পাকিস্তান বাংলাদেশ টি ২০ সিরিজ : দাপুটে জয়ে বাংলাদেশের উড়ন্ত সূচনা

ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টি ২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচটি বাংলাদেশ ৭ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে জয় করে সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেলো। স্টেডিয়ামটি ১৯৭১র বদ্ধভুমির কাছাকাছি। বোলিং ব্যাটিং দারুন সম্মিলনে কাল টিম টাইগার পাকিস্তান বোধ ছিল অনাবিল স্বস্তির। টস জয় করে পাকিস্তানকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তেড়েফুঁড়ে সূচনা করেছিল ফকর জামান আর সিয়াম আয়ুব। কিন্তু তাসকিন মেহেদী হাসান, তানজিম সাকিব, মোস্তাফিজুর রহমান বল হাতে সংহারী রূপ ধারণ করায় ৭.৪ ওভারেই পাকিস্তানের ইনিংস ৫/৪৬ হয়ে গেলো। সিয়াম আয়ুব (৬), মোহাম্মদ হারিস (৪), সালমান আগা (৩), হাসান নাওয়াজ (০), মোহাম্মদ নাওয়াজ (০) ছিল আসা যাওয়ার একমুখী মিছিলে। ফকর (৪৪)  আর খুশদিল শাহ  (১৭) প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু টি ২০ ক্রিকেটে বিশ্বসেরা মুস্তাফিজের কিপ্টে বোলিং (৪-০-৬-২) পাকিস্তানকে কোনঠাসা করে রাখে। শেষদিকে আব্বাস আফ্রিদির (২২) বেপরোয়া ব্যাটিং করে কোনমতে পাকিস্তান ১০০ পেরিয়ে ১১০ করতে পারে। জবাবে বাংলাদেশ শুরুতে তানজিদ তামিম আর লিটন দাসের উইকেট হারালেও পারভেজ ইমন (৫৬*) আর তাওহীদ হৃদয়ের (৩৬) দায়িত্বপূর্ণ বাটিংয়ে ১৫.৩ ওভারে ১১২/৩ তুলে নিয়ে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে উড়ন্ত সূচনা করে। বিশ্বাস করুন বাংলাদেশ কয়েকটি ক্যাচ ফেলে না দিলে জয়টি আরো সহজ হতে পারতো।

সব ফরম্যাটে দারুন পড়তি ফর্মে থাকা বাংলাদেশ শ্রীলংকা সফরে টি ২০ সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ ঘুরে দাঁড়িয়ে ২-১ সিরিজ জিতে দেশে ফিরেছিল। কাল ম্যাচ জয় করে সেই ধারা অব্যাহত রাখলো। বাংলাদেশের অপেক্ষারত তরুণ দলটি ধারাবাহিক ভাবে ভালো খেলতে থাকলে অচিরেই দলটি এই ফরম্যাটে ওপর স্বভাবনাময়ী দল হয়ে উঠবে।

