সালেক সুফী
শ্রীলংকান কিংবদন্তি লাসিথ মালিঙ্গার মতো বোলিং করা নুয়ান তুষারা বল হাতে ঝড় তুলে কাল বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটিং দুমড়ে মুচড়ে দিলে লড়াই করেও হেরে যায় বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাটিং করে ১৭৪/৭ করেছিল সফরকারী শ্রীলংকা। জবাবে বাংলাদেশ শুরুতে ৬/৩২ হোঁচট খেয়েও রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ (৩১) লড়াই করায় ১৯.৪ ওভারে ১৪৬ রান করে ২৮ রানে হেরে যায়। ২-১ সিরিজ জিতে যায় শ্রীলংকা। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে প্রথম বারের মত টি২০ ফরম্যাটে সিরিজ জয় অধরা থেকে গেলো বাংলাদেশের।
আবারো টস হেরে ব্যাটিং করে কুশাল মেন্ডিসের ৫৫ বলে করা ৮৬ রানের কল্যানে ১৭৪/৭ প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ স্কোর করে সফরকারী শ্রীলংকা। জবাবে ব্যাটিং শুরু করে শুরুতেই লিটন ফিরে যায়। এই ম্যাচে মাথিশা পাথিরানার পরিবর্তে দলে সুযোগ পাওয়া নুয়ান তুষারা চতুর্থ ওভার বোলিং করতে এসে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বলে নাজমুল শান্ত, তাওহীদ হৃদয় এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের উইকেট তুলে নেয় গতি এবং সুইংয়ের বিষাক্ত ছোবল হেনে। অর্জন করে টি২০ ক্রিকেটে বিরল হ্যাটট্রিক।
১৫ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। নিজের পরের ওভারে তুষারা সৌম্য সরকারের উইকেট উপড়ে ফেললে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ২৪ রানে ৫ উইকেট। এরপর প্রথম ম্যাচের অন্যতম নায়ক জাকির আলী অনিক হাসারাঙ্গার গুগলি বলে পরাস্ত হয়ে আউট হলে ৩২ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশের সামনে টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বনিম্ন স্কোরের কালিমা উঁকিঝুঁকি দিতে থাকে। এই অবস্থায় ৭ম উইকেট জুটিতে লড়াই করে মাহেদী হাসান আর রিশাদ হোসেন। ওদের যোগাযোগে ৭ম উইকেট জুটিতে যোগ হয় ৪৪ রান।
মাহেদী ফিরে গেলে ঝড় তুলে রিশাদ হোসেন (৫৩) আর তাসকিন আহমেদ (৩১)। দেয়ালে পিঠ রেখে ওদের লড়াই হেরে যাওয়া বাংলাদেশের দর্শকদের অকুণ্ঠ প্রশংসা অর্জন করে। শ্রীলংকা বোলিংয়ের আকর্ষণ ছিল নুয়ান তুষারার গতি এবং সুইং। বাংলাদেশের টপ অর্ডার তাসের ঘরের মতই ঝরে পড়েছিল। হ্যাট্রিক সহ ২০ উইকেটে ৫ উইকেট নেওয়া তুষারা একাই ম্যাচ জয় করে।
অথচ দ্বিতীয় ম্যাচে মাথিশা পাথিরানা আহত না হলে খেলার সম্ভাবনা ছিল না তুষারার। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ লড়াই করে ৩ রানে হেরেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচ জিতেছিল ৮ উইকেটে। সঙ্গত কারণেই ম্যাচ সেরা হয়েছে নুয়ান তুষারা আর সিরিজ সেরা হয়েছে কুশাল মেন্ডিস।
প্রশ্ন জাগতেই পারে বাংলাদেশ কেন টস জয় করে দিনের খেলায় আগে ব্যাটিং করেনি। কাল সন্ধ্যায় তুষার সিক্ত উইকেটের সুবিধা নেওয়ার বিষয় ছিল না। চাপহীন ভাবে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ একটা ভালো টার্গেট দিতে পারতো। হয়নি সেটি। কুশাল মেন্ডিস একাই ৫৫ বলে ৮৬ রান করে শ্রীলংকান ইনিংসের ভিত্তি গড়ে দেয়। মাঝে মাঝে কিছু লুজ বোলিং করলেও বাংলাদেশ বোলাররা শেষ দিকে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে সফরকারীদের ইনিংস ধরা ছোয়ার ভেতরে রেখেছিল। বিশেষ করে তাসকিন (২/২৫), রিশাদ (২/৩৫) ,শরিফুল (১/২৮) নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে।
বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল পরিকল্পনা করে ব্যাটিং করা। কিন্তু তুষারার তীব্র গতির সুইং বোলিং টপ অর্ডারকে লণ্ডভণ্ড করে দেয়। তবুও রিশাদ হোসেনের ৭টি প্রচণ্ড ছক্কায় সাজানো ৩০ বলে ৫৩ রানের ইনিংসটি এবং তাসকিনের ২১ বলে ৩১ রানের লড়াকু ইনিংসকে বাহবা দিতেই হয়। জয় পরাজয়ের থেকেও যুদ্ধ করে হেরে যাওয়ার মানসিকতা দেখে প্রশংসা করতে হবে। বাংলাদেশের অর্জন রিশাদ হোসেনের মতো চৌকষ খেলোয়াড় এবং জাকির আলী অনিকের মত ফিনিশার। একই সঙ্গে তরুণদের লড়াকু মানসিকতাও বড় অর্জন।
সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া লেখক