বড়দিনের ইতিকথা

রোজ অ্যাডেনিয়াম

মিষ্টি একটা সকাল। সূর্য কেবল উঁকি দিচ্ছে আকাশে। ঘুম ভাঙে লয়েডের। মা আরও আগে ঘুম থেকে জেগেছেন। মজার মজার খাবারের ঘ্রাণ আসছে রান্না ঘর থেকে। পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে। ফুলদানিতে রাখা হয়েছে তাজা রজনীগন্ধা। ফুলের ঘ্রাণে ঘর ভরে গেছে। বাড়ির বাইরে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সারা রাত ধরে জ্বলেছে বাতিগুলো। আজ রাতেও জ্বলবে।

এখন স্নানঘরে ঢুকবে লয়েড। গোসল সেরে এসে নতুন জামা কাপড় পরবে। তারপর গির্জায় যাবে প্রার্থনা করতে। আজ বড়দিন। ছোট্ট বন্ধু লয়েড তুহিন হালদারের খুশির সীমা নেই। আজ সারাদিন দাদুর হাত ধরে ঘুরে বেড়াবে সে। অনেক বন্ধুদের বাড়ি যাবে বেড়াতে। ওর বন্ধুদেরও বাড়িতে ডেকেছে সন্ধ্যায়। ঝটপট তৈরি হয়ে নেয় লয়েড। দাদুর হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।

খানিকটা দূরেই গির্জা। হাঁটতে হাঁটতে দাদুর সঙ্গে গল্প জুড়ে দেয় লয়েড। বড়দিন কবে থেকে শুরু হলো দাদু বলতে শুরু করেন দাদু, ‘মুসলমানদের ঈদ, সনাতন ধর্মের শারদীয় উৎসবের মতো খ্রিষ্টান ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন, খ্রিস্টমাস কিংবা ক্রিসমাস। প্রতিবছর ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ সারাবিশ্বে পালিত হয় এই উৎসব। খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারিরা এই দিন নিজেদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন একে অপরের সঙ্গে। নানা রঙের আলোয় সেজে ওঠে ঘর-বাড়ি, গির্জা। বড়দিনের অন্যতম বড় আকর্ষণ হলো সান্তা ক্লজ। ২৫ ডিসেম্বরের তাৎপর্য কী সান্তা ক্লজ কে সব গল্পই শোনাব তোমাকে।’

২৫ ডিসেম্বরই কেন বড়দিন

‘দুই হাজার বছরেরও পূর্বে মাতা মেরির গর্ভে জন্মেছিলেন যিশু। মেরি ছিলেন ইসরাইলের নাজারেথবাসী যোসেফের বাগদত্তা। তিনি পেশায় ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। একদিন এক স্বর্গদূতের কাছে মেরি জানতে পারেন, মানুষের মুক্তির পথ দেখাতে তার গর্ভে আসছেন ঈশ্বরের পুত্র। দূত শিশুটির নাম যিশু রাখার নির্দেশ দেন। স্বর্গদূতের এ কথা শুনে দারুণভাবে বিচলিত হন মেরি। তিনি তাকে বলেন, পিতা ছাড়া তিনি কীভাবে সন্তানের জন্ম দেবেন। যোসেফ যখন জানতে পারেন মেরি সন্তানসম্ভবা, তখন তাকে আর বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেন। ঈশ্বরের দূত স্বপ্নে তাকে দেখা দিয়ে বলেন, মেরি গর্ভবতী হয়েছে পবিত্র আত্মার প্রভাবে এবং তার যে সন্তান হবে তা ঈশ্বরেরই পরিকল্পনা। যোসেফ যেন মেরিকে সন্দেহ না করে তাকে গ্রহণ করেন। তখন যোসেফ দূতের কথামতো মেরিকে বিয়ে করেন। এরপর অনেক ঘটনা ঘটে যায়। অবশেষে ফিলিস্তিনের বেথেলহেমে এক জরাজীর্ণ গোয়ালঘরে এক যিশুর জন্ম হয়। ওই দিনটি ছিল ২৫ ডিসেম্বর। যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন। এই দিনেই পালিত হয় খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন বা ক্রিসমাস ডে।

