নান্দনিক সাজে রিডিং রুম

ময়ূরাক্ষী সেন

সৌখিন মানুষে নিজেকে সাজানোর পাশাপাশি ঘর সাজিয়ে তুলতে ভালোবাসে। অনেকের শুধুমাত্র ঘর সাজানোর জন্যই প্রতি মাসে রাখে বড় বাজেট। তবে বাজেট বড় না থাকলে যে ঘর সাজানো যাবে না এ ধারণা ভুল। যারা নিজের সাধ্যের মধ্যে থেকে নিজের ঘরকে নান্দনিক উপায়ে সাজিয়ে তুলতে চায় তাদের জন্য বাজারের রয়েছে হরেক রকমের কালেকশন। ঘর সাজানো এখন ফ্যাশনের বিশেষ একটি অংশ। আপনি যত সুন্দর করে নিজেকে সাজান না কেন কিংবা যত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হন না কেন, আপনার ঘর যদি নান্দনিক না হয় তবে তা সঠিকভাবে প্রকাশ পাবে না। অতিথিরা আপনার ঘরে এসে আপনার ব্যক্তিত্ব বুঝে ফেলতে পারবে। তাই ঘর সাজানোকে আজকাল এত গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

তবে অনেকে ঘর সাজানো বলতে বোঝে শুধু ড্রয়িং রুম। কারণ অতিথিরা সাধারণত এই ঘরেই বেশি প্রবেশ করে থাকে। বেডরুম কিংবা অন্যান্য ঘরে তারা তেমন একটা যায় না, তাই প্রশংসা পাওয়ার জন্য শুধু এই একটি ঘর সাজিয়ে তোলা যথেষ্ট মনে করে অনেকে। কিন্তু প্রশান্তির জন্য ঘরের প্রত্যেকটি কোনা গুরুত্ব সহকারে এবং সাধ্যমতো সাজিয়ে তোলা উচিত। ঘর সাজাতে হবে বিলাসবহুল জিনিস দিয়ে তা নয়, কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে যেকোনো কিছু দিয়ে ঘর আপনি সাজিয়ে তুলতে পারেন। ঘর সাজানোর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রুচি।

একটি ফ্ল্যাটে বেডরুম, গেস্ট রুম, ডাইনিং রুম স্বাভাবিকভাবেই থাকে। কিন্তু বড় ফ্ল্যাটে বাড়তি কোনো ঘর থাকলে অনেকে সেই ঘরকে রিডিং রুম বানিয়ে দেয়। ঘরের ছোট্ট শিশুরা পড়ে কিংবা বড়রা সেখানে বসে অফিসের কাজ করে। রিডিং রুম সাজানোর সময় অনেকে দ্বিধায় পড়ে যায় রুমটি কিভাবে সাজিয়ে তোলা উচিত। কারণ রিডিং রুম বলে একটি টেবিল রাখতে হবে তা নয়। রিডিং রুম আপনার ঘরের অন্যান্য রুমের মতোই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে পড়ালেখা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে থাকে। তাই এখানে সঠিক মনোযোগ ধরে রাখার একটি বিষয় থাকে।

রিডিং রুমে যাতে আপনার মনোযোগ নষ্ট করতে পারে এমন কোনো কিছু না থাকে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। রিডিং রুমটি কেমন হবে তা নির্ভর করছে এটি কার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। রুমটি যদি হয় ঘরের ছোট শিশুর জন্য তাহলে অবশ্যই ছোটদের থিমে ঘর সাজাতে হবে। ছোটদের রুম সাজানোর আগে অবশ্যই তার মতামত জেনে নিতে হবে। শিশুর কোনো পছন্দের কার্টুন বা পছন্দের বিশেষ কিছু থাকলে তাকে গুরুত্ব দিয়ে সে ঘর সাজাতে হবে। রিডিং রুমের রঙ কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে। যেমন চিরাচরিত সাধারণ সাদা ব্যবহার না করে হলুদ, লাল, আকাশের মতো উজ্জ্বল রঙ রুমকে আরো বেশি আকর্ষণীয় গড়ে তুলতে পারে। এছাড়া দেয়ালে করা যেতে পারে হ্যান্ড পেইন্টিং। সেখানে আকাশ পাখি ফুল পাতা এঁকে রুমকে আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব। রিডিং রুমে যেহেতু ছোট শিশু পড়ালেখা করবে তাই তার মনযোগ যাতে সেই রুমে পড়ার সময় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে শিশুর রুম সাজানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। রুমে এমন কিছু যেন না থাকে যাতে ব্যথা পাওয়া সম্ভব না থাকবে। যেমন খুব উঁচু আসবাবপত্র শিশুর ঘরে না রাখাই ভালো। শিশুরা যেহেতু ছোটাছুটি করতে ভালোবাসে, দেখা যায় তারা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে উঠে হাঁটাহাঁটি করছে; তাই তার রুমে খুব বেশি আসবাবপত্র না রেখে খোলামেলা রাখার চেষ্টা করতে হবে।

