বয়ঃসন্ধিকালীন প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব

সেলিনা আক্তার

একজন মানুষ জন্মের পর হতে মৃত্যু পর্যন্ত তার জীবন পরিক্রমায় বয়সের  বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে। বয়ঃসন্ধিকাল ও প্রজনন স্বাস্থ্য নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি শিশু জন্ম গ্রহণের পর ধীরে ধীরে বডো হতে থাকে । জন্ম গ্রহণের পরবর্তী শিশুটিকে শারীরিক নানা ধাপ পার হয়ে বেড়ে উঠতে হয়। আর এইসব ধাপগুলোকে করা হয় কাল । ০-৫ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কে বলা হয় শৈশব কাল । ৬-১০ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কে বলা হয় বাল্যকাল । ১০-১৯ বছর বয়সে বলা হয় থাকে বয়ঃসন্ধি কাল । এই বয়ঃসন্ধিকালে প্রতিটি ছেলে মেয়ের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন  ঘটে থাকে । যে পরিবর্তনগুলো প্রজনন স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। একটি শিশু ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন শিশুটি জন্মের পর থেকে শৈশব-কৈশোর-যৌবন- পৌঢ়ত্ব প্রতিটি স্তরে তার সাথে প্রজনন স্বাস্থ্যের ব্যাপার জড়িত । তাই আমাদের সবাইকে বয়ঃসন্ধিকাল ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে হবে।

নারী অধিকার মানবাধিকার। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার অধিকার, নারীর অধিকার। একজন নারীর কখন বিয়ে হবে, কার সাথে বিয়ে হবে, কখন সন্তান হবে, কতজন সন্তান হবে, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার এবং নিরাপদ মাতৃত্ব এগুলো নারীর সাধারণ অধিকার। জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নারী উন্নয়ন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, ফ্যামিলি প্ল্যানিং বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা কেন্দ্র স্থাপন করে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেন। বঙবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেন্ডার সমতা অর্জনের মাধ্যমে নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে রোল মডেল সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে পনের হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

বয়ঃসন্ধি কালের পরিবর্তনসমূহের মধ্যে দুইটি পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ,শারীরিক ও মানসিক। প্রতিটি ছেলে শরীরের টেস্টোস্টেরন হরমোনের জন্য এই পরিবর্তন ঘটে । যখন ছেলেদের শরীরে হরমোনের বিক্রিয়া শুরু হয় তখন থেকে তাদের শরীরে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে অন্য দুটি হরমোন কাজ করে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন । যাই হোক বয়ঃসন্ধি কালে মূলত তিন ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়-শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রজনন স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা হিসেবে বলেছে, প্রজনন স্বাস্থ্য শুধু প্রজননতন্ত্রের কার্য এবং প্রজনন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত রোগ বা অসুস্থতার অনুপস্থিতিকেই বোঝায় না। এটা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক কল্যাণকর এক পরিপূর্ণ সুস্থ্য অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পাদনের একটি অবস্থাকে বোঝায়। অর্থাৎ প্রজনন প্রক্রিয়ায় বাধা তৈরি করে এমন শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সব বিষয়েই এতে যুক্ত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- বাল্যবিয়ে।বাল্যবিয়ের শিকার মা ও তার শিশুকে ভয়াভহ ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তাছাড়া কেউ যদি সন্তান জন্মদানে অনীহা জানায় তাকে জোরপূর্বক বাধ্য করা, অর্থাৎ তার মানসিক স্বাস্থ্যকে আঘাত করাও প্রজনন স্বাস্থ্যের মধ্যে পড়ে। ২০২১ সালে প্রকাশিত বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিক্ষা বিভাগ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুলকে বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে। এখনো অনেক স্কুলেই শিক্ষকরা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে পড়াতে সংকোচ বোধ করেন। খুবই সাধারণ একটি ধারণা ছাড়া এর বেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান না। কিশোর-কিশোরীরা প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান যে খুব বেশি রাখে না, তা বলাই নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানার পেছনে বাধা থাকা উচিত নয়। স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে চলার অর্থ নিজেদের জন্যই বিপদ ডেকে আনা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ১০-১৯ বছর পর্যন্ত কৈশোরকাল এবং এটাই বয়ঃসন্ধিকাল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৮ সালের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ২ কোটি ৭৭ লাখ কিশোর-কিশোরী। এ সময়টাতে মানুষের দেহ, মন ও বুদ্ধিবৃত্তিক যে পরিবর্তন ঘটে, তা একেবারেই অচেনা তাদের কাছে। এসব সমস্যা নিয়ে কারো সঙ্গে শেয়ার করা যায় না। অনেক প্রশ্ন তৈরি হয় শরীর ও মন নিয়ে, কিন্তু উত্তর পাওয়া যায় না। আইসিডিডিআরবি’র ২০০৫ সালের তথ্যানুযায়ী, বয়ঃসন্ধিকালের শিশুরা বাবা-মা অথবা তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে নিরাপদ যৌন জীবন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে তেমন কোনো কথাই বলে না। অন্যদিকে অভিভাবকরাও বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের সচেতন করেন না। গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এই ঝুঁকিপূর্ণ বয়সে থাকা শিশুরা এমন একটা সমাজ বা গোষ্ঠীর মধ্যে বাস করে, যারা সনাতনি ধ্যানধারণা বিশ্বাস করে ও চর্চা করে। এরা কোনোভাবেই কিশোরদের সঙ্গে যৌন জীবন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো আলোচনাকে গ্রহণ করে না। বরং এই বিষয়ক আলোচনাকে ঘরে-বাইরে, এলাকায়, স্কুলে এখনো ভয়াবহভাবে ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়।প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কতগুলো জরুরি বিষয় জানা দরকার। যেমন— প্রজনন স্বাস্থ্যতত্ত্ব, যৌনতা, পরিবার পরিকল্পনা এবং যৌনবাহিত রোগ। এসব নিয়ে আলোচনা করাটা বাংলাদেশে প্রায় সবধরনের পরিবারে গর্হিত কাজ মনে করা হয় এটা একটা সামাজিক ট্যাবু।

