নারী এশিয়া কাপ: ভারতের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নারী এশিয়া কাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশ ৫৯ রানে হেরে গেল ভারতের কাছে। আগের দিন পাকিস্তানের কাছে হারের ধাক্কা সামলে শনিবার ভারত ২০ ওভারে তোলে ১৫৯ রান। বাংলাদেশের জন্য এই রান ছিল অনেকটাই নাগালের বাইরে। আগে কখনও ১৪১ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের অভিজ্ঞতা এই দলের নেই। এবারও ২০ ওভার পুরো খেলে কোনোরকমে তারা স্পর্শ করতে পারে ১০০ রান।

উদ্বোধনী জুটি লম্বা সময় টিকে থাকল দুই দলেরই। তবে ভারতের সেই জুটিতে রান এলো ওভারপ্রতি ৮ করে, বাংলাদেশের স্রেফ ওভারপ্রতি ৫। বড় ব্যবধান হয়ে গেল সেখানেই। শেফালি ভার্মা ও স্মৃতি মান্ধানার জুটি ভারতকে যে স্কোরের পথে এগিয়ে নিল, বাংলাদেশ পারল না সেটির জবাব দিতে।

দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচের সেরা শেফালি ভার্মা। ওপেনিংয়ে ৪৪ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন ১৮ বছর বয়সী ক্রিকেটার। এমনিতে বোলিং তেমন একটা না করলেও এ দিন আঁটসাঁট অফ স্পিনে তার বোলিং ফিগার ৪-০-১০-২।

নিয়মিত অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌরের অনুপস্থিতিতে ভারতকে এই ম্যাচে নেতৃত্ব দেন স্মৃতি। তার ব্যাটেই শুরু দলের দাপুটে পারফরম্যান্সের। ম্যাচের প্রথম দুটি বাউন্ডারি আসে তার ব্যাট থেকে। এরপর সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ঝড় তোলেন শেফালি। দুটি চার ও একটি বাউন্ডারি মারেন তিনি ফারিহা তৃষ্ণার ওভারে। আগের ম্যাচে টি-টোয়েন্টি অভিষেকে হ্যাটট্রিক করা ফারিহা এ দিন ২ ওভারে দেন ২৫ রান।

অভিজ্ঞ সালমা খাতুন রানের গতিতে একটু রাশ টানতে পারলেও স্মৃতি ও শেফালি চড়াও হন নাহিদা আক্তারের ওপর। অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি স্পিনারের এক ওভারে স্মৃতি চার মারেন তিনটি, শেফালি একটি। পাওয়ার প্লেতে ভারত তুলে ফেলে ৫৯ রান।

বাংলাদেশের আলগা বোলিংয়ের সুযোগে রান আসতে থাকে পাওয়ার প্লে শেষেও। ১০ ওভারেই স্মৃতি ও শেফালি তোলেন ৯১ রান। লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুন আক্রমণে এসে একটু আটকে ধরেন ভারতের রানের গতি। এই সময়ই একটি উইকেট উপহার পায় বাংলাদেশ। ৩৭ বলে ৪৮ রান করে রান আউট হয়ে যান স্মৃতি। ভারতের উদ্বোধনী জুটি থামে ১২ ওভারে ৯৬ রান তুলে।

ফাহিমার সঙ্গে আরেক লেগ স্পিনার রুমানা আহমেদের দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচে ফিরতে পারে বাংলাদেশ। রুমানাকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পায়ের পেছন দিয়ে বোল্ড হন শেফালি। পরের ওভারে রুমানা পরপর দুই বলে ফেরান রিচা ঘোষ ও কিরন নাভগিরেকে। ছক্কার চেষ্টায় লং অনে ধরা পড়েন রিচা। ফ্লাইটে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হন কিরন। ১১ থেকে ১৭, এই ৭ ওভারে রান আসে স্রেফ ৩৪।

কিন্তু জেমিমা রদ্রিগেসের দারুণ ব্যাটিংয়ে শেষ দিকে আবার দ্রুত রান তোলে ভারত। প্রথম ৩ ওভারে ১০ রান দেওয়া ফাহিমার শেষ ওভারে দুটি বাউন্ডারি মারেন জেমিমা। পরে রুমানার এক ওভার থেকেও আসে চার ও ছক্কা। ভারত তুলে ফেলে ১৫৯, বাংলাদেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের মাঠে যে কোনো দলের সর্বোচ্চ রান।

বাংলাদেশের ব্যাটিং শক্তির বিচারে রানটা ধরাছোঁয়ার খানিকটা বাইরে। তা আরও দূরে সরে যায় শুরুর জুটিতেই। ফারজানা হক ও মুর্শিদা খাতুন ৯ ওভার উইকেটে কাটিয়ে করতে পারেন স্রেফ ৪৫ রান। দশম ওভারে জুটি ভাঙে মুর্শিদার (২৫ বলে ২১) বিদায়ে। স্নেহ রানার বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলে তিনি ক্যাচ তুলে দেন শর্ট কাভারে।

দারুণ ফর্মে থাকা নিগার সুলতানা তিনে নেমে ইনিংসকে গতিময় করার চেষ্টা করেন দারুণ কিছু শট খেলে। কিন্তু ওভারপ্রতি যখন লাগে ১১-১২ রান, একার চেষ্টায় কী আর লড়াই জমানো যায়! অভিজ্ঞ ফারজানা মন্থর শুরুর পর পুষিয়ে না দিয়ে বিদায় নেন ৪০ বলে ৩০ রান করে। আরেক অভিজ্ঞ রুমানা আহমেদ রান আউট শূন্যতেই। শেফালির বলে স্টাম্পড হয়ে নিগারের প্রচেষ্টা থামে ২৯ বলে ৩৬ করে। শেফালির ওই ওভারে স্টাম্পড হন ফাহিমাও। বাংলাদেশ পারেনি ম্যাচ জমিয়ে তুলতে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

sixteen + twenty =