বিদায় নিলেন মনোজ মিত্র

এখনো বাঙালির মনকে কাঁদায় বাঞ্ছারাম কাপালির সেই হাহাকার। বাঞ্ছারামের সেই বাগান আজও ঠিক তেমন সাজানো আছে; তবে ‘বাঞ্ছারাম’ আর নেই। সাজানো বাগানের মায়া ত্যাগ করে বিদায় নিলেন বাঞ্ছারামের রচয়িতা ও অভিনেতা মনোজ মিত্র।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে প্রয়াত হন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। কয়েক মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। সেপ্টেম্বরে দিনকয়েক ভর্তিও ছিলেন হাসপাতালে। সেবার সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছিলেন। তবে নভেম্বরের শুরুতে আবার শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

১৯৩৮ সালের ২২ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা জেলার ধূলিহর গ্রামে মনোজ মিত্রের জন্ম। সেখানেই পড়াশোনা শুরু। দুর্গাপূজার সময় বাড়ির উঠানে যাত্রা ও নাটক হতো, সেগুলোর মধ্য দিয়ে নাটকের প্রতি আকৃষ্ট হন। দেশভাগের পর সপরিবার চলে যান বসিরহাটে। সেখানে তাঁর স্কুলজীবন শুরু। পরে ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে এমএ করেছেন। কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু।

স্কটিশ চার্চে পড়াকালীন মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত হন মনোজ। ১৯৫৭ সালে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে তৈরি করেন নাটকের দল ‘সুন্দরম’। বিশ্বব্যাপী সাত শতাধিক শো করেছে দলটি। মনোজ মিত্রের লেখা জনপ্রিয় নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সাজানো বাগান’, ‘চোখে আঙ্গুল দাদা’, ‘কালবিহঙ্গ’, ‘পরবাস’, ‘অলোকানন্দর পুত্র কন্যা’, ‘নরক গুলজার’, ‘অশ্বথামা’ প্রভৃতি।

তবে শুধু মঞ্চনাটক নয়, সিনেমায়ও ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, তপন সিনহা, তরুণ মজুমদার, শক্তি সামন্ত, গৌতম ঘোষের মতো পরিচালকদের পরিচালনায় অভিনয় করেছেন। ‘গণদেবতা’, ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’, ‘খারিজ’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘গণশত্রু’, ‘বাঞ্ছারামের বাগান’সহ অনেক সিনেমায় দেখা গেছে তাঁকে।

মনোজ মিত্রের জীবন ও কর্ম চিরকালই সমাজকে প্রতিফলিত করেছে। একজন নাট্যকার, অভিনেতা ও পরিচালক হিসেবে তিনি এমন সব গল্পকে প্রাণবন্ত করেছেন, যা মানবজীবনের বিভিন্ন জটিলতা ও সমস্যার সমাধানের পথ দেখিয়েছে। নিজের কর্ম দিয়ে তিনি চিরকাল টিকে থাকবেন নাট্যশিল্পী ও দর্শকদের মনে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nine − four =