বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় ওয়ানডে পরিত্যক্ত

এক ইনিংস শেষ হয়েছিল পুরোটাই। মুশফিকুর রহিমের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ। আইরিশদের সামনে তাই লক্ষ্য ছিল ৩৫০ রানের। শক্তিমত্তা বিবেচনায় যা বলতে গেলে প্রায় অসম্ভবই হতো সফরকারীদের জন্য।

তবে আইরিশদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বৃষ্টি। বাংলাদেশ ইনিংস শেষ হওয়ার পর মুষলধারে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল, সেটি না থামায় অবশেষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন আম্পায়াররা।

কাট-অফ টাইম মানে ম্যাচ শুরু করার শেষ সময় ছিল রাত ৯টা ৩৩ মিনিট। তবে জোর বৃষ্টি থামার কোনো আভাস না থাকায় ৮টা ৩২ মিনিটেই ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা করেন আম্পায়াররা।

ওয়ানডের নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাচের ফল আসতে কমপক্ষে ২০ ওভার করে খেলা হতে হবে দুই ইনিংসে। কিন্তু বৃষ্টির তোড় এতটাই ছিল যে আইরিশদের ২০ ওভার ব্যাটিং করানোরও সম্ভাবনা ছিল না। তাই বারকয়েক মাঠ পরিদর্শনের পর ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে আম্পায়াররা।

এর আগে আইরিশ বোলারদের নিয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ছেলেখেলায় মাতে বাংলাদেশ। ফিফটি পেলেন লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর রীতিমত তাণ্ডব চালান মুশফিকুর রহিম আর তাওহিদ হৃদয়।

পঞ্চম উইকেটে তারা গড়েন ৭৮ বলে ১২৮ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটি। যে জুটিতে ভর করেই বড় সংগ্রহের ভিত হয়ে যায়। শেষটা করেন মুশফিক। ৬০ বলে হার না মানা সেঞ্চুরি উপহার দেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। বাংলাদেশ পায় ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি। ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। আগের ম্যাচেই ৩৩৮ রানের সংগ্রহ গড়ে এই রেকর্ড গড়েছিলো টাইগাররা, আজ সেটা ভাঙলো।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবির্নি। তামিম ইকবাল আর লিটন দাস শুরুটা করেছিলেন বেশ দেখেশুনে।

১০ ওভার কাটিয়ে দেন তারা। শেষপর্যন্ত তামিম-লিটনের ৪২ রানের জুটিটি ভাঙে দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে। ভালো ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত দিয়ে তামিম উইকেটে সেট হতে যাচ্ছিলেন কেবল। তখনই ভুলটা করে বসলেন এবং দুর্ভাগ্যের শিকার হলেন।

দশম ওভারের শেষ বলে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তামিম লিটনকে কল দিয়েছিলেন রান নেয়ার জন্য। শর্ট রানের জন্য দৌড় দেয়ার আগেই বল কুড়িয়ে সরাসরি থ্রো করেন মার্ক অ্যাডেয়ার।

সরাসরি থ্রোটি আঘাত হানে নন-স্ট্রাইকপ্রান্তের স্ট্যাম্পে। তখনও ক্রিজে পৌঁছার অনেক পথ বাকি তামিমের। ৩১ বলে ২৩ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এর মধ্যেই মেরেছেন ৪টি বাউন্ডারির মার।

আগের ম্যাচে সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি লিটন। ফিরতে হয় ২৬ রানে। তবে এবার আর কোনো ভুল করেননি ড্যাশিং এই ওপেনার। ছক্কা মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন, ৫৩ বলে।

দ্বিতীয় উইকেটে লিটন আর নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে ৯৬ বলে যোগ করেন ১০১ রান। ৭১ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৭০ রানের ইনিংস খেলে কুর্তিস ক্যাম্ফারকে উইকেট বিলিয়ে দেন লিটন। মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

১৯ বলে ১৭। উইকেটে সেট হয়ে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু আগের ম্যাচে নাইন্টিজে কাটা পড়া এই ব্যাটার এবার ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। আইরিশ পেসার গ্রাহাম হুমেকে তুলে মারতে গিয়ে মিসটাইমিংয়ে বল আকাশে ভাসিয়ে দেন সাকিব। টপ এজ হয়ে গালিতে ধরা পড়েন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ভাঙে শান্ত-সাকিবের ৩৬ বলে ৩৯ রানের জুটি।

সাকিবকে ফেরানোর পর এক ওভার পর এসে আরেক সেট ব্যাটার শান্তকেও তুলে নেন হুমে। লেগ সাইডে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ হন শান্ত। ৭৭ বলে ৩ চার আর ২ ছক্কায় গড়া তার ইনিংসটি ছিল ৭৩ রানের।

সাকিব আর শান্তকে ৮ রানের ব্যবধানে ফিরিয়ে কিছুটা লড়াইয়ে ফিরেছিল আইরিশরা। কিন্তু পঞ্চম উইকেট জুটিতে মারমুখী ব্যাটিংয়ে ফের সফরকারীদের কোণঠাসা করে দেন মুশফিকুর রহিম আর তাওহিদ হৃদয়।

১৩ ওভারে ১২৮ রানের বিধ্বংসী জুটি গড়ে ফেরেন হৃদয়। তবে আগের ম্যাচে নাইন্টিজে কাটা পড়া এই তরুণ আরও একবার ফিরেছেন হতাশা নিয়ে। মাত্র এক রানের জন্য ফিফটি করতে পারেননি হৃদয়।

৩৪ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৪৯ রান করে মার্ক এডায়ারের শিকার হন তিনি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলটা নিচু হয়ে ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। তবে হৃদয় হাফসেঞ্চুরি মিস করলেও মুশফিক সেঞ্চুরি মিস করেননি। আইরিশ পেসার গ্রাহাম হুমে ৫৮ রান খরচায় নেন ৩টি উইকেট।

জাগো নিউজ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × 5 =