বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ: এখন প্রয়োজন ধারাবাহিকতা

সালেক সুফী

পাকিস্তানের মাটিতে উপর্যুপরি দুই টেস্ট ম্যাচ দাপটের সঙ্গে জিতে ধবল ধোলাই অর্জন। যে কোনো মানদণ্ডেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সেরা অর্জন। ক্রিকেটের কুলিন টেস্ট পরিবারের সদস্য হিসাবে ২৪ বছর সময়ে বাংলাদেশ বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছে তিনটি।

এর আগে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের তৃতীয় সারির দল এবং দুর্বল জিম্বায়ুয়ে দলের বিরুদ্ধে। একটি করে টেস্ট জয়ী হয়েছিল শ্রীলংকা এবং নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওদের মাটিতে জয় দূরের কথা এবারের আগে ১৩ টেস্ট খেলে বারোটিতেই হেরেছিল। খুলনায় একটি ছিল অমীমাংসিত।

এবারে সেই বাংলাদেশ প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে পাকিস্তানকে বিপর্যস্ত করেছে। ৭৭ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে কোনো দল পাকিস্তানকে পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারাতে পারেনি। ধবল ধোলাই করেছে এর আগে মাত্র ইংল্যান্ড একবার।

ব্যাক্তিগত অর্জনের ক্ষেত্রে লিটন দাস-মেহেদী মিরাজ ২২/৬ অবস্থান থেকে ৭ম উইকেট জুটিতে ১৬৯ রান যোগ করে বিশ্ব রেকর্ড করেছে। মিরাজ এবং হাসান মাহমুদ দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে অনার্স বোর্ডে নামাঙ্কিত করেছে। সাকিব আল হাসান বাম  হাতি স্পিনার স্পিনার হিসেবে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট  উইকেট অর্জন করেছে।

টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশ এবারেই প্রথম দীর্ঘ সময় নিবিড় অনুশীলন করেছে। শারীরিক সক্ষমতা ছিল তুঙ্গে।  তদুপরি দেশে ছাত্র জনতার একতাবদ্ধ নিবেদিত আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ দাপটের সঙ্গে খেলে পাকিস্তানকে সিরিজে চুনকালি করেছে। মুশফিক, মিরাজ, লিটন সবাই তাদের পুরস্কারগুলো সংগ্রামী মানুষদের জন্য উৎসর্গ করেছে।

এই সিরিজে বাংলাদেশের অর্জন টেস্ট দল হিসাবে পরিণত হয়ে ওঠা। এবারই প্রথম বাংলাদেশে ভারসাম্যপূর্ণ দল হিসাবে বুৎপত্তি অর্জন করেছে। মানসম্পন্ন পেস আক্রমণ এবং বিশ্বমানের স্পিনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ শক্তিশালী প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়ার সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।

কঠিন অবস্থা থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাটিং করে ম্যাচ জয় করার দৃঢ়তা দেখিয়েছে। এগুলো সব কিছুই টেস্ট দল হিসাবে পরিণত হবার নিদর্শন। ফলশ্রুতি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলমান পর্বে চতুর্থ স্থানে উঠে আসা।

দুই সপ্তাহ পরে বাংলাদেশ অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়েই মোকাবিলা করবে বিশ্বসেরা ভারত দলকে ভারতের মাটিতে।  বিজয়ী বাংলাদেশ কিন্তু সব দলকেই সতর্ক বার্তা দিয়েছে। আগে  অধিকাংশ দল সবুজ ঘাসের পেসি উইকেট বানিয়ে বাংলাদেশকে ভড়কে দিত।

এখন বাংলাদেশে নাহিদ রানা নামের যুবকটি ১৫২ কিলোমিটার গতির ঝড় তুলে। তাসকিন, হাসান মাহমুদ, শরিফুলের মতো মানসম্পন্ন পেসার আছে। বিকল্প হিসেবে আছে ইবাদাত, মুস্তাফিজ, খালেদ।

স্পিন উইকেট করলেও সাকিব, তাইজুল, মিরাজ সুবিধা পাবে। ভারতকেও বাংলাদেশ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটিং যদি আরো উন্নত হয় তাহলে কিন্তু বাংলাদেশ হারাতে বেগ পেতে হবে ভারতকেও। বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে দিবে সেই কথা বলছি না। তবে বাংলাদেশকে হারানো ভারতের জন্য সহজ হবে বলে মনে হয় না।

খেলা দুটি হবে চেন্নাই এবং কানপুরে।  নিরাপত্তার কারণে কানপুর টেস্ট অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। ভারত তুখোড় দল। আগের দুবার চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলে দুবারই পরাজিত হয়েছে। এবারেও তালিকার শীর্ষে রয়েছে।

বিশ্ব সেরা ব্যাটসম্যান এবং বোলিং শক্তি নিয়ে নিজেদের মাটিতে অপরাজেয় ভারতকে যদি বাংলাদেশ ভালো খেলে হারাতে পারে সেটি হবে বিশাল অর্জন। আমি বাংলাদেশের ভক্ত অনুরাগীদের সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদী হতে বলবো। চাইবো বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। টেস্টগুলো অন্তত ৫ দিন খেলতে চেষ্টা করুক। মোমেন্টাম ধরে রেখে নিজেদের সামর্থের প্রমাণ রাখুক।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 + fifteen =