নারী ও হেলমেট

হেলমেট শব্দটা শুনলেই যে কারো মনে পড়বে মোটরসাইকেলের কথা। হেলমেট ও মোটরসাইকেলের কথা এলেই প্রথমেই সবাই ভেবে নিবে নিশ্চয়ই কোনো পুরুষ তা পরিধান করবে। সেইসময় কিন্তু আর নেই। পুরুষদের সাথে সমানভাবে মোটরসাইকেলে চলাফেরা করছে নারীরা। তবে নারীদের কাছে বেশি জনপ্রিয় স্কুটি। নাহিন আশরাফের প্রতিবেদনে ফ্যাশনে নারীদের হেলমেট নিয়ে এবারের আয়োজন।

হেলমেট শব্দটা শুনলেই যে কারো মনে পড়বে মোটরসাইকেলের কথা। বর্তমান সময়ে বাইকের সাথে হেলমেট ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দুর্ঘটনা ঘটলে মাথায় আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা কমায় হেলমেট। কিন্তু এই হেলমেটের উদ্ভাবন বাইকের সাথে না। ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৯০০ সালে অ্যাসিরিয় সৈন্যরা হেলমেট ব্যবহার করতো। সেই সময়ে হেলমেটগুলো খুব পুরু চামড়া দিয়ে তৈরি হতো। অ্যাসিরিয় সৈন্যদের প্রায়ই যুদ্ধ করতে হতো, তাই তলোয়ার ও অন্যান্য হাতিয়ারের আঘাত থেকে মাথা রক্ষা করার জন্য হেলমেট ব্যবহার করা হতো। যুদ্ধক্ষেত্রে এখনো হেলমেট ব্যবহার করা হয়। আবার ক্রিকেট মাঠেও হেলমেটের ব্যবহার দেখা যায়। এখানেও খেলোয়াড়দের মাথা আঘাত থেকে রক্ষার জন্য হেলমেট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

তবে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত খেলোয়াড়দের হেলমেট পরতে দেখা যেত না। খেলোয়াড় হিসেবে ডেনিসকে প্রথম হেলমেট পরিধান করতে দেখা যায়। এরপর ধারাবাহিকভাবে অনেকেই হেলমেট ব্যবহার করেন। খেলোয়াড় মাইক ব্রিয়ারলি নিজের ডিজাইন করা বিশেষ হেলমেট ব্যবহার করতেন। তবে খেলোয়াড়দের হেলমেট জনপ্রিয় করে তোলেন ডেনিস। আবার হেলমেট পরার বিরোধিতাও করেছিলেন অনেক খেলোয়াড়। তাদের ভাষ্যমতে ব্যাটিংয়ের সময় হেলমেট সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ডেনিস যখন প্রথম হেলমেট পরেছিলেন, তাকে অনেকের কটূ কথা শুনতে হয়েছিল। তবে এখন নিজের নিরাপত্তার জন্য বেশিরভাগ খেলোয়াড়রাই হেলমেট পরে থাকেন। খেলোয়াড়দের হেলমেট প্রস্তুতকারক বিভিন্ন ব্র্যান্ড রয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, হেলমেট শুরু থেকেই নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত হতো।

হেলমেট ও মোটরসাইকেলের কথা এলেই প্রথমেই সবাই ভেবে নিবে নিশ্চয়ই কোনো পুরুষ তা পরিধান করবে। কিন্তু সেইসময় কিন্তু আর নেই। পুরুষদের সাথে সমানভাবে মোটরসাইকেলে চলাফেরা করছে নারীরা। তবে নারীদের কাছে বেশি জনপ্রিয় স্কুটি। স্কুটি ব্যবহার করলেও হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। তবে শুধু চালক নয় স্কুটি বা বাইকের পেছনে যে বসে তাকেও হেলমেট পরতে বলা হয়ে থাকে। কারণ চালকের থেকে পেছনের সিটে বসা ব্যক্তির দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সমীক্ষা মতে, পুরো পৃথিবীতে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয় তাদের ৮০% হেলমেট পরিধান না করেই মোটরসাইকেল চালায়। যেহেতু হেলমেট সবার প্রথমে নিরাপত্তা দেওয়ার অনুষঙ্গ তাই এটি কেনার আগে কিছু ব্যাপার জানা জরুরি।

