নিজেদের পাতা ফাঁদে ধরা পড়ে সিরিজ জয়ের সুযোগ হারালো বাংলাদেশ

সালেক সুফী

প্রবল প্রতাপশালী টেস্ট খেলুড়ে দল নিউ জিল্যান্ডকে ভালো খেলে সিলেট প্রথম টেস্টে হারিয়ে সিরিজ জয়ের মোক্ষম সুযোগ পেয়েছিল।  মিরপুরে ব্যাটিং সহায়ক উইকেট বানালে বাংলাদেশ টেস্ট জয় না করলেও ড্র করে সিরিজ জয় করতে পারতো। কিন্তু শ্রীলংকান পরামর্শে নিচু , ধীর এবং ঘূর্ণি উইকেট বানিয়ে নিজেদের ফাঁদে ধরা পড়লো বাংলাদেশ। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হলেও চতুর্থ দিন শেষ হওয়ার আগেই ৪ উইকেটে পরাজিত হলো বাংলাদেশ। সিরিজের ফলাফল ১-১।

ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম ঘণ্টা খেলা হয়েছিল। প্রথম থেকেই উইকেটে অসম বাউন্স ছির। ধীর, নিচু এবং ঘূর্ণি উইকেটে প্রথম দিনেই ১৫ উইকেটের পতন ঘটে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ১৭২ রানের জবাবে নিউ জিল্যান্ড দিন শেষে সংগ্রহ করে ৫৫/৫। ভূমধ্যসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে দেশ জুড়ে বৃষ্টি ঝরায় দ্বিতীয় দিনের খেলা পরিত্যক্ত হয়। তৃতীয় দিনে গ্লেন ফিলিপসের (৮৭) বীরোচিত বাটিংয়ের কারণে নিউ জিল্যান্ড ইনিংস শেষ হয় ৮০ রানে।

বৃষ্টির বাধায় দিনের খেলা সংকুচিত হওয়ায় তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ রান দাঁড়ায় ৩৮/২। চতুর্থ দিনে নিউ জিল্যান্ডের তুখোড় স্পিন বোলিংয়ের মোকাবিলায় তাসের ঘরের মত ঝরে পড়ে বাংলাদেশ। একমাত্র জাকির (৫৯) কিছুটা দৃঢ়তা দেখানোয় বাংলাদেশের রান দাঁড়ায় ১৪৪।  উইকেট ভঙ্গুর এবং কঠিন ছিল। বিশেষত টার্ন এবং অসম বাউন্স ছিল।

একপর্যায়ে ৬৯ রানে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে চেপে ধরেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু ব্লাকক্যাপ্স ব্যাটিং গভীরতা এবং গ্লেন ফিলিপ্স (৪০*) এবং মিচেল সান্টনারের (৩৫*) জুটিতে অবিচ্ছিন্ন ৭০ রান যুক্ত হওয়ায় যোগ্য দল হিসাবে টেস্ট জয় এবং সিরিজ ড্র করে নিউ জিল্যান্ড।

বাংলাদেশের আরো একটি সোনালি সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটে ঘাতক উইকেট তৈরির কারণে। কয়েকদিন বাদেই নিউ জিল্যান্ডের ফাস্ট, সুইংগিং উইকেটে সাদা বলের ক্রিকেট খেলতে যাবে বাংলাদেশ। কেন শ্রীলংকান পরামর্শে ঘাতক উইকেট তৈরি অব্যাহত থাকবে কেউ কি জবাব দিবেন?

বাংলাদেশ আজ দ্বিতীয় ইনিংসে আনাড়ির মতো ব্যাটিং করেছে। একমাত্র জাকির ছাড়া কারো ব্যাটিং দেখে মনেই হয়নি কারো কোনো ব্যাটিং পরিকল্পনা ছিল। মোমিনুল, মুশফিক, সোহান নিজেদের ব্যাটিং রিপ্লে দেখে লজ্জা পাবার কথা। উইকেট কঠিন ছিল নিঃসন্দেহে। কিন্তু এই উইকেটে ফিলিপ্স, সান্টনার প্রমাণ করলো নিজেদের প্রয়োগ করে খেললে এখানেও ব্যাটিং করা অসম্ভব ছিলো না।

এশিয়া কাপে ব্যর্থতা এবং বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের পর তরুণ দলের সিলেট টেস্ট জয় ক্ষণিক আনন্দের উপলক্ষ হয়েছিল। কিন্তু আত্মঘাতী উইকেটে বাংলাদেশের নিজেদের ফাঁদে ধরা পড়া বিসিবির আনাড়িপনা আবারো প্রমাণ করলো।

সিরিজে ১-০ এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের উচিত ছিল ব্যাটিং সহায়ক ফ্লাট উইকেট তৈরি করা। শ্রীলংকান সিন্ডিকেটের পরামর্শে আত্মঘাতী উইকেট তৈরি করে বাংলাদেশ নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছে। সবার কাছে এখন জলের মতো পরিষ্কার বিসিবিতে লুকিয়ে থাকা একটি আত্মবিনাশী গোষ্ঠীর কারসাজির কারণে লংকান কোচিং স্টাফ এবং কিউরেটর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটকে টেস্ট অনুপযোগী করে রাখছে।

এই মাঠে খেলে জাতীয় ক্রিকেট দলের টেকসই উন্নতি দারুনভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আর কদিন পরে বাংলাদেশ দল সফরে নিউ জিল্যান্ডের কাছে নাস্তা নাবুদ হবে বলে আশঙ্কা করছে ক্রিকেট এনালিস্টরা।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

12 + fourteen =