পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণেও সমন্বিত কৌশল জরুরি

সালেক সুফী

বৈশিক দূষণের জন্য দায়ী না হলেও বাংলাদেশ কিন্তু বৈশিক দূষণের অন্যতম প্রধান শিকার। এছাড়া জন সচেতনতার অভাব, অসুস্থ মানুষিকতা এবং ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশি জনসংখ্যা নিয়ে ঢাকা মহানগরী পৃথিবীর অন্যতম প্রধান দূষিত শহরগুলোর অন্যতম। আছে বায়ু দূষণ, শব্ধ দূষণ, যানজট, জলজটের শহর ঢাকা।  ছাত্র জনতার মহান আন্দোলন শেষে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এখন সুবর্ণ সুযোগ এসেছে তরুণ সমাজ, যুব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জনগণকে পরিবেশ সচেতন করা। খাল, বিল, ঝুপ জঙ্গল পরিষ্কার পরিছন্ন করে পরিবেশ দূষণ মুক্ত মহানগরী গড়ে তোলা। পরিবেশ উপদেষ্টা ইতিমধ্যে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন।  খাল বিল পরিষ্কার করার মত কিছু শুভ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই কাজ গুলো তদারকি করার কাজে সারা দেশে অঞ্চল ভিত্তিক পরিকল্পনা করে যুবসমাজকে কাজে লাগানো যায়। পরিবেশ পরিছন্ন থাকলে নির্মল আলো বাতাসে নাগরিকের সুস্থ  জীবন যাপন নিশ্চিত হবে। ডেঙ্গুর, ডায়রিয়ার মত সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আসবে। কোমল শিশু কিশোররা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ওরা কতটুকু সমাজ সচেতন।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পরিকল্পিত ভাবে নিয়ন্ত্রণ। সড়ক যানজট নিয়ন্ত্রণ করে ধীরে ধীরে সড়কে ডিজেল ব্যবহার সংকুচিত করে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ চালিত পরিবহনের দিকে যেতে পারে দেশ। ঢাকা মহানগরীর চারপাশে চারটি নদী, ঢাকার মাঝে প্রবাহমান খালগুলো দখল দূষণ মুক্ত করে জলযান চলাচলের জন্য উপযোগী করা হলে এমনিতেই পরিবেশ দূষণকারী যান বাহন কমে আসবে। তবে এই বিষয়ে সকল অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আপাত দৃষ্টিতে বিষয়টি দুরূহ হলেও অসম্ভব নয়। এই সব কাজেও ছাত্র শক্তির সৃজনশীলতা ব্যবহার করা যেতে পারে।

দূষণ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম প্রধান কাজ ঢাকার চার পাশে চালু পরিবেশ দূষণকারী ইট ভাটা বন্ধ করা এবং দেশে ইটের ব্যবহার সীমিত করে ব্লক বা অন্নান্ন বিকল্প নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকার পলিথিন নিয়ন্ত্রণ করার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। পলিথিন ব্যবহার সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সুলভ মূল্যে বিকল্প ব্যাগের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। দেখতে হবে এই কার্যক্রম যেন চিরচারিত লোক দেখানো কার্যক্রমে পরিণত না হয়। পলিথিন ব্যবহার বন্ধ হলে জলপথ দূষণ নিয়ন্ত্রিত হবে, জলজট থেকে নগরগুলো মুক্তি পাবে।

ঢাকার অধিকাংশ বহুতল ভবন এবং ঢাকার উপকণ্ঠে থাকা শিপ্ল কারখানা গুলো ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা করা গেলে গ্রিড বিদ্যুৎ ব্যবহার এবং এর মাধ্যমে জীবাষ্ম জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ ব্যবহার কমিয়ে আনা যাবে।

আরেকটি প্রধান সমস্যা পুরোনো শতছিন্ন গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক থেকে অনিয়ন্ত্রিত মিথেন গ্যাস নিঃসরণ। সঠিক পরিকল্পনার মাদ্ধমে দ্রুততম সময়ে হয় লাইনগুলো প্রতিস্থাপন করতে হবে অথবা বন্ধ করে দিতে দিতে হবে। নতুন বিতরণ লাইন নির্মিত হলে ডিজিটাল ম্যাপিং, জিআইএস  নিশ্চিত করতে হবে।

মনে রাখতে হবে এই সব কাজে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। সবাই সবার স্থান থেকে সচেতন হয়ে দেশের স্বার্থে সহায়তা করলে পরিছন্ন পরিবেশ  নিশ্চিত হবে। আগামী প্রজন্ম সুন্দর নির্মল পরিবেশে জীবন যাপনের সুযোগ পাবে। সব কথার শেষ কথা সমন্বিত কৌশল।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

thirteen + six =