বেঙ্গল টাইগার্সদের আফগান জয়

সালেক সুফী

যুগ যুগ যুদ্ধ করেও কোনো পরাশক্তি দীর্ঘ দিন আফগানিস্তান জয় করে রাখতে পারে নি. কিন্তু অদম্য বেঙ্গল টাইগার্সরা কিন্তু ওহ রহ কাবুল জয় করছে ক্রিকেট মেধা দিয়ে।  কাল যেমন  হিমাচল প্রদেশের নয়নাভিরাম বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তুখোড় চৌকষ ক্রিকেট খেলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলো কাবুলীওয়ালাদের।  টস জয়ী হয়ে সাকিব ওদের বাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। নিজে (৩/৩০) আর মেহেদী মিরাজ (৩/২৫) স্পিন জাদু করে এবং একই সঙ্গে গোটা দল চমৎকার ফিল্ডিং করে আফগান লায়ন্সদের ১৫৬ রানে বেঁধে ফেলে।  রান তাড়ায় লিটন ,ছোট তামিম সহসা ফিরলেও মেহেদী মিরাজ ( ৫৭ ) আর ওর বিশ্বস্ত সঙ্গী নাজমুল হোসেন শান্ত (৫৯*) দৃঢ়চেতা ব্যাটিং পুঁজি করে ৯২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয় দিয়ে শুভ সূচনা করলো বিশ্বকাপ মিশন টিম টাইগার্স।  স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশের স্বপ্ন গুলো আবারো ডানা মেললো মুক্ত আকাশে।

অনেক নাটক , অনেক বিতর্কের পর ১৭ কোটি ক্রিকেট পূজারী বাংলাদেশিদের স্বপ্নের সওদাগর হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে।  ২০১৫ ,২০১৯ র মত প্রথম ম্যাচে কাঙ্খিত বড় জয় দিয়ে শুরু হলো জয় যাত্রা।  এমাঠেই ১০ অক্টোবর শিরোপাধারী ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলবে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড কিন্তু প্রথম খেলায় বড় ব্যাবধানে হেরে গাছে নিউজিল্যান্ডের কাছে।

সবুজ ঘাসের আবরণে ঢাকা উইকেটে কাল যথেষ্ট বাউন্স ছিল ,স্পিন ধরছিল। সূচনায় বাংলাদেশের পেসাররা সঠিক লাইন এবং নিশানায় বল করতে না পারায় ভালোই সূচনা করেছিল রামানুল্লাহ গুরবাজ ( ৪৭) আর ইব্রাহিম জাদরান (২২) জুটি। বিচক্ষণ শাকিব পাওয়ার প্লেতে নিজেকে আক্রমণে আনল উইকেটের মেজাজ বুঝে। পাল্টে গেলো দৃশ্য পট। আঁটসাঁট বোলিংয়ে  শাকিব তুলে নিলো ইব্রাহিম জাদরান এবং রাহমাত শাহকে।  বোলিং শুরু করে মেহেদী মিরাজ এবং মুস্তাফিজ চেপে ধরলো আফগানদের।  তবুও ওরা একসময় ১১২/২ স্বস্তিদায়ক অবস্থানে ছিল. বাংলাদেশিদের সমন্বিত সাঁড়াশি বোলিং আক্রমণ আর তুখোড় ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে সাকিবের বিচক্ষণ অধিনায়কত্ব যোগ হয়ে ধসিয়ে দিলো আফগান দুর্গ।  ১১২ থেকে ১৫৬ মাত্র ৪৪ রানে শেষ ৭ উইকেটের পতন দিনের শুরুতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশস্ত অনুরাগীও হয়তো স্বপ্ন দেখেনি। আফগান ইনিংসে গুড়াবাজ (৪৭) আর ইব্রাহিম জাদরান (২২) ছাড়া বলার মত কেউ কিছু করে নি. বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী মিরাজ ( ৩/২৫) আর অধিনায়ক সাকিব (৩/৩০) মূল কাজটি করেছে। শরিফুল (২/৩৪) , মুস্তাফিজ (১/২৮) এবং তাসকিন (১/৩২) যোগ্য সহায়তা দিয়েছে। বোলিং রান আপ এবং অউটফিল্ডে প্রচুর বালু থাকায় এই মাঠের প্রস্তুতি যথাযথ হয়েছে বলা যাবে না.

সীমিত টার্গেট তাড়া করতে কিন্তু তাড়া হুড়ো করেছে বাংলাদেশ। লিটনের ভুলে নন স্ট্রাকিং প্রান্তে রান আউট হওয়ায় জুনিওর তামিম বিশ্বকাপ অভিষেক রাঙাতে পারে নি. লিটনের (১৩) নড়বড়ে ফর্ম দীর্ঘায়িত হয়েছে। সাহসী মেহেদী মিরাজ ৩ নম্বরে ব্যাটিং করতে এসে কিছুটা ভাগ্যের সহায়তায় আরো একটি ম্যাচ জয়ী ৫৭ রান উপহার দিয়েছে। ১৬ এবং ২২ রানের মাথায় সহজ কাচ ফেলে দিয়ে আফগান ফিল্ডাররা মিরাজকে আতিথেয়তা দিয়েছে। ঠিক আছে ভাগ্য সব সময় বীরদের সহায়তা দিয়ে থাকে। মিরাজের সঙ্গী নাজমুল শান্ত জ্বলজ্বলে ফর্মে আছে।  কাল করেছে অপরাজিত ৫৯ রান. ৩৪.৪ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৬ উইকেটের বিশাল জয়. শুভ সূচনা হলো বাংলাদেশের ক্রিকেট মিশনের। মেহেদী মিরাজ একজন শীর্ষ স্থানীয় চৌকষ খেলোয়াড় হিসাবে বিকশিত হচ্ছে। টপ অর্ডারে ব্যাটিং করার অধিকার প্রায় প্রতিষ্ঠিত।

যেই ম্যাচে তামিম ইকবালকে খেলানো হবে না বলে সংকটের সূচনা সেই ম্যাচে কিন্তু বাংলাদেশের সূচনা ভালো হয় নি. ওপেনিং জুটির সংকট কিন্তু রয়েই গেলো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 − 13 =