মধুমাসে উৎফুল্ল বাংলাদেশ

সালেক সুফী: যদিও অকাল বন্যা চোখ রাঙাচ্ছে তবুও মধুমাসে রসালো ফল লিচু, আম, জাম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের দুটি সময় আমি মিস করি।  একটি ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, উৎসবের মাস। আর জুন থেকে অগাস্ট, ঝড় বাদলের দিন আর রসালো ফলের মাস।

শিশুকাল কেটেছে ফরিদপুর শহরের সবুজ শ্যামলিমায়। আমাদের নিজেদের একটি বিশাল আমের বাগান ছিল। আমাদের মহল্লায় প্রতি ঘরে আম বাগান ছিল। কাঁচা আম, পাকা আম খেতাম প্রচুর। কিছু লিচু গাছ ছিল।  তবে লিচু আসতো মূলত ঢাকার সোনারগাঁ আর উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর  অঞ্চল থেকে স্কুলবন্ধু সজীব আর আক্কাছের বদান্যতায়।  মায়ের সাথে মিলে ইফফাত মনজিলে বেশ কিছু আম গাছ আর দুটি লিচু গাছ লাগিয়েছিলাম সেই ১৯৬০র দশকে। শুনেছি এগুলো এখনো ফল দিয়ে থাকে। আমাদের বাসার পেছনের বাগানটি অনেক আগেই সরকার একোয়ার করে নিয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধের সময়টায় ১৯৭১ সালে প্রচুর আম-লিচুর ফলন হয়েছিল মনে আছে।  স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিদ্যালয়ে পড়ার সময়েও জ্যৈষ্ঠ মাসে অবশ্যই ফরিদপুর যেতাম, আম-লিচু খাবার তাড়নায়। জানিনা ফরিদপুরে ফলের সহজলভ্যতা বা সুলভমূল্য এখনো আছে কিনা।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন বিশেষ উৎসাহ নিয়ে ফলের চাষ হয়।  দুটি অঞ্চল যেমন রাজশাহী আর সাতক্ষিরা অঞ্চলের বাহারি সুস্বাদু আমের কদর শুনি। দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। লিচুর জন্য বিশেষ ভাবে সমাদৃত দিনাজপুর, রংপুর অঞ্চল। পাবনার ঈশ্বরদী অঞ্চলেও লিচুর ব্যাপক ফলন আমি নিজে দেখেছি।

বাংলাদেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীও শুনেছি ফল চাষে এখন এগিয়ে এসেছে।  সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর নানা প্রণোদনা দিচ্ছে। ফল শুধু সুস্বাদু নয় অত্যন্ত পুষ্টিকর। এখন রপ্তানি পণ্য হিসাবেও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ ফলকে ফল হিসাবে রপ্তানি করার পরিবর্তে জুস, জ্যাম, জেলি, ফ্লেক তৈরি করে মূল্য সংযোজন করছে। আমি দেখেছি কিছু ফল যেমন কাঁঠাল, লেবু, আনারস, তরমুজ, কলার একটি অংশ  মৌসুমে প্রধান উৎপাদন অঞ্চলে প্রতিবছর নানা কারণে  নষ্ট হয়।

সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দেশের সকল অঞ্চলে ফল চলাচল বাধাহীন করা হলে এবং অঞ্চলভিত্তিক ফলের শিল্প গড়ে উঠলে দেশের অর্থনতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান সৃষ্টি হবে। দেশের মানুষ সুলভ মূল্যে ফল খেতে পারবে। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাসের কারণে রোগ-শোক জরা-ব্যাধি দূর হবে। তবে বাজার ব্যবস্থার উপর সুতীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে যেন অতি মুনাফার লোভে কেমিক্যাল ব্যবহার যাতে না হয়।

আমি বাংলাদেশের মানুষদের মধুমাসের অভিবাদন জানাচ্ছি।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × four =