যখন কোনো শিশু-কিশোরের মনে তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়, তখন সে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে নানাভাবে। পাড়া-প্রতিবেশী বা বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বা ইন্টারনেট বা ফেসবুক থেকে পাওয়া তথ্য সবসময় যথেষ্ট হয় না। এখান থেকে পাওয়া তথ্য মাঝেমধ্যে ভুলও হয়। সেক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানো শিশুরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য পেয়ে থাকে। এ বয়সিরা খুব আবেগনির্ভর হয়, তারা ঝুঁকি নিতে ভালোবাসে। আবার অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকে বলে সবসময় সিদ্ধান্তও নিতে পারে না বা সাহস পায় না। বয়ঃসন্ধিকালের প্রেম, ভালোবাসা, দৈহিক সম্পর্ক, বৈবাহিক জীবন ও দাম্পত্য সম্পর্ক, সন্তান ধারণ এই বয়সিদের খুবই শঙ্কার মধ্যে ফেলে দেয়। এর জের ধরে অনেকেই আত্মহত্যা করে, হতাশায় ভোগে, মনোবৈকল্যের রোগী হয়। একজন শিশু যখন বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে, তখন সেই শিশুর দিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। ছেলেমেয়েরা যদি এই সময়ে বয়ঃসন্ধিকালের জন্য সংবেদনশীল নীতিমালা ও সুবিধাদি পায়, তাহলে তারা নিজেদের জীবন ও যৌবনের ওপর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবে। নিজেদের মনোদৈহিক পরিবর্তন নিয়ে মনে কোনো প্রশ্ন বা ভুল ধারণা থাকবে না। তারা তাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং নিজের জীবনের জন্য ক্ষতিকর কোনো পদক্ষেপ নেবে না।