বড়দিনের ইতিকতা

দাদু বলতে শুরু করলেন বড়দিনের ইতিহাস, ‘দু’হাজার বছর আগে যিশুর জন্ম হলেও বড়দিন পালন শুরু হয় অনেক পরে। দ্বিতীয় শতাব্দির দুজন খ্রিষ্টধর্মগুরু ও ইতিহাসবিদ ইরেনাউস ও তার্তুলিয়ান বড়দিনকে খ্রিষ্টানদের উৎসব তালিকায় যুক্ত করেন। ২০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে মিসরে প্রথম বড়দিন পালন করা হয়। গ্রিক কবি, লেখক ও ইতিহাসবিদ লুসিয়ান তার সময়ে ক্রিসমাস পালিত হতো বলে উল্লেখ করেছেন। ২২১ খ্রিস্টাব্দে মিসরের একটি দিনপঞ্জিতে লেখা হয়েছিল, মাতা মেরি ২৫ মার্চ গর্ভধারণ করেন। এ বিষয়টি রোমান ক্যালেন্ডারেও ছিল। এ ক্যালেন্ডারে সূর্যদেবতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উৎসবের কথাও রয়েছে। সে হিসাবে গর্ভধারণের নয় মাস পর ২৫ ডিসেম্বর যিশু জন্মগ্রহণ করেন বলে খ্রিষ্টান ধর্মগুরুরা মত দেন।

৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোমে সর্বপ্রথম বড় আকারে বড়দিন উদ্যাপন শুরু হয় ‘স্যাটার্নালিয়া’ উৎসবকে কেন্দ্র করে। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য দেশেও। ৩৫৪ খ্রিস্টাব্দে রোমান পঞ্জিকায় ২৫ ডিসেম্বর দিনটিকে যিশুর জন্মদিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৪৪০ সালে পোপ একে স্বীকৃতি দেন। মধ্যযুগে বড়দিন উৎসব জনপ্রিয়তা পায়। ৮০০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর জার্মানির রাজা রোমান সম্রাট হিসেবে গির্জা কর্তৃক মুকুট ধারণ করেন। ১০০০ খ্রিস্টাব্দে রাজা সেন্ট স্টিফেন হাঙ্গেরিকে খ্রিষ্টান রাজ্য ঘোষণা করেন। ১০৬৬ খ্রিস্টাব্দে রাজা উইলিয়াম ইংল্যান্ডের মুকুট ধারণ করেন। ক্রিসমাস উৎসব প্রসারে এগুলো বেশ প্রভাব ফেলে।

তবে প্রটেস্ট্যান্ট সংস্কারের সময় একদল লোক বড়দিন পালনের বিরোধিতা শুরু করে। তাদের অভিযোগ, উৎসবটি পৌত্তলিক এবং ধর্মীয়ভাবে এর কোনো তাৎপর্য নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইংল্যান্ডের গোঁড়া শাসকরা ১৬৪৭ সালে বড়দিন উৎসব পালন নিষিদ্ধ করে। অবশ্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর এ নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। বর্তমানে শুধু ক্যাথলিক নয়, প্রটেস্ট্যান্টসহ সব খ্রিষ্টানরাই এ উৎসব পালন করে। ভারতবর্ষে প্রথম ক্রিসমাস উদ্যাপিত হয় ১৬৬৮ সালে। কলকাতা নগরী গোড়াপত্তনকারী জোব চার্নক প্রথম বড়দিন পালন শুরু করেন বলে জানা যায়। ওই বছর হিজলি যাওয়ার পথে সুতানুটি গ্রামে আসার পর চার্নক খেয়াল করলেন, বড়দিন এলো বলে! সেখানেই যাত্রাবিরতি করে বড়দিন পালন করেন চার্নক। সেই থেকে ভারতবর্ষে বড়দিন পালিত হয়।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালিত হলেও রাশিয়া, জর্জিয়া, মিসর, আর্মেনিয়া, ইউক্রেন ও সার্বিয়ায় ব্যতিক্রম। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের জন্য এ দেশগুলোতে ক্রিসমাস পালিত হয় ৭ জানুয়ারি। উত্তর ইউরোপীয়রা যখন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে, পৌত্তলিকতার প্রভাবে ক্রিসমাস শীতকালীন উৎসবের মতো পালন হতো। ফলে সেখানকার এ উৎসবে শীত উৎসবের অনুষঙ্গও যুক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত স্ক্যান্ডিনেভিয়রা এ দিনটিকে ‘জুন’ উৎসব বলে।’

সান্তা ক্লজের গল্প

গির্জার গেটের কাছে চলে এসেছে লয়েড ও তার দাদু। লাল রঙের পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছেন একজন। মুখভরা শুভ্র দাড়ি। মাথায় চোঙওয়ালা লাল টুপি। ‘দাদু ওই যে দেখো সান্তা ক্লজ’! এই সান্তাক্লজেরও একটা দারুণ গল্প আছে। শুনবে! বলো শুনি। বলতে শুরু করলেন দাদু, ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের দিকে লাল জামা, টুপি ও সাদা চুল-দাড়িওয়ালা লোকটির ইতিহাসের সন্ধান মেলে। কিংবদন্তি চরিত্রটি আসলে ছিলেন সেন্ট নিকোলাস নামের একজন ধর্মযাজক। এশিয়ার মাইনর বর্তমান তুরস্কের পাতারা নামক অঞ্চলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুবই মহৎ ও দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। তার মহানুভবতার জন্য সবাই তাকে ভালোবাসতো। একবার দাসী হিসেবে বিক্রি হওয়া তিনটি মেয়েকে রক্ষা করে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন তিনি। বিয়ের সমস্ত খরচ নিজেই করেন। নিকোলাস নামের এই ব্যক্তি ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ও মধ্যরাতে ছেলেমেয়েদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে উপহার দিতেন। তিনি অবশ্য এমন লাল পোশাক পরে ঘুরতেন না।

