকামুখীই হতে হচ্ছে। তাই, এ ক্ষেত্রে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মত চট্টগ্রামে মানসম্মত মিডিয়া নির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠা জরুরী। তবেই এর ভাল ভবিষ্যৎ আশা করা যায়।

প্রশ্ন: চট্টগ্রামে টিভি নাটকে অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহীদের জন্য আপনার বক্তব্য বা পরামর্শ কি?

মোরশেদ হিমাদ্রী হিমু: এটা এমন একটা যায়গা- যেখানে শর্টকাট বলে কোন রাস্তা নাই। এখানে সস্তা গ্ল্যামার, সস্তা জনপ্রিয়তা আর অর্থে লোভ পরিহার করে একাগ্রতা আর উৎসর্গতার মনোভাব নিয়ে ক্রমাগত নিজের যোগ্যতা আর সক্ষমতা প্রমাণ করে চলতে হবে। এটাই একমাত্র সাফল্য আনতে পারে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three + 8 =