রূপা গাঙ্গুলী হলেন একজন ভারতীয় অভিনেত্রী, নেপথ্য গায়িকা ও সংসদ সদস্য। তিনি ভারতীয় সমান্তরাল ছায়াছবির অন্যতম প্রধান মুখ মৃণাল সেন, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ ও ঋতুপর্ণ ঘোষের মতো প্রখ্যাত পরিচালকদের ছবিতে অভিনয় করেছেন। আশির দশকের শেষার্ধে বিআর চোপড়ার তুঙ্গস্পর্শী সফল ‘মহাভারত’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুবাদে তার খ্যাতির সূত্রপাত। তাকে বরাবরই স্বতন্ত্র ব্যক্তিচেতনাশীল চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। গৌতম ঘোষের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ (১৯৯৩) ছবিতে তার অভিনীত চরিত্র কপিলা প্রত্যয়ী কণ্ঠে কুবেরকে ময়নাদ্বীপে যেতে নিষেধ করে। অপর্ণা সেনের ‘যুগান্ত’ (১৯৯৬) ছবিতে তিনি এক নিবিষ্ট নৃত্যশিল্পী অনসূয়া যিনি তার নৃত্যজীবনে বিরতি নিতে চান না বলে গর্ভপাত করাতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। শেখর দাশের ‘ক্রান্তিকাল’ (২০০৫) ছবিতে এক সন্ধ্যায় এক সন্ত্রাসবাদী তার অভিনীত চরিত্র ‘সুবর্ণা’র কণ্ঠ রোধ করে; তারপর গল্প যত এগোয় সুবর্ণা ততই তুচ্ছ লৌকিক ভাবনার বেড়া ডিঙিয়ে সেই সন্ত্রাসবাদীর প্রতি মমত্ব বোধ করেন। অপর্ণা সেনের ‘অন্তরমহল’ (২০০৫) ছবিতে তার অভিনীত মহামায়া ব্রাহ্মণের সামনে করে পুরুষতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে নিরুচ্চারে কশাঘাত করে। ২০১১ সালে অদিতি রায়ের ‘অবশেষে’ ছবিতে ‘দূরে কোথাও’ ও ‘আজি বিজন এই দুই রবীন্দ্রসংগীতের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নেপথ্য গায়িকার জাতীয় পুরস্কার জিতে নেন।
রূপা গাঙ্গুলী ১৯৬৬ সালের ২৫ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার কাছাকাছি কল্যাণী নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার জমমায়া দেবী কলেজ থেকে স্নাতক অর্জন করেন। রূপা গাঙ্গুলীর স্টার প্লাসের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো’র শেষ পর্ব ‘সাচকা সামনা’ (২০০৯), ভারতীয়দের অংশগ্রহণে ব্রিটিশ রিয়েলিটি শো ‘দ্য মোমেন্ট অব ট্রুথ’ প্রভৃতি অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে মিডিয়াতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ১৯৮৫ সালে অনিল কাপুর অভিনীত ‘?সাহেব’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে রূপার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়।
কয়েকটি হিন্দি ছবিতে কাজ করার পর তিনি কলকাতায় স্থানান্তরিত হন এবং ১৯৯০ সালে অনেক বাংলা ছায়াছবিতে কাজ করেন। ২০০৪ সালে অঞ্জন দত্তের পরিচালনায় ‘বউ ব্যারাকস ফরএভার’ নামের একটি ইংরেজি চলচ্চিত্রে কাজ করেন। রূপা ২০০৭ সালে হিন্দি টেলিভিশন সিরিয়াল ‘করাম আপনা আপনা’, এরপর সাব টিভির ২০০৭ সালের ‘লাভ স্টোরি’ এবং ২০০৯ সালে ‘আগলে জানাম মোহে বিটিয়া বহ কিজো’তে কাজ করেন।