প্রথম দিন শেষে রান পাহাড়ে চাপা পড়েছে বাংলাদেশ

সালেক সুফী

নিস্প্রাণ উইকেট। বাঁচা মরার চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই নবীন ব্যাটসম্যান টনি ডি জর্জি (১৪১*) এবং ট্রিস্টান স্টাব (১০৬) যুগল সেঞ্চুরির সুবাদে ৩০৭/২ করে বাংলাদেশকে রান পাহাড়ে চাপা দিয়ে সিরিজ ধবল ধোলাইয়ের হুমকি দিয়েছে। ওদের যোগাযোগে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ২০২ রান সংগ‍ৃহীত হওয়ায় বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।

জর্জি এবং স্টাব দুজনই নিজেদের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম শত রান হিসেবে অবস্যই চট্টগ্রামকে স্মরণে রাখবে। পরিস্থিতি এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কিভাবে ব্যাটিং করতে হয় তার অনুপম প্রদর্শনী ছিল এই জুটির ব্যাটিং। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও এই জুটির ব্যাটিং থেকেও অনেক কিছুই শিখতে পারে।

চট্টগ্রামের সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বোলারদের জন্য ছিল না কিছুই। তবুও বাংলাদেশ স্পিন এবং পেস বোলাররা পরিশ্রম করে কিছু সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। এহেন উইকেটে হাফ চান্স  গুলো লুফে নিতে হয়। সেখানে কয়েকটি ক্যাচ এবং একটি সহজ স্টাম্পিং সুযোগ হারায় বাংলাদেশ।

টস জয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা দিনশেষে এখন চালকের ভূমিকায়। আজকের খেলার বৈশিষ্ট্য ছিল দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে টনি ডি জর্জি এবং ট্রিস্টান স্ট্যাবের  অনবদ্য ২০২ রান। অপরিচিত পরিবেশে উষ্ণ আর্দ্র পরিবেশে ব্যাটিং করা সহজ ছিল না। অপেক্ষাকৃত নবীন দুই ব্যাটসম্যান পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের প্রয়োগ করে উপমাধর্মী ব্যাটিং করেছে।

এই অবস্থায় দ্বিতীয় দিনে অতিথি দল ৫০০র অধিক রান করলে বাংলাদেশের জন্য টেস্ট পরাজয় এবং সিরিজ ধবল ধোলাই এড়ানো দুরূহ হয়ে যাবে। এই টেস্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় দিনে প্রথমে ভালো বোলিং, ফিল্ডিং করে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ধরা ছোয়ার মাঝে সীমিত রাখতে হবে। ভালো ব্যাটিং করে ম্যাচে টিকে থাকতে হবে। তিন পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশের জন্য কাজটি যে সহজ নয় সেটি বলাই বাহুল্য।

০-১ পিছিয়ে থেকে সিরিজ পরাজয় তথা ধবল ধোলাইয়ের মিশনে বাংলাদেশ অসুস্থতার জন্য লিটন এবং অনুশীলনের সময় মাথায় আঘাত পাওয়ায় জাকের আলী অনিককে পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।ওদের স্থানে দলে  জাকের হাসান এবং মেহেদী ইসলাম অঙ্কনের অভিষেক হয়। টিম কম্বিনেশনের কারণে স্পিনার নাঈম হাসানের স্থানে নেওয়া হয় নাহিদ রানাকে।

ব্যাটিং স্বর্গে টস হেরে বাংলাদেশকে ফিল্ডিং করতে হয়। এহেন উইকেটে সুযোগ আসে কদাচিৎ। আর সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলে দলকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের সূচনায় আজকের ম্যাচের নায়ক টনি ডি জর্জির ক্যাচ ৬ রানের মাথায় ফেলে দেয় এই ম্যাচে অভিষিক্ত তরুণ মেহেদী ইসলাম অঙ্কন।

দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী জুটি অনায়াসে ব্যাটিং করে প্রথম উইকেট জুটিতে ৬৯ রান করার পর তাইজুলের বলে প্রলুব্ধ হয়ে ৩৩ রানে ফিরে যায় অধিনায়ক এইডেন মারকরাম। শুরু হয় জর্জি এবং স্ট্যাবের ম্যারাথন দ্বিতীয় উইকেট জুটি।

নিস্প্রাণ উইকেটে তাইজুল এবং হাসান মাহমুদ কিছু সুযোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু অঙ্কন আবারো তাইজুলের বলে জর্জিকে সহজ স্টাম্পিং করতে ব্যর্থ হয়। স্ট্যাবের ক্যাচ ফস্কে যায় স্লিপ অঞ্চলে। কিন্তু এরই ম্যাচে দাপুটে ব্যাটিং করে জর্জি এবং স্টাব বাংলাদেশকে ব্যাক ফুটে নিরে যায়।

প্রচণ্ড গরমে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়া জর্জি জীবনের প্রথম শতরান ( ১৪১*) করে। ১০ চার এবং৩ ছয় সজ্জিত করে তার ইনিংস। পক্ষান্তরে স্টাব  অধিকতর সতর্কতার সাথে খেলে ১৯৮ বলে ১০৬ করে তাইজুলের ইসলামের বলে আউট হয়।

আলোক সল্পতায় ৮১ ওভার শেষে খেলা শেষ হবার সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ৩০৭/২।  দিনশেষে জর্জি ১৪১ এবংবেডিংহাম ১৮ রানে অপরাজিত থাকে। বাংলাদেশের হয়ে উইকেট দুটি সংগ্রহ করে তাইজুল ইসলাম।

দ্বিতীয় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা চাইবে ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে ম্যাচ ছাড়া করা। স্কোর ৫০০ -৫৫০ হয়ে গেলে ম্যাচ বাঁচানো এবং ধবল ধোলাই এড়ানো বাংলাদেশের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × five =