বিশ্বকাপে দুরন্ত ভারতের বিরুদ্ধে লড়বে উড়তে না জানা কিউই পাখির ঝাঁক

সালেক সুফী

বিশ্বকাপ ২০২৩।  নিজেদের মাটিতে অপরাজেয় ভারত খুনে ক্রিকেট খেলে আছে নিদারুন ছন্দে। আজ বলিউড নগরী মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সেই দুরন্ত ভারতের মুখোমুখি হবে উড়তে না জানা কিউই পাখির ঝাঁক। গ্রুপ পর্যায়ে ব্ল্যাক ক্যাপসরা অপ্রতিরোদ্ধ ভারতের কাছে হেরেছিল ৪ উইকেটের সহজ ব্যাবধানে। সেমি ফাইনাল ভিন্ন প্রসঙ্গ।  অনেকের বিবেচনায় তেরঙ্গা ভারত আজ সম্ভাব্য বিজয়ী। কিন্তু খেলাটার নাম ক্রিকেট। সুন্দরী লাস্যময়ী রমণীর মতো ক্রিকেট নিয়ে নিশ্চিত আগাম বলা কখনো উচিত না। গ্রুপ পর্যায়ে কোনো ম্যাচ না হারা ভারতের জয় যাত্রা ভারতকে রুখে দেওয়ার মতো শক্তি, সামর্থ, অভিজ্ঞতা অবশ্যই আছে তাসমান সাগর পারের নিউ জিল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের। আমার বিশ্লেষণে আজ বলিউড নগরীতে হতে পারে ব্লকবাস্টার ক্রিকেট যুদ্ধ।

গ্রুপ পর্বে ৯ দলের কেউ দাঁড়াতেই পারেনি তুখোড় ছন্দে থাকা ভারত দলের বিরুদ্ধে। ক্রমাগত উন্নত মানের চৌকষ ক্রিকেট খেলে প্রতিটি ম্যাচে দাপুটে জয় অর্জন করে পয়েন্টস টেবিলে শীর্ষস্থানে শেষ করেছে গ্রুপ পর্ব।  অন্যদিকে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ২০১৯ বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দাপুটে সূচনা করা ইংল্যান্ড মাঝপথে ছন্দ হারিয়ে পর পর চার ম্যাচ হেরে তীব্র লড়াইয়ের পর শেষ দল হিসাবেই সেমি ফাইনাল খেলার সুযোগ পেয়েছে নিউ জিল্যান্ড।  সেমিফাইনাল কিন্তু ভিন্ন মার্গের লড়াই।  কোনোভাবেই ছন্দ হারিয়ে পা পিছলানো চলবে না।  বিশ্বমানের ৫-৬ জন ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যান এবং ৫ জন ম্যাচজয়ী ক্ষুধার্ত বোলার সমৃদ্ধ ভারত এখন খুনে মেজাজে।  তাই বলে উড়তে না জানা শান্ত নিরীহ প্রকৃতির কিউই পাখির ঝাঁক যুদ্ধ না করেই হেরে যাবে ভাবার অবকাশ নেই।

ভারত-নিউ জিল্যান্ড এখন পর্যন্ত ১১৯ বার ওডিআই ক্রিকেটে মুখোমুখি হয়েছে। ভারত জয়ী হয়েছে ৫৯ ম্যাচে, বিপরীতে নিউ জিল্যান্ড জিতেছে ৫০ ম্যাচ। ১টি ম্যাচ টাই হয়েছে, ৭টি ম্যাচে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়নি। ভারত এযাবৎ বিশ্বকাপ জয় করেছে ২ বার। ১৯৮৩ সালে কপিল দেবের নেতৃত্বে ভারত যখন লর্ডস ময়দানে তৎকালীন অপরাজেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয় করে তখন বর্তমান ভারত দলের কারও জন্ম হয়নি।

আর এবারের বিশ্বকাপ আবার রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির মতো জীবন্ত কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রিকেটারদের হতে পারে শেষ ম্যাচ। মাত্র ৫০ লক্ষ জনসংখ্যার নিউ জিল্যান্ড কিন্তু ২০১৫, ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে খেললেও একবারও বিশ্বকাপ জয় করেনি।  কেন উইলিয়ামসন, ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সৌদীর মত সোনালি প্রজন্মের বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের আজ অন্যতম শেষ সুযোগ সর্বজয়ী ভারত দলকে পরাজিত করে হ্যাট্রিক ফাইনাল খেলার।

