বাংলাদেশের গ্রিন টেক্সটাইল বিশ্বের সেরা পরিবেশবান্ধব কারখানা

লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (লিড) সনদে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে বিশ্বের এক নম্বর পরিবেশবান্ধব কারখানাটি বাংলাদেশের দখলে। ময়মনসিংহে অবস্থিত গ্রিন টেক্সটাইল লিমিটেডের ইউনিট-৪ নামের এই কারখানাটি এখন পরিবেশবান্ধব হিসেবে এক নম্বরে। ১১০ নম্বরের মধ্যে গ্রিন টেক্সটাইলের কারখানাটি পেয়েছে ১০৪। এ নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব ১০টি কারখানার মধ্যে এখন ৮টি বাংলাদেশের দখলে। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এর আগেও সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বের এক নম্বর পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ পেয়েছিল বাংলাদেশের একটি কারখানা। তবে সেটি খুব বেশি দিনের জন্য স্থায়ী ছিল না। এর পরই ইন্দোনেশিয়ার একটি কারখানা সেই স্থান (এক নম্বর খেতাব) দখল করে নেয়। মূলত পরিবেশসম্মত সবুজ কারখানা বা গ্রিন ফ্যাক্টরির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (এলইইডি) বা লিড সনদ পাওয়া যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। সংস্থাটি কারখানায় পর্যাপ্ত আলো-বিদ্যুৎ, কতটা নিরাপদ, স্বাস্থ্যগত দিক কতটা মানা হয়, পরিবেশগত দিকে কতটা সতর্ক- এসব দেখে। পরে ১১০ পয়েন্টের ওপর ভিত্তি করে এসব বিষয় দেখে পয়েন্ট দেওয়া হয়।

স্থানীয় সময় শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) লিড সনদের এ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। গ্রিন টেক্সটাইল লিমিটেডের ইউনিট-৪ কারখানাটি ১১০ নম্বরের মধ্যে ১০৪ পেয়ে বিশ্বের এক নম্বর লিড সনদধারী কারখানার স্বীকৃতি পেলো। বিশ্বের শীর্ষ দশে থাকা বাংলাদেশের অন্য পরিবেশবান্ধব কারখানাগুলো হলো- রেমি হোল্ডিংস লিমিটেড, ফতুল্লা অ্যাপারেলস, তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেড, প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেড, সিল্কেন সুইং লিমিটেড ও মিথেলা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এ তালিকায় থাকা বাংলাদেশি আরেক কারখানার নাম প্রকাশ করা হয়নি। শুধু দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

শীর্ষ ১০ কারখানার সবগুলোই প্লাটিনাম সনদ পেয়েছে। ১১০-এর মধ্যে যেসব কারখানা ৮০ বা তার বেশি নম্বর পায়, সেসব কারখানা বা প্রতিষ্ঠান প্লাটিনাম সনদ লাভ করে। এছাড়া কোনো কারখানা বা প্রতিষ্ঠান ৬০ থেকে ৭৯ নম্বর পেলে গোল্ড সনদ, ৫০ থেকে ৫৯ পেলে সিলভার সনদ এবং ৪০ থেকে ৪৯ পেলে সার্টিফায়েড সনদ পায় তারা।

লিড সনদ পেতে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে কোনো প্রকল্পকে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত নানা বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। আবার নতুন ভবন নির্মাণ বা পুরোনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায় সনদের জন্য।

এদিকে, লিড সনদ পাওয়া শীর্ষ ১০০ কারখানার ৫২টি এখন বাংলাদেশের। এরপর ১০ কোম্পানি নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থান চীনের। তাদের আছে ১০টি কারখানা। এছাড়া পাকিস্তানের আছে ৯টি, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের ৬টি করে, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ানের ৪টি করে লিড সনদ পাওয়া কারখানা রয়েছে।

২০১২ সালে দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে অবস্থিত ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও প্রথম এ সনদ লাভ করে। দেশে সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা এখন ১৮৩। আরও প্রায় পাঁচ শতাধিক কারখানা সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বিশ্বের এক নম্বর পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ পাওয়া গ্রিন টেক্সটাইল ইউনিট-৪ ময়মনসিংহে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি ১১০ এর মধ্যে রেকর্ড ১০৪ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। কারখানার এ সাফল্য বাংলাদেশের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করবে এমনটাই মনে করছে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিজিএমইএ। এ সনদ এমন সময় এলো যখন ক্রেতারা কম পোশাক পণ্য কিনছেন, অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, জ্বালানির মূল্য বেড়েছে। তবুও এ প্রাপ্তি উদ্যোক্তাদের আশান্বিত করবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × 3 =