নানান রঙের, চোখ জুড়ানো নিরাপদ খাদ্য ও যুব সমাজ

মো. আওলাদ হোসেন

মানবজাতির জীবনচক্র পর্যায়ক্রমিক কয়েকটি ধাপ, যা একজন ব্যক্তির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়কালকে বোঝানো হয়। ধাপগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রসবপূর্ব বিকাশ, শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন, বার্ধক্য অতিক্রম পরবর্তী মৃত্যুর মাধ্যমে সমাপ্তি। বাবা-মা এর সহযোগিতা এবং আত্মনির্ভরশীলতা ইত্যাদির মধ্যেই ব্যক্তিকে প্রতিটি ধাপ চ্যালেঞ্জের সাথে পার করতে হয়। জীবনচক্র মূলত জীবনের সময়কাল বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি, কারো জীবনচক্র কয়েক ঘন্টা, কয়েক মাস, কয়েক বছর হয় এবং জীবনচক্র শেষ না করেই মৃত্যুবরণ করে। আবার অনেকের শত বছরও পার হয়। দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৪ বছর, সূত্র: ১৩ জুন ২০২৩, ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২২’বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। একজন ব্যক্তি স্বাভাবিক ও সুস্থভাবে জীবনযাপন করা খুবই কঠিন কিন্তু যদি সচেতনতার সাথে জীবনযাপন করে থাকে তাহলে সহজ। এই জন্য প্রয়োজন নিরাপদ খাবার। জীবনচক্রের প্রতিটি ধাপে, পরিবার থেকে শুরু করে সকল স্থানে নিরাপদ খাবারের কোন বিকল্প নেই।

নানান রঙের, চোখ জুড়ানো খাবার দেখলেই আমাদের জিহ্বায় পানি আসে। এগুলো আমাদের স্বাস্থের জন্য নিরাপদ কিনা তা জানার চেষ্টা করি না! খাওয়ার পর দেখা যায় ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ি। ছুটে যেতে হয় ডাক্তারের কাছে এবং জীবনে শুরু হয় নতুন নিয়ম, নিয়মিত খাবার খাবেন সাথে ঔষধ খাবেন।

ব্যবসায়িক মূল্যবোধ ধর্মীয় অনুভূতির সাথে নমনীয়তা বলতে কি বুঝায় তা হয়ত অনেকে জেনেও মানার চেষ্টা করছে না! খাদ্যের নিরাপদতা বিষয়ে পবিত্র রমজান মাসের চিত্র, পূজার সময়ের চিত্র দেখে হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

সরকারের দিক থেকে কার্যকর উদ্যোগের কোন কমতি নেই। নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩-এর অধীনে এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) খাদ্যের বিশুদ্ধতা পরিবীক্ষণ ও বিচারিক কার্যক্রম, নিরাপদ খাদ্য প্রমিতকরণ ও প্রত্যয়ন প্রদান, খাদ্য ভোক্তা সচেতনতা, ঝুঁকি ও নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ খাদ্য গবেষণা ও উন্নয়ন, মনিটরিং সহ সার্বিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয় এবং অব্যাহত রয়েছে। দেশের খাদ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে একইসাথে খাদ্যের মান যাতে করে আন্তর্জাতিক মান দণ্ডের সাথে মিল থাকে এই লক্ষ্যে, আন্তর্জাতিক সংস্থা, দেশী-বিদেশী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে বিএফএসএ এর বিভিন্ন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। ভোক্তা, জনগণ, উৎপাদক, ব্যবসায়ী, সরবরাহকারী অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট সবাই যদি সচেতন না থাকে তাহলে সরকারের সকল উদ্যোগ ও চেষ্টার সফলতা অর্জন সহজ হবে না।

