পেশাদার ইংলিশ লায়ন্সদের কাছে টিম ইন্ডিয়ার নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ

সালেক সুফী

যেমনটি লিখেছিলাম আজ সকালে। মানুষ ভাবে এক ঈশ্বর নির্ধারণ করেন অন্য।  আজ এডিলেড ওভালে টি২০ বিশ্বকাপ ২০০২ সেমিফাইনালে হেসে খেলে ১০ উইকেটে ভারতকে বিপর্যস্ত করে হারিয়ে ফাইনালে উন্নীত হলো ইংল্যান্ড। টস জয় করে প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ দিয়েছিলো ভারতকে ইংল্যান্ড। অপেক্ষাকৃত ধীর গতির গ্রিপিং টার্নিং উইকেটে ১০ ওভার এমনকি ১৫ ওভার পর্যন্ত বেঁধে রেখেছিলো ভারতীয়দের বজ্র আঠুনিতে ইংল্যান্ড। ভিরাটের ৫০ আর শেষদিকে হার্দিক পান্ডিয়ার মারকুটে ৬৩ রানের সুবাদে ১৬৮/৬ সংগ্রহ করেছিল ভারত। কিন্তু টি২০ ক্রিকেটের দুই মারকুটে ওপেনার আলেক্স হেলস (৮৬*) আর যশ বাটলার ( ৮০*)  যে কোনো উইকেটে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ গড়ে ১০ উইকেটে হেসে খেলে জয় করলো ম্যাচ।

বিশ্বজোড়া ভারতীয়দের সঙ্গে হয়তো আইসিসির স্বপ্ন ছিল ভারত এবারে অন্তত ফাইনাল খেলবে। পরিস্থিতি আর প্রেক্ষাপট আরো একটি ভারত পাকিস্তান ব্লকবাস্টার দ্বৈরথের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। বাটলার ম্যাচের আগেই ঘোষণা দিয়েছিলো অনেকের স্বপ্ন ভারত-পাকিস্তান ফাইনালের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিবে ইংল্যান্ড। বাস্তবে হলো তাই।

এখন এমসিজিতে ১৯৯২ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পুনরাবৃত্তি হবে। ইংল্যান্ড খেলবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। নিরপেক্ষ ক্রিকেট প্রেমিকরা টুর্নামেন্ট জুড়ে ভারতের পক্ষে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে বিরক্ত ছিল। অনেকের ধারণা ছিল ঈশ্বরের বিচারে বঞ্চিত হবে ভারত।  হলো তাই।  আজ এডিলেড ওভালের ৮০% ভারতীয় সমর্থকদের কাঁদিয়ে লজ্জাজনক হার উপহার দিলো ভারতকে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ ফাইনাল এখন ভারতীয়দের শুধুমাত্র দর্শক হয়েই দেখতে হবে।

দিনের প্রথম বল থেকে ইংল্যান্ড দলের শরীরী ভাষা অনেক সুদপ্রসারী কিছু ছিল। টস জয় করে অনেক হিসাব নিকাশ করেই ভারতীয়দের ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানালো বাটলার। ফিট না থাকায় মালান আর উড খেলেনি ম্যাচ। বলতেই হবে ইংল্যান্ড দলনায়ক অত্যন্ত সুচারু ভাবে বোলিং সম্পদ ব্যবহার করেছে।

শুরুতেই ফর্মে থাকা রাহুলকে গতি আর সুইঙের মিশালে ফিরিয়ে দেয় ওকস। বিরাট আর কোহলি দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪৭ রান যোগ করলেও খুব একটা স্বস্তিতে খেলেনি। বিশেষত দুই ইংলিশ স্পিনার আদেল রাশিদ ৭ ওভার বোলিং করে মাত্র ৪১ রান দেয়ায় ১৫ ওভার পর্যন্ত স্থবির ছিল ভারত। সূর্য কুমার যাদব আজ আদৌ সুবিধা করতে পারেনি। বিরাট বিরাটের মতো খেলে আউট হয়ে যায় আরো একটি ৫০ করে। যা কিছু খেলেছে হার্দিক পাণ্ড্য।  ওর মারকুটে ৬৩ রানের সুবাদে ১৬৮/৬ উইকেটে করতে পেরেছিলো ভারত।

আজ বিশ্ব ক্রিকেট দেখলো কিভাবে কট্টর পেশাদার ইংলিশ ওপেনার যুগল উঁচু মার্গের ব্যাকরণ সম্মত ক্রিকেট খেলে ভারতের দর্প চূর্ণ করলো। হেলস (৪৭ বলে অপরাজিত ৮৬ ) আর বাটলারের (৪৯ বলের অপরাজিত ৮০ ) ১৭০ রেকর্ড পার্টনারশিপ ১০ উইকেটের জয় এনে দিলো ইংল্যান্ডকে।

আজ সকালে থেকে  দুপুরে এডিলেড ওভালে সমাগত ৮০% ভারতীয় স্বপ্নেও ভাবেনি এভাবে নাস্তানাবুদ হবে ভারত। অনেকেই মনে করেন এমন একটি নাকানি চুবানি, ক্রিকেট পরিভাষায় বাটারিং ভারতের প্রাপ্য ছিল। খেলার শেষ পর্যায়ে সুনীল গাভাস্কার, রবি শাস্ত্রীদের কণ্ঠ অনেকটাই মাঠজুড়ে ভারতীয় দর্শকদের মতোই ম্রিয়মান ছিল।

জানিনা কোন বিবেচনায় এই টুর্নামেন্টে চাহালকে খেলান হয়নি. ব্যাটিং যাই হোক ভারতের বোলিং ছিল নিম্ন মানের। ওদের বোলিং নিয়ে ছেলে খেলা খেলেছে ইংল্যান্ড। ১৬ ওভারে ১৩ চার আর ১ও ছয় প্রমাণ করে ইংলিশ লায়ন্স ছিঁড়ে ফুঁড়ে খেয়েছে ভারতীয় মেষদের।

এখন সবাই থাকবে এমসিজিতে ইংল্যান্ড পাকিস্তানের তুখোড় ফাইনাল দেখার অপেক্ষায়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

19 − four =