আগেই বলেছি ভারত দলে আছে ৫-৬ জন বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান। সবাই আছে ছন্দে।  রোহিত শর্মা, শুভমান গিল প্রায় প্রতিম্যাচে দিচ্ছে উড়ন্ত সূচনা।  ভারতের ম্যাচের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান আর একটি শতরান পেলেই আরোহন করবে ৫০ ওডিআই শতরানের চূড়ায় যেখানে পৌঁছেনি ভারত ক্রিকেট দেবতা সচিন রমেশ টেন্ডুলকার। স্রেয়াস আয়ার, কে এল রাহুল, সূর্য কুমার যাদব আছে দারুন ছন্দে।  ভারত দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও রুখে দাঁড়াতে পারে রবীন্দ্রা জাদেজা, কুলদীপ যাদব।

ভারত দলের স্কোর ধরা ছোঁয়ার নিচে রাখতে হলে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সৌদি, লকি ফার্গুসন, মিচেল সান্টনারদের দ্রুত ভারতের টপ এবং মিডল অর্ডারকে ফেরাতে হবে।  পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই কোনো দল কিন্তু ভারতের বাটিংকে চাপে ফেলতে পারেনি।  মুম্বাই উইকেটে রান থাকবে।  ছোট মাঠ, দ্রুত আউট ফিল্ড। নিখুঁত লাইন লেংথ বজায় রেখে ক্রমাগত  উইকেট নিতে হবে ব্ল্যাক ক্যাপসদের।  এখন পর্যন্ত টরেন্ট বোল্ট, টিম সউদী কিন্তু টুর্নামেন্টে জ্বলে উঠেনি। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে বল হাতে দারুন ছন্দে আছে বাম হাতি স্পিনার মিচেল সান্টনার।  ঘূর্ণি উইকেট থাকলে সফল হতেও পারে রাচীন রাবিন্দ্রা।

ভারতের হাতে আছে বোলিং এক্স-ফ্যাক্টর জাসপ্রিত বুমরা এবং কুলদীপ যাদব।  ৯টি গ্রুপ ম্যাচের কোনোটিতেই ওদের কোনো ব্যাটসম্যান স্বচ্ছন্দে খেলতে পারেনি। পাশাপাশি দারুন বোলিং করছে মোহাম্মদ সামি, মোহাম্মদ সিরাজ। সবাই জানে চৌকষ খেলোয়াড় রাবিন্দ্রা জাদেজা বড় ম্যাচের ম্যাচজয়ী বোলার।  নিউ জিল্যান্ডের সাফল্যের চাবিকাঠি হতে পারে তরুণ রাচীন রাবিন্দ্রা, ডেভন কোনওয়ে এবং অবশ্যই কেন উইলিয়ামসন।

রাহুল দ্রাবিড় এবং সচিন টেন্ডুলকার নামের দুই কালজয়ী ভারতীয় কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের সম্মান করে বাবা নাম রেখেছেন রাচীন।  এবারের বিশ্বকাপের বিস্ময় রাচীন ইতিমধ্যেই ক্রিকেট বিশ্বের নজর কেড়েছে নয়নমুগ্ধকর ব্যাটিং উপহার দিয়ে।  ডিভন কোনওয়ে নিজের ছন্দে না থাকলেও আজ হয়তো আবির্ভুত হতে পারে খুনে ছন্দে।  সবাই জানে টুর্নামেন্টের অনেকটা অংশজুড়ে ডাগ আউটে বসে থাকা কালজয়ী ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসন জীবনের শেষ বিশ্বকাপ রাঙাতে পারে স্বাভাবিক ছন্দে। ড্যারিল মিচেল, টম ল্যাথাম, গ্লেন ফিলিপ্স এমনকি মিচেল সান্টনার কিন্তু ভালো সূচনার ইনিংসকে টেনে নিতে পারেন পাহাড় চূড়ায়।  তবে ভারতের বিরুদ্ধে বড় ইনিংস গড়তে হলে টপ অর্ডারের দুইজন না হলেও অন্তত একজনকে ৪০ ওভার পর্যন্ত খেলতে হবে।

আমি মনে করি নিবিড় বিশ্লেষণে ভারত এগিয়ে থাকলেও আজ ব্যাট বলের তীব্র লড়াই দেখবে ক্রিকেট বিশ্ব।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

4 × four =