হেলমেট কেনার আগে

বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের হেলমেট বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তবে আমাদের দেশে হেলমেট শিল্প সেভাবে গড়ে না উঠার ফলে যে কয়েকটি ব্র্যান্ড পাওয়া যায় সবগুলো আমদানি করে আনা হয়। হেলমেট কেনার আগে নিরাপত্তার দিকটির পর এটি কতটা আরামদায়ক তা লক্ষ্য করতে হবে। এবং অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে মুখের আকারের সাথে মানানসই কি না। মুখের আকারের কথা মাথায় না রেখে হেলমেট কিনলে মোটরসাইকেল চালানোর সময় অস্বস্তি অনুভূত হবে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। হেলমেটের কয়েকটি অংশ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে শেল, প্যাডিং ও মুখের সামনের ঢাকনা। হেলমেট কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে পলিকার্বনেট, গ্লাস ও কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি কি না। হেলমেটের অবশ্যই সার্টিফিকেশন থাকা প্রয়োজন।

এছাড়া নিজের হেলমেটের সাইজ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। একটি ভুল হেলমেট বেছে নিলে জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। অনেকেই নিজের হেলমেটের সাইজ জানেন না। মাথার সাইজের মতো হেলমেটের সাইজও আলাদা আলাদা হয়। অনেক সময় দেখা যায়, একজনের হেলমেট আরেকজন ব্যবহার করলে সঠিকভাবে মাথায় বসে না। তাই হেলমেট কেনার আগে সাইজ জানা খুব জরুরি। একটি সঠিক সাইজের হেলমেট পরলে মাথায় চাপ অনুভব হবে না, নড়াচড়া করবে না ও চোয়ালের সাথে আটকে থাকবে। যদি হেলমেট পরিধান করার পর কোনোরকম অস্বস্তি হয় তখনি বুঝে নিতে হবে হেলমেটটি আপনার জন্য না।

বেশিরভাগ রাইডার হেলমেট কেনার আগে ডিজাইনের ব্যাপারে সচেতন থাকে। কারণ বাইকের ডিজাইন কিংবা কালারের সাথে যদি হেলমেটের মিল না থাকে তাহলে বেমানান লাগে। তাই সৌন্দর্যের কথা মাথায় রাখার পাশাপাশি অবশ্যই ডিজাইনের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে হেলমেটের শেলটির দিকেও। কারণ যেকোনো দুর্ঘটনা থেকে শেলটিই নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। বাইরের শেল মজবুত কি না সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। পলি কার্বনেট দিয়ে বানানো শেল সাধারণত খুব ভালো মানের হয়, এটি সহজে ভেঙে যায় না। শেলের পর নজর দিতে হবে প্যাডিংয়ে। এটি ভালো করে মাথার সাথে লেগে থাকে কি না দেখতে হবে। প্যাডিং ঠিক মতো মাথা ও চোয়ালে সেট না হলে খুব সহজেই খুলে যাবে; তখন দুর্ঘটনার সময় আমাদের মাথা নিরাপত্তা পাবে না।

হেলমেটে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা আছে কি না দেখে নিন। কারণ লম্বা যাত্রায় এটি আমাদের পর্যাপ্ত শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করতে সাহায্য করবে। অনেক হেলমেটেই ভেন্টিলেশন থাকে না। এ বিষয়ে কেনার আগে সঠিকভাবে জেনে নিতে হবে। পরবর্তী ধাপ হচ্ছে ভাইসর। ভাইসর সামনের বস্তু দেখতে সাহায্যে করে। তাই ভাইসরটি অবশ্যই হতে হবে পরিষ্কার। কালারফুল ভাইসর বেছে না নেওয়াই ভালো। কারণ এতে সামনের বস্তু দেখতে অসুবিধা হয়ে থাকে। আবার খুব ভোরে রাইডে গেলে কুয়াশা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে এন্টি ফগ ভাইসর লাগিয়ে নিলে ভালো হয়। এতে কুয়াশা কিংবা বৃষ্টির মধ্যে সমস্যা হবে না। সার্টিফিকেট বিহীন হেলমেট কেনা উচিত না। হেলমেট কেনার আগে সার্টিফিকেট যাচাই করে নিতে হবে।

