ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করে ধবল ধোলাই হলো বাংলাদেশ

আফগানিস্তান ২৯৩/৯ (ইব্রাহিম জাদরান ৯৫, মোহাম্মদ নবি ৬২*, রামানুল্লাহ গুরবাজ ৪২, সাইফ হাসান ৩/৬ , তানভীর হাসান ২/ ৪৬, হাসান মাহমুদ ২/৫৭)

বাংলাদেশ ২৭.১ ওভার ৯৩ অল আউট (সাইফ হাসান ৪৩, বিল্লাল সামি ৫/৩৩, রাশিদ খান ৩/১২)

আফগানিস্তান ২০০ রানে জয়ী

আফগানিস্তান ৩-০ সিরিজ জয়ী

মাত্র কয়েক দিন আগেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজে ধবল ধোলাই অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। অথচ ফরমেট পরিবর্তন হয়ে ওডিআই সিরিজে সেই আফগানিস্তান দলের কাছেই তিন ম্যাচে বিপুল ব্যাবধানে লজ্জাজনক ভাবে পরাজিত হয়ে নিজেরাই ধবল ধোলাই হলো।

প্রথম দুই ম্যাচে তবু কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। কাল ২০০ রানের বিপুল ব্যাবধানে পরাজিত বাংলাদেশকে মনে হয়েছে হতাশ, আতংকিত, বিপর্যস্ত এক দল। জানি পরাজয়ের প্রেক্ষাপট নিয়ে নানা বিশ্লেষণ হবে, কিছু অজুহাত তুলে ধরা হবে। কিছু কনটেন্ট ক্রিয়াটার নানা জনকে দায়ী করবে।

আবার যখন কিছু দিন পর দেশের মাটিতে বর্তমান মুহূর্তে দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে পরাজিত করে সিরিজ জয়ী হবে, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শোচনীয় খেলার স্মৃতি বিস্মৃতির আড়ালে ঢাকা পড়ে যাবে।

আমি শুধু বলবো টপ, মিডল, লেট্ অর্ডার কোন অর্ডারেই ম্যাচ জয়ের মত ব্যাটিং করতে কেন বার্থ হলো বাংলাদেশ? মানলাম রাশিদ খান বিশ্ব সেরা বোলার।  কিন্তু আজমাতুল্লাহ ওমারজাই, বিল্লাল সামীকেও খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উইকেট উপহার দিয়েছে।  তাহলে কি যোগ্যতার অভাব, নাকি মানসিক ভাবে পর্যুদস্তু দল?

আসুন কালকের খেলাটি নিয়ে কথা বলি। পর পর দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। কাল ছিল ধবল ধোলাই এড়ানোর লড়াই। গোটা সিরিজ জুড়েই ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিল শান্ত, হৃদয়, মিরাজ, তানজিদ, শামীম। কাল তানজিদ তামিমকে বিশ্রাম দিয়ে নাঈমকে খেলানো হলো।

তাসকিন, মুস্তাফিজ, নাসুম কেউ ছিল না কাল। দেখুন কাল বাংলাদেশ ইনিংসে সাইফ হাসান (৪৩) ছাড়া কেউ দুই অংকের স্কোর করতে পারলো না। ৭, ৩, ৭, ৬, ০, ২, ৪, ৫, ৯, ২ এটি আইসিসি পূর্ণ সদস্যের একটি দেশের ব্যাটসম্যানদের স্কোর হলে তাদের জন্য ওডিআই বিশকাপে খেলার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

এহেন মেরুদন্ডহীন বাটিংয়ের পরিণতিতে বাংলাদেশ ২০০ রানের বিশাল ব্যাবধানে ম্যাচ হেরে সিরিজ ধবল ধোলাই কলঙ্ক তিলক অর্জন করেছে। জবাবদিহি শুধু খেলোয়াড় নয় নির্বাচকমন্ডলী, টিম ম্যানেজমেন্ট এবং বিসিবিকে করতে হবে।

অথচ একই উইকেটে আগে ব্যাটিং করে আফগানিস্তান ২৯৩/৯ করলো। উইকেটে দৈত্য দানব কিছুই ছিল না। আফগান দল প্রথম উইকেট জুটিতে করেছিল ৯৯ রান। যে রান বাংলাদেশ ১১ মিলেও করতে পারেনি। এমনকি ইব্রাহিম জাদরানের করা ৯৫ রান অতিক্রম করতে পারেনি বাংলাদেশের পুরো দল।

আফগান ইনিংসে শেষ দুই ওভারে ঝড় তুলেছিল মোহাম্মদ নবী। শেষ দুই ওভারে ৪৪ রান যোগ করে নবি (৬২*) দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশের মনোবল। নবীর সংহারী মূর্তির সামনে কেন ৪৯তম ওভার করেছিল মিরাজ প্রশ্ন করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। বাংলাদেশ দুইবার কেন তিন বার ব্যাটিং করলেও আফগান স্কোর ২৯৩/৯ অতিক্রম করতে পারতো না।

কাল আফগানিস্তান তাদের তরুণ বোলার বিল্লাল সামিকে খেলার সুযোগ দিয়েছিল। ২১ বছরের তরুণকে খেলতে ক্রিকেট ভুলে গেলো বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ৭.১ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে কাল তরুণ বলার খেলার সেরা খেলোয়াড় হয়েছে। আর বাংলাদেশের আতংকে পরিণত রাশিদ নিয়েছে ১২ রান দিয়ে ৩ উইকেট। বাংলাদেশের হয়ে সাইফ হাসান ৪৩ ছাড়া কেউ কিছুই করেনি।

আসলেই কি বাংলাদেশ এতো বাজে দল? কেন এমন অধঃপতন? আমি ব্যাখ্যা চাইবো নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছে? চাইবো গাজী আশরাফ লিপুর কাছে? আরো চাইবো সালাহউদ্দিনের কাছে? বাংলাদেশ দলের একাদশ নির্বাচন কি সঠিক ছিল? নাকি ওডিআই স্কোয়াড নির্বাচন যথাযথ হয়েছে?

আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বের বিসিসিকেও জবাবদিহি করা উচিত আফগানিস্তানের সঙ্গে ওডিআই সিরিজ ব্যর্থতার। কেন বাংলাদেশ প্রিয় ফরম্যাটে এতো দ্রুত তলানীতে পৌঁছে গেলো? বাংলাদেশ মেয়ে দলের মাঝেও লড়াই করার মানসিকতা দেখছি। কেন সেটি অনুপস্থিত বাংলাদেশ ছেলেদের?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × 3 =