কাল টস জয় করে লিটন দাসের বোলিং করার সিদ্ধান্ত যথাযথ ছিল। উইকেট ঠিক মিরপুর উইকেটের সনাতনী রূপে আবির্ভুত না হলেও কিছটা অসম বাউন্স ছিল। পাকিস্তান কিন্তু ঝড়ের গতিতে শুরু করার মানসিকতায় ছিল। মাহেদী হাসান আর তাসকিনের প্রথম দুই ওভারে দ্রুত ১৮ রান সংযুক্ত হয়েছিল। এরই মাঝে ফকর জামানের একটি ক্যাচ হাত ফস্কালো। তাসকিন  দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে সাইম আয়ুবকে ফেরানোর পর মড়ক লাগলো পাকিস্তান ইনিংসে। লিটন বিচক্ষণতার সঙ্গে বোলিং পরিবর্তন করে মাহেদী, তানজিম সাকিব, মুস্তাফিজের বলে দ্রুত ফায়ার গেলো হারিস, সালমান আগা, হাসান নেওয়াজ। রান আউটে কাটা পড়লো মোহাম্মদ নাওয়াজ। ৭.৫ ওভারে ৪৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়লো পাকিস্তান। একদিকে ফকর স্বভাভসুলভ ছন্দে রানের চাকা সচল রাখতে সক্রিয় ছিল। খুশদিল শাহ বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু একমাত্র ফকর (৩৪ বলে ৪৪) রান করা ছাড়া আর কেউ কোমর সোজা করে দাঁড়াতেই পারেনি। এই সময় কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ উইকেটের সহায়তা কাজে লাগিয়ে দারুন কিপ্টে বোলিং করে। ফকর ৪৪ রান করে রান আউটে কাটা ফোরলে যুদ্ধ সাঙ্গ হয় পাকিস্তানের। শেষ দিকে আব্বাস আফ্রিদি কিছু আক্রমণাত্মক স্ট্রোকস খেলে দলের ইনিংস ১০০ পেরোয়। ১১০ রানে সাঙ্গ হয় পাকিস্তান ইনিংস। উইকেট অবশ্যই ১৭০-১৮০ রানের উপযোগী ছিল না। তবু এই উইকেটে ১১০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার জন্য পাকিস্তান দায়িত্বহীন ব্যাটিং দায়ী করা যেতে পারে। বাংলাদেশের হয়ে সফল বোলার ছিল তাসকিন (৩/২২), মুস্তাফিজ (২/৬) তিনজন ব্যাটসম্যান রান আউটে কাটা পড়েছিল।

বাংলাদেশ ইনিংসেও শুরুতে দ্রুত তানজিদ তামিম আর লিটন ফিরে গেলে কিছুটা সংশয়ের সৃষ্টি হয়। কিন্তু পারভেজ ইমন (৫৬*) আর তাওহীদ হৃদয় (৩৬) তৃতীয় উইকেটে ৭৩ রান যোগ করে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়। ১৫.৩ ওভারে ১১২/৩ রান সংগ্রহীত হওয়ায় ২৭ বল হাতে রেখে বাংলাদেশ ৭ উইকেটের দাপুটে জয় তুলে নেয়। পরিবর্তিত বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনে দারুন আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে। পাকিস্তান কিন্তু এসেছে নানা কারণে ওদের প্রথম সারির বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, শাহীন আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হারিস রউফ, শাদাব খানকে দেশে রেখে। দলে বেশ কিছু নবীন খেলোয়াড় থাকলেও সবাই  কিন্তু পিএসএলে প্রমাণিত সফল খেলোয়াড়। কিন্তু কালকে ওদের কৌশলটা সঠিক মনে হয়নি। হয়ত সিরিজে ঘুরে দাঁড়াতে প্রানপন চেষ্টা করবে। বাংলাদেশকে নিজেদের কাজটা যথাযথভাবে করে যেতে হবে। আরো একটি সিরিজ জয় বাংলাদেশকে শুধু আগামী টি ২০ বিশ্বকাপে প্রস্তুতির পথেই এগিয়ে দিবে না এই ফরম্যাটে নিজেদের রাঙ্কিং উন্নত করবে।

পাকিস্তান বাংলাদেশ প্রথম টি ২০ ম্যাচ

পাকিস্তান ১১০ অল আউট (ফকর জামান ৪৪, আব্বাস আফ্রিদি ২২, খুশদিল শাহ ১৭, তাসকিন আহমেদ (৩/২২), মুস্তাফিজুর রহমান ( ২/৬), তানজিম সাকিব (১/২০)।

বাংলাদেশ ১১২/৩ (পারভেজ ইমন ৩৯ বলে অপরাজিত ৫৬, তাওহীদ হৃদয় ৩৬, সালমান মির্জা ২/২৩ )

বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।

সেরা খেলোয়াড় পারভেজ ইমন

বাংলাদেশ ১-০ অগ্রগামী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

13 − 5 =