১৮২৩ সালে ক্রিসমাস ডে উপলক্ষ্যে আমেরিকার বিখ্যাত লেখক ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুরের লেখা ‘অ ারংরঃ ভৎড়স ঝঃ. ঘরপযড়ষধং’ কবিতায় এই পোশাকের উদ্ভাবন হয়। ওই কবিতার চিত্রকল্পে দেখা যায় এক সান্তা আটটি হরিণটানা গাড়িতে করে উড়ে বাচ্চাদের উপহার দিচ্ছেন। ১৮৮১ সালে থমাস ন্যাসট নামক একজন আমেরিকান কার্টুনিস্টের আঁকা ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সান্তা ক্লজের এই সাজ ব্যাপক খ্যাতি পায়। সেখানে সান্তা হরিণটানা গাড়িতে চড়ে উপহার নিয়ে বাচ্চাদের উপহার দেওয়ার চিত্র ফুটে ওঠে, এই ছবিটি গোটা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এভাবেই সারা বিশ্বে ক্রিসমাস ডে’র আগের রাতে বাচ্চাদের বাসায় বাসায় উপহার দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়। আর বাচ্চারা বিশ্বাস করে, সান্তা জাদু দিয়ে উড়ে এসে তাদের নানা রকম উপহার দিয়ে যান।

আসলে সান্তা ক্লজ বা সান্টা ক্লজ পাশ্চাত্য সংস্কৃতির একটি কিংবদন্তি চরিত্র। তিনি সেইন্ট নিকোলাস ফাদার খ্রিষ্টমাস, ক্রিস ক্রিঙ্গল বা সাধারণভাবে ‘সান্টা’ নামে পরিচিত। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, তিনি খ্রিষ্টমাস ইভ বা ২৪ ডিসেম্বর তারিখের সন্ধ্যায় এবং মধ্যরাতে অথবা ফিস্ট ডে বা ৬ ডিসেম্বর তারিখে (সেন্ট নিকোলাস ডে) ভালো ছেলেমেয়েদের উপহার দিয়ে যান। এক কিংবদন্তি অনুসারে, তিনি সুদূর উত্তরে এক চিরতুষারাবৃত দেশে বাস করেন। আবার আমেরিকান উপাখ্যান অনুসারে, তার নিবাস উত্তর মেরুতে। অন্যদিকে ফাদার খ্রিষ্টমাসের নিবাস মনে করা হয় ফিনল্যান্ডের ল্যাপল্যান্ড প্রদেশের কোরভাটুনটুরি পার্বত্য অঞ্চলকে। সান্তা ক্লজ তার স্ত্রী, অসংখ্য জাদুক্ষমতাসম্পন্ন এলফ, এবং আট-নয়টি উড়ন্ত বলগাহরিণের সঙ্গে বাস করেন। অপর একটি উপাখ্যান অনুসারে, সান্তা ক্লজ সারা বিশ্বের শিশুদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে তাদের আচরণ অনুযায়ী দুই ভাগে ভাগ করেন। তারপর খ্রিষ্টমাস ইভের রাতে তিনি লক্ষ্মী ছেলেমেয়েদের খেলনা, লজঞ্চুস ও অন্যান্য উপহার দেন এবং কখনও কখনও দুষ্টু ছেলেমেয়েদের কয়লা দিয়ে যান। এই কাজ তিনি সম্পন্ন করেন তার এলফ ও সেøজগাড়ির বাহক বলগা হরিণগুলির মাধ্যমে।’

ক্রিসমাস ট্রি

আধুনিক ক্রিসমাস ট্রির উদ্ভব হয়েছিল রেনেসাঁর সময় আধুনিক জার্মানিতে। ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে মার্টিন লুথার ক্রিসমাস ট্রিতে আলোকসজ্জা করার মাধ্যমে ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর প্রচলনটি জনপ্রিয় করে তোলেন। তিনি সর্বপ্রথম একটি চিরহরিৎ গাছে আলোকিত মোমবাতি যুক্ত করেছিলেন বলে জানা যায়।