শিশুর পড়ার ঘরকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বিভিন্ন মজার বই, কিছু খেলনা এবং তার নিজের আঁকা ছবি থাকলে তার দেয়ালে টানিয়ে রাখতে পারেন। শিশুর রুম সাজানোর আগে অবশ্য আসবাপত্রের মানের দিকেও খেয়াল রাখা খুব বেশি জরুরি। আরামদায়ক এবং একটি উপযুক্ত পড়ার টেবিল তার জন্য কিনে নিতে হবে। যাতে করে সেই টেবিলে বসে পড়ালেখাসহ যাবতীয় কাজ করতে সে অস্বস্তি বোধ না করে।

একটি আরামদায়ক চেয়ার থাকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় শিশুর পছন্দের সঙ্গে বাবা-মার মত মিলে না। সেক্ষেত্রে শিশুর পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে কিছুটা নিজেদের মতো করে রুমটা সাজিয়ে নিতে হবে।

রিডিং রুম যদি হয় অফিসিয়াল কোনো কাজ করার জন্য, তাহলে পড়ার টেবিলের পাশাপাশি একটি আরামদায়ক সোফা রাখা যেতে পারে। রুমটি বড় হলে রাখা যেতে পারে একটি ডিভান। যাতে কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেওয়া যায়। এছাড়া রুমটি সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার ব্যক্তিত্ব ও পছন্দ অনুযায়ী। পড়ার ঘরে টেবিলের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে বুক সেলফ। বাজারে এখন বিভিন্ন দামে, বিভিন্ন নকশার বুক সেলফ পাওয়া যায়। নিজের পছন্দমত একটি বুক সেলফ কিনে ঘরে রাখতে পারেন। কাঠ ব্যবহার করতে না চাইলে বেতের বুক সেলফ কিনতে পারেন। বুক সেলফের মধ্যে একাডেমিক বইপত্র ছাড়াও প্রিয় লেখকের বই, কবিতার বই দিয়ে সাজিয়ে তুলতে পারেন, যাতে মন চাইলে বইয়ের পাতা উল্টে নেওয়া যায়। ঘরকে একমাত্র আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে বাহারি বই। ঘরের একটি কর্নারে আপনার বইয়ের কালেকশন দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারেন। রিডিং রুমের জন্য নতুন বই কিনে আপনার বইয়ের কালেকশন আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে পারেন।

চেষ্টা করতে হবে পড়ার টেবিলটি জানালার পাশে রাখার। ঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রিডিং রুম জানালার পাশে থাকলে দিনের বেলা আলো না জ্বালিয়ে পড়ালেখা করা যাবে। রিডিং রুমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আলোকসজ্জা। টেবিলের কর্নারে একটি টেবিল ল্যাম্প রেখে দিতে হবে, যাতে পড়ার সময় পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যায়। অনেক সময় অতিরিক্ত আলো মনোযোগ নষ্ট করে, তাই আলোর পরিমাণের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। পড়ার টেবিলে ছোট ইনডোর গাছ রেখে দেওয়া যেতে পারে। এতে রুম পাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছোঁয়া। এমন রুমকে রিডিং রুম হিসেবে বেছে নেওয়া উচিত যেখানে সহজে কোলাহল কিংবা বাইরে টেলিভিশন, গান ইত্যাদির শব্দ প্রবেশ করতে না পারে।

আপনার রিডিং রুমে বিছিয়ে দিতে পারেন পাতলা কার্পেট। বিশেষ করে শিশুদের জন্য কার্পেট ব্যবহার অনেক বেশি জরুরি, যাতে তারা পড়ে গেলেও ব্যথা না পায়। রিডিংরুমে খুব বেশি আসবাবপত্রের ব্যবহার না করাই ভালো। বড়জোর একটি স্টোরেজ রেখে দেওয়া যেতে পারে। যেখানে টুকিটাকি জিনিস গুছিয়ে রাখা যায়। বাজারে এখন ভালো মানের ফোল্ডিং পড়ার টেবিল পাওয়া যায়। ফোল্ডিং পড়ার টেবিল বেছে নিলে পড়া শেষ হয়ে গেলে তা ভাঁজ করে রেখে দেওয়া সম্ভব, এতে ঘর খোলামেলা থাকবে।

রিডিং রুমের পর্দার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে যাতে অতিরিক্ত কড়া রঙের পর্দা না হয়। সাদা কিংবা আকাশির মতো স্নিগ্ধ রঙের পর্দা ব্যবহার করা উচিত। যেকোনো ঘরকে যত সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হোক না কেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হলে তা ভালো লাগে না। তাই নিয়মিত পড়ার ঘরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। বিশেষ করে বইয়ের মধ্যে ধুলা পড়ে গেলে তার শুকনা সুতির কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে।

লেখাটির পিডিএফে দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ইন্টেরিয়র

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

8 − six =