প্রত্যাশার থেকেও বেশি পেয়েছি এবারের কপে: জিয়াউল হক

আফরোজা আখতার পারভীন

২৭তম কপ থেকে যতটুক আশা করেছিলাম, তার থেকেও বেশি পেয়েছি আমরা। যে সিদ্ধান্তগুলো এসেছে, তার মধ্যে কয়েকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও আশাপ্রদ। বিশেষত, দু’তিনটি অর্জন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিশ্ববাসীর জন্য। এর মধ্যে লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল গঠনের ব্যাপারে একটা সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, এ তহবিল গঠনের যে বিষয়ে আমরা গত ১৫ বছর ধরে কথা বলে আসছিলাম। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে বিষয়টা খুবই গুরুত্ব পেয়েছে। সে মতে, এবার এটা প্রস্তাব হিসেবে উঠেছে। আশার কথা যে, এ তহবিলের অর্থ কোত্থেকে আসবে, কারা কারা টাকা দিবেন, সে বিষয়েও একটা ট্রানজিশনাল কমিটি গঠন হয়েছে।

বিসিপিসিএল-ইপি ক্লাইমেট টকস-এ এসব কথা বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক। তিনি বলেন, বিষয়টাকে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট দেশকে তাদের নমিনেশনগুলো আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। যেন ট্রানজিশনাল কমিটি আগামী জানুয়াররি থেকেই কাজ শুরু করতে পারে। এই ট্রানজিশনাল কমিটি আগামী কপ১৮-এ রিপোর্ট পেশ করবে।

তিনি জানান, এবার কপে বেশ কিছু নতুন প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গেছে। উন্নত দেশগুলো সেসব প্রতিশ্রুতির বিষয় সম্মত হয়েছে। যেমন,  অভিযোজন তহবিল পেয়েছে ২৬০ মিলিয়ন ডলার, এনডিসি ফান্ড পেয়েছে ৭০.০৬ মিলিয়ন ডলার। জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলও বড় অর্জন পেয়েছে। গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসালিটি ফান্ডকে দেওয়া হয়েছে ৫.৩০ বিলিয়ন ডলার। এছাড়াও বেশ কিছু শর্ত শিথিল করা হয়েছে। যেমন পৃথিবীর উষ্ণতা ১.৫ সেন্টিগ্রেড রাখার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এসেছে। আগে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের হার ৪৫ শতাংশ কমানোর কথা বলা হলেও এবার তা ৪৩ শতাংশ করা হয়েছে।

এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগজিন আয়োজিত অনুষ্ঠানে মো. জিয়াউল হক বলেন, তবে লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলের বিষয়ে কিছু ঘোরপ্যাচ আছে। প্রথমত, সময়টা খুবই কম দেওয়া হয়েছে। মাত্র এক বছর। এছাড়া ‘নিউ অ্যান্ড এডিশননাল’ টার্ম ব্যবহার করা হয়েছে। এই টার্মের কারণে জটিলতা তৈরি হবে। ‘নতুন ও অতিরিক্ত’ শর্তে কোন কোন দেশকে যুক্ত করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। এখানে স্বচ্ছতার বিষয় আছে। ট্রান্সপারেন্সি অর্জন হবে কিনা তা দেখার বিষয় । আমরা ভয় পাচ্ছি যে, নিউ অ্যান্ড এডিশনের কথা বলে, অভিযোজন তহবিল থেকে কিছু টাকা লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলে দিয়ে দেয় কি-না। এগুলো খুব সতর্কভাবে মনিটর করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলে দাতা হলো মূলত উন্নত দেশগুলো। তারা যে সব ‘নতুন ও অতিরিক্ত’ দেশের নাম বা তালিকা দিবেন, দেখতে হবে তাদের সামর্থ্য ও সদিচ্ছা আছে কি না। দেখার বিষয় যে, এটা আবার আগের ১০০ বিলিয়ন ডলারের মত হয়ে যায় কি-না।

জনাব হক বলেন, এখানে যে ১৪টি উন্নয়নশীল ও ১০টি উন্নত দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে হবে, তারা যেন এক বছরের মধ্যে রিপোর্টটা দিতে পারেন। যেন ২০২৪ সালের মধ্যে এ তহবিল কাজ করতে পারে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা আরও বাড়াতে হবে। ২০২২ সাল পর্যন্ত যতগুলো এনডিসি জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে অনেক ঘাটতি আছে। গ্লাসগো চুক্তিতে আছে যেসব দেশ অধিক কার্বন নিঃসরণ করে, প্রতি বছর তাদের এনডিসি পর্যালোচনা করতে। এ কথাগুলো প্যারিস চুক্তিতেও আছে। কিন্তু এবার আমরা তা ওয়ার্ক প্রোগ্রামে রাখতে পারিনি যেসব দেশ উচ্চ মাত্রার কার্বন নিঃসরণ করে তাদের চাপে। চীন ও আরব গ্রুপ বা সৌদি আরবের চাপে। তাদের চাপেই তিন নম্বর অনুচ্ছেদ রাখতে হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, কোনভাবেই নতুন কোন টার্গেট তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, উন্নত দেশগুলোর বাইরেও বেশ কিছু দেশ আছে, যাদের সামর্থ আছে জলবায়ু তহবিলে অর্থ দেওয়ার। এটা নির্ভর করছে তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছার উপর। যদিও যুদ্ধ একটা নতুন পরিস্থিতি তৈরি করছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং অন্যরা তাদের অর্থ অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রযুক্তি হস্তান্তর খাতে যথেষ্ট ঘাটতি এখনও আছে। আমাদের কৃষিকে আমরা প্রযুক্তি নির্ভর করতে পারিনি। এ খাতে বাংলাদেশকে আরও কাজ করতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আরও এগিয়ে আসতে হবে। তাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন করতে হবে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোও তা চাচ্ছে। আশার কথা হলো আমরা এ ব্যাপারে আলো দেখতে পাচ্ছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

sixteen − seven =