নারী ও হেলমেট

হেলমেট পরবে শুধু পুরুষরা, সেদিন কিন্তু আর নেই। নারীরাও এখন মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও স্কুটি রাইড দিচ্ছে। তাই হেলমেট প্রয়োজন হচ্ছে তাদেরও। নারীকে মোটরসাইকেল চালাতে দেখে বাঁকা চোখে তাকানোর দিন কিন্তু ফুরিয়ে এসেছে। হেলমেট যেহেতু নারীরাও পরছে তাই তাদের জন্য এটা হয়ে উঠেছে ফ্যাশন অনুষঙ্গ। নারীদের কথা মাথায় রেখে দেশ-বিদেশের নানা ব্র্যান্ডগুলো বিশেষ নকশার হেলমেট তৈরি করছে। চিরাচরিত সব হেলমেট সাধারণত পুরুষদের কথা মাথায় রেখে করা হলেও এখন নারীদের নিয়েও আলাদা করে হেলমেট তৈরি করা হচ্ছে। নারীদের জন্য হেলমেটে চুল ছেড়ে রাখার জন্য কিছুটা কাট রাখা হয়। তাছাড়া নানা রঙের হেলমেটও রয়েছে বাজারে। যেমন লাল, নীল, গোলাপি, হলুদ, বেগুনি ইত্যাদি।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে নারীদের কাছে জনপ্রিয় বর্ণিল, ছোট ও হালকা হেলমেট। এখন হেলমেটেও ফুটে উঠছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। হেলমেটে করা হচ্ছে হ্যান্ড পেইন্ট। লতা পাতা, ফুল, সিনেমার নাম কিংবা নিজের নাম লিখে হেলমেটকে করা হচ্ছে আকর্ষণীয়। কিছু হেলমেট কাস্টমাইজড করে নিজের পছন্দের ডিজাইন অনুযায়ী তৈরি করে নেওয়া যাচ্ছে। অনেক ফ্যাশন সচেতন নারীরা পোশাকের সাথে মিল রেখেও হেলমেট পরিধান করে থাকেন। নারীদের হেলমেটে করা হচ্ছে নানা চিত্রকর্ম। বড় চুলের জন্য যাতে হেলমেট পরিধান করতে যাতে সমস্যা না হয় যে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। একটা সময় নারীরা বাইক কিংবা স্কুটি ব্যবহার করলেও নিজের চুলের কথা চিন্তা করে হেলমেট ব্যবহার করতো না। কিন্তু এখন নারীদের জন্য ফ্যাশনেবল হেলমেট তৈরি হচ্ছে।

হেলমেটের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা

হেলমেট নিয়মিত পরিষ্কার করা খুব জরুরি। তা না হলে মাথাব্যথার মতো নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে হেলমেটের গ্লাস সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে, তা না হলে বাইক চালানোর সময় দেখতে সমস্যা হতে পারে। হেলমেট পরিষ্কার করতে ওয়াশিং সোডা ও ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। হেলমেট পরিষ্কার করতে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে, এতে হেলমেটে থাকা জীবাণু খুব সহজেই চলে যাবে। তবে পরিষ্কার করার সময় প্যাডিংয়ে বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। কারণ এতে প্যাডিং নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গ্লাস পরিষ্কার করতে সুতির কাপড় ব্যবহার করা উচিত। হেলমেট পরিষ্কার করা হয়ে গেলে বাতাসে শুকাতে দিতে হবে। নিয়ম মেনে হেলমেট পরিষ্কার না করলে দুর্গন্ধ হতে পারে।

বাজার ও দরদাম

বাজারে নানা দামের হেলমেট পাওয়া যায়। হেলমেট যেহেতু রাইডারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ তাই এতে আপস করা উচিত না। বাজারে অনেক নকল ও কমদামি হেলমেট পাওয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কিনতে হবে। রাজধানীর বংশাল, মিরপুর ও বাংলামোটরে বেশকিছু দোকানে হেলমেট পাওয়া যায়। দাম নির্ভর করছে গুণগত মানের ওপর। তাই হেলমেট কেনার আগে একটি বাজেট ঠিক করতে হবে। কেনার আগে বিএসটিআইয়ের মানচিহ্ন দেখে নেওয়াও জরুরি।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ফ্যাশন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × five =