সালেক সুফী
সিরিজের প্রথম দিন শেষে শেয়ানে সেয়ানে লড়াই হলেও দ্বিতীয় দিনশেষে বেরিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অস্তি মজ্জা সম্বলিত কঙ্কাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯ উইকেট হারিয়ে ৪৫০ রান করে ইনিংস ঘোষণার পর ৪০ রান করতেই হারিয়েছে দুই ওপেনারকে। এখান থেকে কতদূর যাবে বাংলাদেশ সেটি বুঝিয়ে বলতে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হতে হবে না. অনিশ্চিত ক্রিকেটেও নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যায় টেস্ট থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট ম্যাচটি হাত ফস্কে বেরিয়ে গাছে। মোমিনুল ,লিটন ,মিরাজ ,শাহাদাত হয়তো যুদ্ধ করবে। কিন্তু সব যোদ্ধা জয়ী হতে পারে না. দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের। ২০০০ টেস্ট ক্রিকেটের কুলিন পরিবারে স্বীকৃতি পাওয়ার পূর্বক্ষনে ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার সময় বাংলাদেশের তৎকালীন ক্রিকেট কোচ কিংবদন্তি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যান স্যার গর্ডন গ্রিনিজ বিলেতের এক পত্রিকার সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ। আজ ২৪ বছর পরে এসে টেস্ট ক্রিকেট অঙ্গনে বিবর্ণ বাংলাদেশকে দেখে কি ভিন্ন কিছু দাবি করতে পারে বাংলাদেশ। লজ্জা পেতেও কি লজ্জা হয় না বাংলাদেশের ?
অস্ট্রেলিয়ায় যখন চলছে টেস্ট ক্রিকেটের দুই শীর্ষস্থানীয় দলের মল্লযুদ্ধ সেই সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে মুখোমুখি টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে নিচু সারির দুটি দল। আমরা যারা অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের নাগরিক এবং ক্রিকেট প্রেমিক তাদের দৃষ্টি দুইদিকেই থাকে।
এক সময়ের অজেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে এখন ভাটির টান। অন্যানো টেস্ট খেলুড়ে দেশ থেকে ওরা পিছিয়ে। তবুও ওডিআই ,টি ২০ ফরম্যাটে ওরা জিতছে নিয়মিত। বিশ্বজোড়া ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ওরা দারুন সমাদৃত।
প্রথম দিনশেষে ২৫০/৫ পৌঁছানোর পর কিছুটা ক্ষীণ আশা ছিল হয়তো বাংলাদেশ ৩৫০ রানে সীমিত রেখে ম্যাচে টিকে থাকবে। প্রথম দিন শেষ সেশনে লুইস (৯৭) আর অর্থানেসকে (৯০) ফিরিয়ে আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিন সকালেও হাসান মাহমুদ দ্রুত জশুয়া ডি সিলভা এবং আলজারি জোসেফের উইকেট তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোর ৭/২৬১ করেছিল। কিন্তু এর পর সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। জাস্টিন গ্রিভস (১১৫*) ,খেমার রোচ (৪৭) ৮ম উইকেট জুটি অনবদ্ধ ১৪০ রান জুড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছুড়ে ফেলে দিলো। ভাবতে পারেন গ্রিভস ৭৭ রানে থাকা অবস্থায় উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দিলেও আবেদন করে নি বাংলাদেশ। ১৪৪.১ ওভার বোলিং করেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অল আউট করতে পারে নি বাংলাদেশ। গ্রিভস ২০৬ বল খেলে ১১৫ রানে অপরাজিত থাকে।
জানাই ছিল বাংলাদেশের জবাব কেমন হবে. বাংলাদেশ কিন্তু দেখেও শিখে নি কিভাবে মাটি কামড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং করেছে। ২০ ওভার ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ আর তাতেই দুই ওপেনার জাকির হাসান এবং মাহমুদ হাসান জয় ফিরে গাছে সাজঘরে। উইকেটে আছে মোমিনুল আর শাহাদাত। শান্ত ,মুশফিক খেলছে না নানা কারণে। লিটন ,মেহেদী ছাড়া ভরসার কেউ নেই. বাংলাদেশ ইনিংস পরাজয় এড়াতে পারবে কিনা ভরসা রাখা দায়। দেখুন পার্থে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়া ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে করেছে ১৭২ রান. ভারত বা অন্য কিছু দল পারে ঘুরে দাঁড়াতে। ওদের ক্রিকেট চরিত্র আছে. বাংলাদেশ ক্রিকেট চরিত্রহীন। কি বা বলার আছে. দেখা যাক খেলাটা চতুর্থ দিন পর্যন্ত গড়ায় কিনা? বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ভালোবেসে কষ্ট পেতেও ভুলে যাচ্ছি।