বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্ট

সালেক সুফী

ছাত্র জনতার গণবিস্ফোরণ শেষে দেশে যখন চলছে সংস্কার তখন আগামী কাল থেকে পাকিস্তানের রাজধানী রাওয়ালপিন্ডিতে শুরু হতে চলেছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্ট। পাকিস্তান জুড়ে চলছে ছাত্র জনতার আন্দোলন। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটিও নিরাপত্তার কারণে তাই অনুষ্ঠিত হবে একই ভেন্যুতে । চলতি পর্বের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য দুটি দলের জন্যই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ অতি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ পাকিস্তান দ্বৈরথে এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে জয়ের দেখা পায় নি বাংলাদেশ। দুই দলের মধ্যে এ যাবৎ অনুষ্ঠিত ১৩ টেস্টের ১২টিতেই জয় পেয়েছে পাকিস্তান। ২০১৫ সালে দুই দলের মধ্যে খুলনায় অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচটি ছিল অমীমাংসিত। অতীত যাই থাক তরুণ এবং নবীন খেলোয়াড়ের মিশাল এবারের সিরিজটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হবে বলে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের ধারণা। পাকিস্তান চাইবে দুটি টেস্ট থেকে পুরো পয়েন্টস নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছাতে। বাংলাদেশ চাইবে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে।

রাওয়ালপিন্ডি উইকেট ঐতিহ্যগত ভাবে ব্যাটিং সহায়ক বলে পরিচিত। তবে উইকেটে মানসম্পন্ন পেস বোলাররা সুবিধা পেয়ে থাকে। পাকিস্তান তাই একাদশে ৪ জন পেসার নিয়ে বাংলাদেশকে ভড়কে দিতে চাইছে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ কালে ভদ্রে ভালো খেললেও এখনো পর্যন্ত দুই যুগে পায়ের  মাটি  খুঁজে পায়নি। এবারের সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করতে হলে পরিণত সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম এবং মোমিনুল হককে হাল ধরতে হবে। শান্ত, লিটন, মেরাজকেও ব্যাট হাতে অবদান রাখতে হবে। বাংলাদেশের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে ব্যাট হাতে প্রতি ইনিংস অন্তত ৩৫০ রান করার সক্ষমতায়।

শাহীন আফি্দির, নাসিম শাহ, খুররাম শাহ্জাদ এবং মোহাম্মদ আলী ঘরের মাঠে গতি এবং সুইং দিয়ে কঠিন পরীক্ষা নিবে। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের ফর্মে থাকা  মেধাবী ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় আহত। খেলতে পারবে না প্রথম টেস্ট। সেক্ষেত্রে সাদমান ইসলাম এবং জাকির হাসান সম্ভবত ইনিংস সূচনা করবে। শান্ত, মোমিনুল, মুশফিক, সাকিব, লিটন, মেরাজ এদর ব্যাটিং কিন্তু মেধাবী।  অন্তত দুটি ভালো পার্টনারশিপ আশা করা অমূলক হবে না।

সাকিব, মেরাজ দলে থাকায় দেখতে হবে বাংলাদেশ তিন পেসার নাকি দুই পেসার তিন স্পিনার নিয়ে খেলে। টেস্ট বিশেষজ্ঞ তাইজুল কিন্তু দলে স্থান ডিজার্ভ করে। অন্যদিকে বেশকিছু দিন পর টেস্ট খেলতে সিদ্ধান্ত নেওয়া তাসকিন কিন্তু লম্বা স্পেলে বোলিং করার ঝুঁকি নিতে পারবে না। অন্যদিকে বাংলাদেশ একজন ব্যাটসম্যান কম খেলিয়ে লিটন অথবা মিরাজকে দিয়ে ওপেনিং করানোর ঝুঁকি নিবে কি না দেখতে হবে। উইকেট থেকে শরিফুল, তাসকিন, খালেদ অথবা হাসান মাহমুদ কিন্তু সহায়তা পেতেও পারে। পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের কিন্তু মানসম্পন্ন স্পিন বোলিং মোকাবিলায় দুর্বলতা আছে। উপরন্তু দলের সাথে আছে বিচক্ষণ স্পিন কোচ মোস্তাক আহমেদ।

পাকিস্তান দলের টপ এবং মিডল অর্ডার ব্যাটিং অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আব্দুল্লাহ শফিক, সাইযুম আয়ুব সম্ভবত সূচনা করবে, তিন নম্বরে খেলবে অধিনায়ক শান মাসুদ।  ভালো সূচনা হলে বাবার আজম, সাউদ শাকিল, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সালমান আলী আগা পাকিস্তান স্কোর ধরা ছোয়ার বাইরে নিয়ে যেতে পারে। আগেই বলেছি পাকিস্তান গতি দিয়ে ভড়কে দিতে চাইছে বাংলাদেশকে। তাই চারজন ভিন্ন ধরনের পেস বলার রেখেছে একাদশে। একমাত্র স্পিনার সালমান আলী আগা। কাগজে কলমে যাই থাক বাংলাদেশ ভালো মতোই লড়াই করবে বলে ভরসা রাখছি।

পাকিস্তান: শান মাসুদ (অধিনায়ক), আব্দুল্লাহ শফিক, সাইয়ুম আয়ুব, বাবার আজম, সাউদ শাকিল (সহ অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান, সালমান আলী আগা, শাহীন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, খুররাম শাহ্জাদ এবং মোহাম্মদ আলী।

বাংলাদেশ সম্ভাব্য একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), জাকির হাসান, সাদমান ইসলাম, মোমিনুল হক, মুশফিকুর রাহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

sixteen − seven =