সালেক সুফী
একটি কুড়ি দুটি পাতার নয়নাভিরাম সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ আরো একটি একপেশে ওডিআই সিরিজ জয় করে জাতিকে গর্বিত করলো। প্রথম ম্যাচে ১৮৩ রানের বিশাল জয়ের মাইল ফলক, মুশফিক ব্যাটিং তান্ডবের দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৪৯ রানের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ, শেষ ম্যাচে হাসান মাহমুদ (৫/৩২), এবাদত (৩/২৬), তাসকিন (২/২৬) বোলিং ঝড়ের পর ১০ উইকেটের মাইল ফলক জয়ে সিরিজ জয়
বাংলাদেশের অর্জনের মুকুটে নতুন পালক যোগ করেছে। জয়ের এই ধারা সকল ফরম্যাটে অক্ষুন্ন থাকলে ক্রিকেট বাংলাদেশকে আপন মহিমায় সমুজ্জল রাখবে।
সাদা বল ক্রিকেটের দুই সংস্করণে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি ২০ সিরিজ ধবল ধোলাই দিয়ে শুরু জয় রথ আইরিশদের বিরুদ্ধে ভূমি ধস ওডিআই সিরিজ জয়ে চলমান। প্রথম (১৮৩ রান) এবং শেষ ম্যাচে (১০ উইকেটে) বিশাল ব্যাবধানে জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নতুন মর্যাদায় আসীন করেছে। দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টিতে ধুয়ে না গেলে আরো একটি সিরিজ বাংলাওয়াশ অবধারিত ছিল। বাংলাদেশ দলের আগামী দশকের ক্রিকেটের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে সফরকারী দল। এই ধারা চলমান থাকলে চট্টগ্রামের সাগরিকায় টি ২০ সিরিজেও বাংলাদেশের দাপুটে জয়ের সম্ভাবনা সমুজ্জল।
এমনিতেই বাংলাদেশ ওডিআই সিরিজে ২০১৫ থেকেই শক্তিধর দল। দেশের মাটিতে ভারত, পাকিস্তান, নিউজিলান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্টইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে হেরেছে সিরিজ। ভাগ্যের সহায়তা পেলে বাংলাদেশ জিতে যেত ইংল্যান্ড সিরিজ। নবীন প্রবীনের মণিকাঞ্চনে গড়া দলটিকে লাগসই যত্ন নেয়া হলে বাংলাদেশ আসন্ন ওডিআই বিশ্ব কাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার বলা যায়। সম্পূর্ণ দলে এখন বসন্ত বাতাস। সিরিজ জুড়ে তাসকিন, হাসান মাহমুদ, এবাদত অভূতপূর্ব গতি, সুইং, ইয়োর্কার মেশানো পেস বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছে তার কৃতিত্ব সাদা বিদ্যুৎ অ্যালেন ডোনাল্ড সমানভাবে প্রাপ্য। সবাই বলতো বাংলাদেশ স্পিন নির্ভর দল। মাশরাফি বা মুস্তাফিজ একক নৈপুণ্যে বেশ কিছু ম্যাচ জিতিয়েছে। ঘরের মাঠে পেসি, বাউন্সি উইকেট স্থাপনের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর পেস আক্রমণ সম্পূর্ণ বদলে গেছে। বাংলাদেশ দলের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাওয়া নতুন বাংলাদেশের বৈশিষ্ট।
সিরিজে কাকে রেখে কার কথা বলবো। গোটা সিরিজ জুড়ে অসাধারণ ব্যাটিং করেছে মুশফিক, শান্ত, লিটন, অভিষিক্ত তাওহীদ হৃদয়।ভালো ইনিংস খেলেছে সাকিব, তামিম। আয়ারল্যান্ড বোলারদের তুলোধুনো করে মাটিতে নামিয়েছে। দুই দিনের ব্যাবধানে ৩৩৮, ৩৪৯ দলীয় রানের মেইল ফলক অর্জন করেছে। তাসকিন, হাসান মাহমুদ, এবাদত, মুস্তাফিজ, সাকিব, মিরাজ, নাসুম কত বৈচিত্র ম্যাচ জয়ী বোলিং ইউনিট। এ যেন না চাইতেই বর্ষার ঝোড়ো ঝোড়ো মুখর বারিধারা।এখন গোটা দুই মানসম্পন্ন লেগ স্পিনার পেলেই ষোলোকলা পূর্ণ হবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের এহেন ভরা যৌবন জাতিকে সৃষ্টি সুখের জোয়ারে ভাসিয়েছে।
আয়ারল্যান্ডকে সববেদনা জানানো ছাড়া আর কিছু বলার নেই। ভালো লাগছে সকল বিভ্রান্তি আর সংশয় সন্দেহ পায়ে দলে অজেয় দলীয় সংহতি এখন দৃশ্যমান। এই ধারা অব্যাহত থাক।
সালেক সূফী, আন্তর্জাতিক ক্রিড়া বিশ্লেষক