বিসিবি যেন নখদন্তহীন কাগুজে বাঘ

সালেক  সুফী: সাকিব প্রসঙ্গে বিসিবির অতিকথন, কারো কারো বাগাড়ম্বর অবশেষে ওর চাহিদা সম্পূর্ণ ভাবে পূরণের মাধ্যমেই শেষ হলো। নানা তালবাহানা, নানা অজুহাতে কঠিন প্রতিপক্ষের পক্ষে খেলা থেকে গুটিয়ে রাখা পুরোদস্তুর ব্যাবসায়ী সরকারের প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদ থাকায় বিসিবিকে খুব একটা তোয়াক্কা করে না। মিডিয়ার এক অংশের উপর প্রভাব আছে, তাই ক্যারিয়ারের গোধূলি বেলায় জাতীয় দায়িত্ব অবহেলা করেও বার বার পার পেয়ে যায়। বিসিবি হম্বি তম্বি করেও কিছু করার দৃঢ়তা দেখতে পারে না।

কয়েক দিন পরে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট এবং ওডিআই সিরিজ থেকে বাংলাদেশের বিশ্বমানের চৌকষ খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান শারীরিক এবং মানসিক অবসাদের কারণে বিশ্রাম চেয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে বিসিবি সভাপতি এবং টিম ডিরেক্টরের বাগাড়ম্বর থেকে অনেক জল ঘোলা হয়েছিল। অথচ সাকিবের চাহিদা পুরোপুরি মেনে নিয়ে তাকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দেয়া হলো।

সাকিব এবং বিসিবি কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। বরং একে  ওপরের পরিপূরক। তাই এখানে কারো জয়-পরাজয়ের প্রসঙ্গ নেই। তবে যেভাবে বিগত কয়েকদিন বিসিবি সভাপতি হুঙ্কার দিলেন, টিম ডিরেক্টর খালেদ মোহাম্মদ সুজন অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করলেন শেষ সিদ্ধান্ত তার সাথে মানানসই হলো না। বুঝদার সবাই জানে সাকিবের বর্তমান অবস্থানের কারণে ওর চাহিদাই যে পূরণ হবে সেটি অনুমিত ছিল। এই বিষয় নিয়ে কারো জল ঘোলা করার প্রয়োজন ছিল না। বিসিবির কর্মপরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন কৌশলের  ব্যর্থতার কারণেই সাকিব সহ কয়েক জন খেলোয়াড় নিজেদের অপরিহার্য মনে করে। ওদের পাশাপাশি কোনো খেলোয়াড় বিকশিত হবার সুযোগই পাচ্ছে না। তাই দুধ দেয়া দুধেল গরুর সবকিছু মেনে নেয়া ছাড়া বিকল্প আছে সামান্য।

সাকিব আল হাসান  যেন মুক্ত বিহঙ্গ। বাংলাদেশের হয়ে সব ফরম্যাটে ক্রিকেট খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ থেকেও ইচ্ছা মাফিক যখন তখন ছুটি চাওয়া  মাত্র পেয়ে যাবার মুক্ত অধিকার এখন প্রতিষ্ঠিত। বাজিকরদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি আড়াল করে আইসিসির আরোপিত সাময়িক নির্বাসন থেকে ফিরে যতটুকু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে তার চেয়েও বেশি নিজেকে নানা কারণে ( অজুহাত বলতেও দ্বিধা করবো না) নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে। অথচ এই সময়ে সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের অর্জন যৎসামান্য।

অনেকে যদি বলেন সাকিব এখন সার্বক্ষণিক ব্যাবসায়ী, খণ্ডকালীন পেশাদার ক্রিকেটার, তাকে ভুল বলা  যাবে না। বিশ্রামের সময়টুকু সাকিব ব্যাবসা প্রসার এবং আনুষাঙ্গিক কাজে মনোনিবেশ করতে পাবেন। অথচ এই সময়ে আইপিএলে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হলে হয়তো মানসিক অবসাদ ওর থাকতো না। জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে নিজের খেয়াল-খুশি মাফিক নিজেকে গুটিয়ে রাখবে একজন চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অথচ এটি হয়ে আসছে নিয়মিত অন্তত সাকিবের ক্ষেত্রে।

সাকিবের বিষয়ে বিসিবির বাগাড়ম্বর অর্থহীন প্রমাণিত হলো। একই পরিস্থিতি অন্য কোনো ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে হলে বিসিবি কঠোর হেডমাস্টারের ভূমিকা নিতো। হয়তো সব ধরনের না হলেও কোনো ফরম্যাট থেকে চুক্তি স্হগিত হতো। সাকিবের চাহিদা মাফিক সব কিছু মেনে নিয়ে বিসিবি হয়তো ভুল সংকেত দিলেন। যেই খেলোযাড়টি বা সাকিবের ক্ষেত্রে যে দুইজন খেলোয়াড় খেলবে তারা যদি ভালো খেলে ফেলে তাদের কেন ফর্মহীন সাকিবের স্বার্থে পরবর্তীতে বাদ রাখা হবে?

বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে কোনো ব্যক্তির চেয়েও বড়। দেশের স্বার্থে ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটেও আছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভুল উদাহরণ হয়ে থাকবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seventeen − ten =