আমি, আপনি, আমরা সকলে কি নিরাপদ খাবার গ্রহণ করতে পারি? নিরাপদ খাবার গ্রহণের সুযোগ পাই? নিরাপদ খাদ্য উপকরণ কি সহজে পাওয়া যায়? উৎপাদক, ব্যবসায়ী, সরবরাহকারী সহ সংশ্লিষ্ট সবাই কি নিয়ম মেনে, সচেতনতার সাথে তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন? ভোক্তা হিসেবে প্রতিকার পাওয়ার কোন সুযোগ আছে? এমন অনেক প্রশ্ন! কিন্তু একবারও কি ভেবেছি খাদ্যের নিরাপদতার জন্য কারা বেশি ভূমিকা রাখতে পারে! অনেক ভাবার পর হয়ত বালা হবে “যুব সমাজ”।

যুব সমাজ কারা এবং কিভাবে ভূমি রাখবে? যুব সমাজ হচ্ছে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক যুব বলে গণ্য হবে (সূত্র: জাতীয় যুবনীতি ২০১৭)। এই বয়সসীমার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থী, গৃহিণী, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, অভিনেতা-অভিনেত্রী, খেলোয়াড়, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, শ্রমিক, দিন মজুর প্রমূখ। একইসাথে অনেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য হিসেবে সমাজের নানান বিষয় নিয়ে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে। উল্লেখযোগ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যে হলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি), ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ার (নগর স্বেচ্ছাসেবক), বিশ্ব স্কাউট সংস্থার বাংলাদেশ স্কাউটসের রোভার স্কাউট ও এডাল্ট লিডার, বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্ এসোসিয়েশনের রেঞ্জার ও যুবা নেত্রী, আন্তর্জাতিক রেডক্রসের বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব রেড ক্রিসেন্ট দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), রোটারি ইন্টারন্যাশনালের রোটারেক্ট, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের লিও, এপেক্স ক্লাব, ক্রীড়া সংগঠন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এনজিও, ফাউন্ডেশন, সামাজিক বা মহল্লা ভিত্তিক ক্লাব ইত্যাদি।

ব্যক্তি আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নিজে নিজেকে প্রশ্ন করুন এবং উত্তর দেন তাহলেই আপনি আপনার করনীয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। কোন কিছু করার সুযোগ না থাকলে অন্তত নিজ ও নিজ পরিবারের সদস্যদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য কাজ করুন।

প্রাতিষ্ঠানিক বা সাংগঠনিকভাবে বিএফএসএ কার্যক্রম পরস্পরকে অবগত করুন যেমন: নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক পারিবারিক নির্দেশিকা, ফরমালিন, অ্যাপ “খাদ্যকথন”, খাদ্য নিরাপদ রাখার ৫টি চাবিকাঠি, খাবার সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, হোটেল রেস্টুরেন্টের খাবার, স্ট্রিট ফুড, কাঁচা বাজার, মাছ-মাংসের দোকান, সুপার শপ, মুদি দোকান, সাপ্তাহিক হাট ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট সব স্তরে একজন ক্রেতা-ভোক্তা হিসেবে কি কি বিষয় বিবেচনা করে খাদ্য পণ্য বা খাদ্য উপকরণ ক্রয় বা গ্রহণ করা প্রয়োজন এই বিষয়ে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে এবং পরস্পরকে সচেতন করতে হবে। নিজ নিজ সামাজিক যোগাযোগে পোস্ট করুন। কোন মাতামত থাকলে বিএফএসএ এর অ্যাপ “খাদ্যকথন” এবং খাদ্য নিয়ে জানতে ও জানাতে টোল ফ্রি নম্বর ১৬১৫৫ কল করতে পারেন। প্রতিষ্ঠান কিংবা সংগঠনের প্রোগ্রামে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে অল্প সময়ের জন্য হলেও সচেতনতার বার্তা দেয়া এবং আলোচনা করা। যুব সমাজ তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে সাংগঠনভাবে এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকল স্তরের মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তাবায়ন করলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা কঠিন কোন কাজ নয়।

যদি, সকলে নিজের ও পরিবারের সদস্যের সুস্থাতা প্রত্যাশা করি তাহলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে খাদ্যের নিরাপদতা বিষয়ে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। তবেই দেশের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সহজ হবে।

 লেখক: সদস্য, সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং সাবেক সহ-সম্পাদক, অগ্রদূত, বাংলাদেশ স্কাউটস

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

13 − one =