বড়দিনের কার্ড

১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ইংল্যান্ডে জে সি হসলি প্রথম বড়দিনের কার্ড দিয়ে তার বন্ধু স্যার হেনরিকে শুভেচ্ছা জানান। কার্ডটির শুভেচ্ছা বাণীতে তিনি লিখেছিলেন, ‘আ মেরি ক্রিসমাস অ্যান্ড হ্যাপি নিউ ইয়ার টু ইউ’। ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ১ হাজার কপি কার্ড ছাপানো হয়েছিল এবং রঙ লাগিয়ে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছিল। ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের পর বড়দিনের কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়ের প্রচলনটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ইম্পিরিয়াল পেনি পোস্টেজের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে একটি কানাডিয়ান ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ক্রিসমাস গ্রিটিংস স্ট্যাম্প প্রকাশ করা হয়। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের পর আরও অনেক দেশে বড়দিনের ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয় এবং তা জনপ্রিয় প্রথা হয়ে ওঠে।

সম্রাট আকবরের বড়দিন ভাবনা

বাংলার প্রেক্ষাপটে দারুণ এক সময়ে বড়দিন উদ্যাপন করা হয়। এই সময়ে গ্রামবাংলায় কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে ও নবান্ন উৎসব করা হয়। মোগল দরবারে সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৬) সময়েও বড়দিন উদ্যাপন করা হতো। আকবর গোশালা সাজানোর অনুমতি দিতেন এবং নিজেও গোশালা পরিভ্রমণ করার মাধ্যমে যিশুর জন্মরহস্য নিয়ে ভাবতেন।

বিশ্বকবির আয়োজনে বড়দিন

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তা-চেতনায় যিশুর জন্মরহস্য ও তার জীবনাদর্শ বিভিন্ন লেখা ও কবিতার মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বোলপুরে শান্তিনিকেতনে প্রতিবছর বড়দিন উদ্যাপন করা হতো। রবীন্দ্রনাথ খ্রিষ্ট নামক গ্রন্থে প্রকাশিত ‘বড়োদিন’ প্রবন্ধে আত্মজিজ্ঞাসামূলক প্রশ্ন রেখেছেন, যা বর্তমান বাস্তবতায় প্রযোজ্য: ‘আজ তাঁর জন্মদিন এ কথা বলব কি পঞ্জিকার তিথি মিলিয়ে অন্তরে যে দিন ধরা পড়ে না সে দিনের উপলব্ধি কি কাল গণনায় যেদিন সত্যের নামে ত্যাগ করেছি, যেদিন অকৃত্রিম প্রেমে মানুষকে ভাই বলতে পেরেছি, সেই দিনই পিতার পুত্র আমাদের জীবনে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেই দিনই বড়দিন যে তারিখেই আসুক’। ‘শিশুতীর্থ’ কবিতায় শিশু যিশুর বর্ণনায় রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘মা বসে আছেন তৃণশয্যায়, কোলে তাঁর শিশু,/ উষার কোলে যেন শুকতারা।/ উচ্চস্বরে ঘোষণা করলে- জয় হোক মানুষের,/ ওই নবজাতকের, ওই চিরজীবিতের’।

বড় দিনের গান

জিঙ্গেল বেলস জিঙ্গেল বেলস/ জিঙ্গেল অল দ্য ওয়ে/ওহ হোয়াট ফান ইট ইস টু রাইড/ইন-অ্যা ওয়ান হর্স ওপেন স্লেজ। জিঙ্গেল বেলস গানের সুর বেজে ওঠা মানেই বড়দিন এসে গেছে। ছেলে থেকে বুড়ো সবার কাছে ক্রিমমাসের সুর মানেই জিঙ্গেল বেলস। ক্রিসমাসের আরও অনেক গান আছে কিন্তু জিঙ্গেল বেলস ‘গোট’, মানে গ্রেটেস্ট অফ অল টাইম। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে জেমস লর্ড পিয়েরপোন্ট লিখেছিলেন জিঙ্গেল বেলস গানটি। ‘দ্য ওয়ান হর্স ওপেনস স্লেজ’ নামে প্রকাশিত হয় গানটি। গানের কথা এবং সুরও ছিল কিছুটা অন্যরকম। তখন এই গানের ক্রিসমাস উদ্যাপনের সঙ্গে কোনও যোগ ছিল না। এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ১৯৪৩-এর পর থেকে। গানের এক ঘোড়ার স্লেজ গাড়ি হয়ে ওঠে সান্টাক্লজের স্লেজ। ক্রিসমাসের উপহার নিয়ে এই স্লেজ গাড়ি চড়ে আসে। গানটি বাজতে থাকে চার্চ রুমের অন্দরে। ১৮৯৩-তে নিজের ছেলের বাড়িতে প্রয়াত হন লর্ড পিয়েরপোন্ট। তিনি ভাবতেও পারেননি তার লেখা এই গান হয়ে উঠবে সারা পৃথিবীর উৎসব-সংগীত।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: দিবস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve − 10 =