শিশু বিয়ের উচ্চ হারের কারণে বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালেই অনেক মেয়ে গর্ভধারণ, সহিংসতা ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকে। বর্তমানে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সি নারীদের মধ্যে ৫৩ শতাংশেরই বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর বয়সের আগে। এই বয়সের ছেলে-মেয়ে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে অনেক। প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মানসিক ও সামাজিক বিষয়ে কাউন্সিলিং ইত্যাদির মতো বিষয়ে তারা অবগত নন। এই অবস্থার কারণে বাংলাদেশে অনেক নবজাতকের মৃত্যু হয়। আবার সন্তান প্রসবের পর মা ও শিশু রোগাক্রান্ত হন। বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালের তিনজন মেয়ের মধ্যে একজনই রুগ্ন। আর মেয়েদের ১১ শতাংশই অনেক বেশি অপুষ্টির শিকার। তাদের অধিকাংশেরই জিংক, আয়োডিন ও আয়রনের মতো অনুপুষ্টির ঘাটতি রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রজনন স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা থেকে বোঝা যায় যে, সকল নারী ও পুরুষের প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ক সব ধরনের তথ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে। নিরাপদ, কার্যকরি ও ইচ্ছানুযায়ী সহজলভ্য পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের অধিকার রয়েছে। উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের অধিকার এবং একজন নারীর স্বেচ্ছায় গর্ভধারণ, গর্ভকালীন সেবা এবং সুস্থ শিশু জন্মদানের অধিকার রয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়েদের স্বাস্থ্যসেবার অধিকার নিশ্চিত করতে প্রচারণা, সরকারি নীতিতে এ বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা, উন্নততর সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং কমিউনিটির ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাদের পাশে থাকতে কিছু সংগঠন কাজ করছে। যৌবনে পদার্পণকারীদের জন্য সহায়ক স্বাস্থ্যসেবা এবং বিশেষ কিছু জেলায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করার জন্যও কাজ করা হচ্ছে। পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মতে, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহের মধ্যে রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, আরটিআই/এসটিআই ও এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যা, গর্ভপাত প্রতিরোধ ও গর্ভপাতজনিত জটিলতার ব্যবস্থাপনা, যৌন স্বাস্থ্যবিষয়ক শিক্ষা ও সচেতনতা, পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য ও তাদের অংশগ্রহণ, স্তন ও প্রজননতন্ত্রের ক্যান্সারসহ অন্যান্য স্ত্রীরোগের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ এবং বন্ধ্যাত্ব ও অন্যান্য যৌন সমস্যা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ। বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় কৈশোর স্বাস্থ্য কৌশলপত্র, ২০১৭-২০৩০-তে চারটি কৌশলগত নির্দেশনা রয়েছে যেমন— কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, কৈশোরকালীন পুষ্টি, কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা ও মাদকাসক্তি, কৈশোরকালে সহিংসতা ও নির্যাতনের দিকে দৃষ্টি প্রদান। বাংলাদেশ জনসংখ্যা নীতি ২০১২-তে কিশোর-কিশোরীদের পরিবার পরিকল্পনা, প্রজনন স্বাস্থ্য, প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ ও এইচআইভি, পুষ্টি সম্পর্কিত সচেতনতা, তথ্য প্রদান, কাউন্সিলিং জোরদারকরণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অপারেশন প্ল্যান ২০১৭-২০২২-তে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা উন্নতকরণের কথা বলা হয়েছে।

ইউনিসেফ এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে দুইভাবে সহায়তা করে। প্রথমত, সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় যেমন, নীতি সংশোধন, কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং কর্মসূচি তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে সরকারকে সহায়তা করা হয়। দ্বিতীয়ত, যেসব জেলায় শিশু বিয়ের হার অনেক বেশি, সেসব জেলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেশের মধ্যে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকারের পাশাপাশি কাজ করে ইউনিসেফ। কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য, উন্নয়ন, সুরক্ষা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার আছেন, তাদের দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। এ গুরুত্ব অনুধাবন করে ইউনিসেফ সেবাদাতা ও সামনের কাতারের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে সরকারের সাথে। এছাড়া স্কুলে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ, হাত ধোয়ার জায়গায় সাবান রাখা ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে প্রচারপত্র ইত্যাদির বিষয়গুলো যাতে ঠিকঠাকভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা থাকে, সে জন্য সরকার ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে ইউনিসেফ। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো কেনা, বিতরণ এবং তা তদারক করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়েও কাজ করছে ইউনিসেফ সরকারের সাথে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশে ৮ হাজার কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্লাবের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতন করে হচ্ছে।

পাঠ্যপুস্তকে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবামূলক বিষয় পড়ানোর সমস্যা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ধারণা দেয়া আছে। তবে ক্লাসে শিক্ষকেরা অনেকেই বিষয়টি পড়াতে অস্বস্তি বোধ করেন। প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে পরিবার থেকে শেখানো হবে, নাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিখবে, সেটা নিয়ে যেমন বিতর্ক এবং অস্বস্তি রয়েছে, তেমনি প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে শেখার ফলে ছেলে-মেয়েদের লাভ হবে, নাকি উল্টো ক্ষতি হবে সেটা নিয়েও বিতর্ক আছে।

শুধু সরকারই নয়, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আমোদেরও এই ইস্যুতে কথা বলতে হবে। সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে প্রজনন স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবাসহ সকল ক্ষেত্রেই তা বিশাল ভূমিকা রাখবে সন্দেহ নেই। প্রয়োজন শুধু আমাদের সচেতনতা, আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং এগিয়ে আসা।

পিআইডি ফিচার

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

16 − 12 =