বাংলাদেশের কোচিং করতে অনীহা হাতুরের!

সালেক সুফী

বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এলোমেলো করে দিয়ে হাতুরাসিংহে এখন পলায়নপর। মিডিয়া থেকে জানা গাছে, কোচিংয়ের দায়িত্বে ফিরতে অনীহা অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশের শ্রীলংকান ক্রিকেট হেড কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহের। নানা অব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন সংকট পথে। বিগত কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অর্জন শুণ্যে কোঠায়। অনেকেই এর মূল কারণ হিসেবে হেড কোচের আনাড়িপনা এবং অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন। বিশেষত সিনিয়র খেলোয়াড়দের সাথে তার শীতল সর্ম্পকের কারণে দলের একতা এবং স্বাভাবিক পারফরমেন্স বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে। আইসিসি বিশ্বকাপ সন্নিকটে এই সময়ে একজন চুক্তিবদ্ধ বিতর্কিত হেড কোচ অনীহা প্রকাশ করলে তাকে বরখাস্ত করা যথাযথ হবে। হাতুরা সিংহের স্বেচ্ছাচারী বেপরোয়া মনোভাবের জন্য সেটি হবে সঠিক পরিণতি।

প্রথম পর্বে যথাযথ দায়িত্ব পালন শেষ না করেই বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন এই বিতর্কিত কোচ। কার্যকালে সিনিয়র ক্রিকেটাদের সঙ্গে ছিল শীতল সম্পর্ক। তার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় অভিমান করেই টি২০ দায়িত্ব ছেড়েছিলো মাশরাফি বিন মুর্তজা। মাহমুদুল্লাহ, তামিম, মুশফিক কারো সাথেই সুসম্পর্ক ছিল না। এমনকি কোচিং স্টাফদের সঙ্গে বনিবনা ছিলনা। পরবর্তীতে নিজ দেশে কোচিং দায়িত্ব থেকে বহিস্কার হবার পর আবার দ্বিতীয় টার্মে ফিরে এসে নতুন করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সিনিয়র ক্রিকেটার এবং কোচিং স্টাফের সঙ্গে। তাঁর বিতর্কিত ভূমিকার কারণে তামিম ওডিআই বিশকাপে খেলেনি। দেশের মাটিতে একটি সিরিজ চলা কালে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। মূলত তার কারণেই মাহমুদউল্লার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন অসময়ে অবসান ঘটার উপক্রম হয়েছিল। হাতুরার সঙ্গে কাজ করতে রাজি না হয়ে চলে যান সফল পেস বোলিং কোচ কিংবদন্তি দক্ষিণ আফ্রিকান অ্যালেন ডোলান্ড, স্পিন কোচ এবং আরো কয়েকজন কোচিং স্টাফ। এমনকি এক সময় তার সমর্থক খালেদ মাহমুদ সুজন তার বিষয়ে নেতিবাচক অভিব্যাক্তি প্রকাশ করে। ক্রিকেট ব্যাক্তিত্ব স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান একাধিক মিডিয়া মন্তব্যে হাতুরা সিংহের দক্ষতা এবং যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মূলত হাতুরা সিংহের আনাড়ি ব্যাবস্থাপনার কারণে ওডিআই বিশ্বকাপে ভরাডুবি ঘটে বাংলাদেশের।

একটি দেশের ক্রিকেট প্রশাসন কোনো ভাবেই কোনো চুক্তিবদ্ধ বিদেশী কোচের ইচ্ছা অনিচ্ছার কাছে জিম্মি হতে পারেনা। ক্রিকেট পরিচালনা করে ক্রিকেট (অপরারেশন), স্কোয়াড নির্বাচন করে নির্বাচক মন্ডলী। অধিনায়ক, হেড কোচ মিলে একাদশ নির্বাচন করে. জানা গেছে সব ক্ষেত্রেই নাক গলিয়েছে হাতুরা সিংহে। তামিমের সঙ্গে শীতল সম্পর্কের কথা সবার জানা। এমনকি সাকিবের সাথে তার বনিবনা হয়নি।

বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর একটি টেভিশন চ্যানেলে রিপোর্ট প্রকাশিত হয় যে হাতুরে দলের একজন ক্রিকেটরকে শারিরিকভাবে লাঞ্চিত করেছে। এরপরও বিসিবি বিষয়টি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। কার্যত বিশ্বকাপ সীমাহীন ব্যার্থতার পরেই হাতুরাকে বরখাস্ত করা যথাযথ ছিল। বিসিবি কেন তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনেনি সেটি ক্রিকেট অঙ্গনে সমালোচিত হয়েছে।

হাতুরা যদি সত্যি আসতে না চায় তাকে চুক্তি অনুযায়ী নোটিশ পাঠিয়ে কারণ দর্শাতে বলা উচিত এবং যথাযথ পন্থায় চুক্তি বাতিল করা উচিত। প্রয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে দেশি অভিজ্ঞ কোচকে আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপের দায়িত্ব প্রদান করে ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন কাউকে টীম ম্যানেজার হিসাবে বিশ্বকাপে প্রেরণ করা যেতে পারে। হাতুরাসিংহে চলে যাবার পর অ্যালেন ডোনাল্ড সহ ইতিপূর্বে প্রমাণিত কোচিং স্টাফ ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করলে স্বাগত জানানো সঙ্গত হবে।  নতুন হেড কোচের কার্যপরিধি সুনিশ্চিত করে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন প্রজন্মের পরিবর্তন হচ্ছে। প্রধান নির্বাচক হিসাবে গাজী আশরাফ লিপুকে দায়িত্ব প্রদান যথাযথ হয়েছে। সঠিক পরিবেশ পেলে নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কক্ষ পথে ফেরাবে বলে আশাবাদী। তবে প্রত্যেকের ভূমিকার একটি সীমারেখা বেঁধে দিতে হবে।

 

সালেক সূফি, প্রবাসী ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seventeen + 11 =