দেশের স্ক্রিপ্ট রাইটার, চিত্রশিল্পী, উপস্থাপক, সমাজকর্মী, মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতের আজ জন্মদিন। মুক্তিযুদ্ধের বছর ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ আজকের এই দিনে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা-য় পড়াশোনা করেন। বাবা আবুল হায়াত, বোন নাতাশা হায়াত, স্বামী তৌকীর আহমেদ, ছেলেমেয়ে আরিব ও আরিশা, বোনজামাই শাহেদ শরীফ খান। সাংস্কৃতিক পরিবারেই তার বিচরণ।
টিভিতে প্রথম অভিনয় ‘খোলা দুয়ার’ নাটকে আশির দশকে ১৯৮৪ সালে। প্রথমবার জনপ্রিয়তা পায় হুমায়ূন আহমেদ-এর ‘অয়োময়’ নাটকের ‘লবঙ্গ’ চরিত্রের মাধ্যমে। এ চরিত্রের জনপ্রিয়তার পরে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
বিপাশা হায়াতের অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক/টেলিফিল্ম : রূপনগর, হারজিত, থাকে শুধু ভালোবাসা, অতিথি, নকশী পাঁড়ের মানুষেরা, চেনা অচেনা মুখ, গ্রহণকাল, দ্বৈরথ, অঙ্কুর, অহর্নিশ ভালোবাসে একজন, কথা ছিল, আশিক সব পারে, উজান পাখি, বৃষ্টির দিন, ভুলোমন সেইজন, বিশ্বাসঘাতক, আমি তোমায় ভালোবাসি, হারানো সুর, আকাশের কাছাকাছি, প্রিয়জন, কালো গোলাপের কাব্য, তোমার বসন্ত দিনে, দুই বোন, চখাচখি, সেই ভুবনে, শুরুর কবিতা, অন্যপৃষ্ঠা, বিবর্ণ প্রজাপতি, বীজমন্ত্র, সঙ্গী, কখনো দুজন, অরণ্যে একদা, টেরিবাবু, শঙ্কিত পদযাত্রা, সুখের নিশান, চাই, হেঁট, ভোর হয়ে এল, একা, লজ্জা, মায়াকুঞ্জ, কাগজের বউ, মামলার ফল, প্রত্যাশা, এক জোনাকি, কাদম্বিনী, সম্প্রীতি গাঁথা, নিমরাজি, তোমাকে ছুঁয়ে, প্রতি চুনিয়া, শুধু তোমাকেই জানি, প্রত্যাশা, বেলী, দোলা, অন্যকিছু, সুন্দরী, হাঁসুলী, অচেনা তারা, পদ্মাবতী, চাঁদপোকা ঘুণপোকা, গণ্ডি, উইজা বোর্ড, অস্তিত্ব, স্ত্রীর পত্র, জলছবি, ফিরে যাও, নির্জন স্রোত, একটি নীল জামা, দুই প্রান্তে, লাল রঙের গল্প, পোট্রেট, শেষ বলে কিছু নেই, ডুয়েল প্লে। নিজের রচিত নাটক প্রায় ৪০টি। প্রথম লেখা নাটক – শুধু তোমাকেই জানি (১৯৯৭)
নাটকে ‘অয়োময়’-এর লবঙ্গ জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত চরিত্র। ‘রূপনগর’ নাটকে সমূহ বিপদে থাকা তৌকীরকে বিপাশা দিয়েছিল মানসিক সাপোর্ট। চমৎকার একটি চরিত্র ছিল। ‘থাকে শুধু ভালোবাসা’ নাটকে ফেরদৌসের বিপরীতে বিপাশার করুণ প্রেমের অভিনয় দর্শক আজও মনে করে। ‘তোমাকে ছুঁয়ে’ নাটকে নিজের সময়ের আর একজন তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সারের সাথে স্ক্রিন শেয়ার করে অসাধারণ অভিনয় করেছে। এমন অনেক নাটক আছে বিপাশার যেগুলো কালজয়ী।
বিজ্ঞাপনে নব্বই দশকের পর অন্যান্য সময়েও দেখা গেছে। বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে। যেমন—জনি প্রিন্ট শাড়ি, লাক্স, এসএমসি ওরস্যালাইন, ভ্যাসলিন, প্রাণ পাউডার মিল্ক, চপস্টিক নুডলস, বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেন্জ, ফ্রেশ লবণ, সিঙ্গার ওয়াশিং মেশিন।
অভিনীত ছবি – আগুনের পরশমনি, জয়যাত্রা, বৃষ্টি। পোস্টার ডিজাইন করেছে ‘হালদা, ফাগুন হাওয়ায়’ ছবির। কণ্ঠশিল্পী ছিল ‘রূপকথার গল্প’ ছবিতে। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় ‘আগুনের পরশমনি’ (১৯৯৪) ছবিতে। মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার (দর্শক জরিপ)- ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০০।
এছাড়া, ইউনেস্কো, অন্যদিন পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, যায় যায় দিন-সহ আরো পুরস্কার পেয়েছে।
বিটিভিতে বিপাশা গান গেয়েছিল বাউল দলের সাথে ‘আজই বাহাহাল করিয়া বাজাও রে দোতারা / সুন্দরী কমলা নাচে।’ নিজেকে তিনি বহুরূপী গুণের অধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
উপস্থাপনাতেও বিপাশা উদাহরণ তৈরি করেছে। ‘বিপাশার অতিথি’ নামে একটি অনুষ্ঠান তার উপস্থাপনায় জনপ্রিয় হয়েছে। কিছুদিন আগে তৌকীর আহমেদের ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ছবির প্রচারণা করতে ‘ফাগুন হাওয়ায় বিপাশার সাথে’ নামের অনুষ্ঠানেও উপস্থাপনা করেছে। আবৃত্তিকার হিসেবেও তার নাম আছে। তার মধ্যে মার্জিত ব্যক্তিত্ব লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নিজেকে খুব সহজ-সরলভাবে তুলে ধরাতেই তার তৃপ্তি কাজ করে।
বিপাশা হায়াত এভাবেই রূপ ও গুণের পূর্ণাঙ্গ একজন তারকা। ব্যক্তিত্ব ও কর্ম দিয়ে নিজের প্রজন্মে গর্বের সাথে বিচরণের পর আগামী প্রজন্মের কাছেও হয়েছে সার্থক দৃষ্টান্ত।