নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে ঐতিহাসিক টি-টোয়েন্টি জয় বাংলাদেশের

নেপিয়ার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ (বাসস): বোলারদের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুন্যে প্রথমবারের মত নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ। আজ তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিক নিউ জিল্যান্ডকে। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।

বাংলােেদশের  নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৪ রানে আটকে যআয় স্বাগতিক  নিউ জিল্যান্ড। বাংলাদেশের শরিফুল ইসলাম ৩টি, মাহেদি হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান ২টি করে উইকেট নেন। জবাবে ষষ্ঠ উইকেটে ২৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪০ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক জয়ের স্বাদ দেন ওপেনার লিটন দাস ও মাহেদি। লিটন ৪২ ও মাহেদি ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন। টি-টোয়েন্টির আগে এই সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে জিতে প্রথমবারের মত নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে ৫০ ওভারের ম্যাচ জয়ের নজির গড়েছিলো টাইগাররা।

নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরতেই অফ স্পিনার মাহেদি হাসানের হাতে বল তুলে দেন টাইগার অধিনায়ক।

প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন প্রায় ১৬ মাস পর টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা মাহেদি। রানের খাতা খোলার আগেই নিউ জিল্যান্ডের ওপেনার টিম সেইফার্ট শিকার হন   মাহেদির।দ্বিতীয় ওভারে নিউজিল্যান্ড শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন বাংলাদেশের পেসার শরিফুল ইসলাম। ওভারের দ্বিতীয় বলে স্লিপে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে ১ রান করে ফিরেন ওপেনার ফিন অ্যালেন।

অ্যালেনের বিদায়ের উইকেটে এসে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই লেগ বিফোর আউট হন গ্লেন ফিলিপস। নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার আউট না দিলে, রিভিউ নিয়ে সাফল্য পায় বাংলাদেশ। সেইফার্টের মত খালি হাতে ফিরেন ফিলিপসও।

পরপর দুই বলে অ্যালেন ও ফিলিপসকে শিকার করে হ্যাট্টিকের সম্ভাবনা তৈরি করেন শরিফুল। কিন্তু বাংলাদেশি বোলারকে  হ্যাট্টিকের স্বাদ নিতে দেননি মার্ক চাপম্যান। দ্বিতীয় ওভারে ১ রানে ৩ উইকেট হারায় নিউ জিল্যান্ড। টি-টোয়েন্টিতে এত কম রানে ৩ উইকেট হারানোর প্রথম ঘটনা কিউইদের।

শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন চাপম্যান ও ড্যারিল মিচেল। জুটিতে ১৯ বলে ১৯ রান যোগ হবার পর বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন মাহেদি। ২টি চারে ১৪ রান করা মিচেলকে বোল্ড করেন মাহেদি। এতে পাওয়ার প্লেতে ৩৬ রানে ৪ উইকেট হারায় নিউ জিল্যান্ড।

পঞ্চম উইকেটে ২৮ বলে ৩০ রানের জুটিতে দলের স্কোর ৫০এ নেন চাপম্যান ও জেমস নিশাম। ১০ম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই জুটি ভাঙ্গেন স্পিনার রিশাদ হোসেন। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা তানজিম হাসানকে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দেন ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৯ বলে ১৯ রান করা চাপম্যান।

৫০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বোলারদের উপর আগ্রাসী হন নিশাম ও অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার। ১১ ও ১২তম ওভারে ৯ রান করে নেওয়ার পর তানজিমের করা ১৪তম ওভারে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ রান তুলেন তারা।

১৫তম ওভারে তৃতীয়বারের মত আক্রমনে এসে বাংলাদেশকে আবারো  উইকেট উপহার দেন শরিফুল। সৌম্যর দারুন ক্যাচে বিদায় ঘটে ২টি চারে ২২ বলে ২৩ রান করা স্যান্টনারের। নিশাম-স্যান্টনার  ৩১ বলে ৪১ রান যোগ করেন ।

স্যান্টনার ফেরার পর ১৬তম ওভারে রিশাদের বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ১১ রান তুলে দলের স্কোর ১শতে নেন নিশাম। পরের ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে ছক্কা মারার পরের বলে সাজঘরে ফিরেন নিশাম। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৯ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন নিশাম।

দলীয় ১১০ রানে নিশাম ফেরার পর শেষ দিকে এডাম মিলনের ২টি ছক্কায় ১২ বলে অপরাজিত ১৬ ও টিম সাউদির ৮ রানের উপর ভর করে লড়াকু সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৪ রান করে কিউইরা। দেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে এটিই সর্বনিম্ন রান নিউ জিল্যান্ডের।

বাংলাদেশের শরিফুল ৪ ওভারে ২৬ রানে ৩টি, ৪ ওভার করে বল করে মাহেদি ১৪ রানে ও মুস্তাফিজ ১৫ রানে ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট শিকার করেন তানজিম-রিশাদ।

১৩৫ রানের টার্গেট দিতে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে ছক্কা মেরে রানের খোলা ওপেনার রনি তালুকদারকে শিকার করেন পেসার এডাম মিলনে। ৭ বলে ১০ রান করে  আউট হন রনি।

উইকেটে এসেই নিউ জিল্যান্ডর বোলারদের উপর চড়াও হয়ে ৪টি চার আদায় করে নেন অধিনায়ক শান্ত। কিন্তু পঞ্চম ওভারে নিশামের বলে স্যান্টনারকে ক্যাচ দিয়ে ১৪ বলে ১৯ রান নিয়ে সাজঘরে ফিরেন শান্ত। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৪২ রান পায় বাংলাদেশ।

স্পিনার ইশ সোধির করা সপ্তম ওভারে চার নম্বরে নামা সৌম্যর ১টি করে চার-ছক্কায় ১৪ রান ায় বাংলাদেশ। তবে দারুন শুরু করে বড় ইনিংস ইনিংস খেলতে পারেননি সৌম্য। নবম ওভারে পেসার বেন সিয়ার্সের বলে বোল্ড হওয়ার আগে  ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ বলে ২২ রান করেন সৌম্য। শান্তর সাথে ২৫ রানের পর সৌম্যর সাথে ২৯ রান যোগ করেন ওপেনার লিটন দাস।

চতুর্থ উইকেটেও তাওহিদ হৃদয়ের সাথে ২৯ রান তুলে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখেন লিটন। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলে ১৮ বলে ১৯ রান করে স্যান্টনারের শিকার হন হৃদয়। হৃদয়ের বিদায়ের পর দ্রুত ফিরেন নতুন ব্যাটার আফিফ হোসেন। ৬ বলে ১ রান করে আফিফ আউট হলে  ৯৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ঐ অবস্থায় ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৩ বলে ৩৮ রান দরকার পড়ে টাইগারদের।

১৫তম ওভারের শেষ বলে লেগ বিফোর আউট হলেও রিভিউ নিয়ে বাঁচেন ২২ রানে থাকা লিটন। এরপর শেষ ৩ ওভারে ২৪ রানের দরকার পড়ে বাংলাদেশের। সিয়ার্সের করা ১৮তম ওভারে লিটনের ১টি করে চার-ছক্কায় ১৪ রান উঠে। শেষ ২ ওভারে জিততে ১০ রানের সমীকরণ পায় টাইগাররা।

মিলনের করা ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারেন মাহেদি। পরের বলে ২ ও তৃতীয় ডেলিভারিতে ৪ মেরে প্রথমবারের মত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয় নিশ্চিত করেন মাহেদি। জুটিতে ২৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪০ রান তুলেন লিটন-মাহেদি।

এক প্রান্তে আগলে দলের জয়ে অবদান রাখা লিটন ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৬ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন।  ১টি করে চার-ছক্কায় ১৬ বলে অপরাজিত  ১৯ রান এবং  ১৪ রানে  ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন মাহেদি।

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে আগামী ২৯ ডিসেম্বর সিরিজে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ ও নিউ জিল্যান্ড।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

15 − 4 =