মানব মস্তিষ্কে চিপ বসাবে নিউরোলিংক

আশফাক আহমেদ
পরীক্ষামূলকভাবে মানব মস্তিষ্কে চিপ বসাতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ এফডিএ’র অনুমতি পেয়েছে ইলন মাস্কের ‘ব্রেইন-চিপ’ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিউরোলিংক। কোম্পানিটি বলছে, এর মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কে বিশেষ ধরনের চিপ স্থাপনের মাধ্যমে সরাসরি কম্পিউটারের সাথে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। এই চিপ স্থাপনের ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। এর আগে বানরের মস্তিষ্কে সফলভাবে ডিভাইস স্থাপন করেছে কোম্পানিটি। এইসব চিপ এমনভাবে নকশা করা যাতে এর মাধ্যমে মস্তিষ্কে উৎপাদিত বিভিন্ন সংকেত ব্যাখ্যা করতে পারার পাশাপাশি ব্লুটুথের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইসে সেইসব তথ্য পাঠানো যায়। তাদের দাবি, প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু মানুষের মস্তিস্কে এই চিপ বসিয়ে পরীক্ষা করা হয়নি।

২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রাথমিকভাবে ২০২০ সালে মানুষের মগজে চিপ বসানোর ঘোষণা দেয় নিউরোলিংক। অবশেষে ২০২৩ সালে এসে অনুমোদন পেলো প্রতিষ্ঠানটি। মানুষের মস্তিষ্কে চিপ যুক্ত করার গবেষণা একেবারে নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের গবেষকরা নেদারল্যান্ডসের এক ব্যক্তির মগজের বিশেষ অংশে একটি যন্ত্র যুক্ত করেন। সেটি মাথায় পরা হেডফোনের মতো। যন্ত্রের মাধ্যমে ওই ব্যক্তির হাঁটার চিন্তা পায়ের পেশিতে পৌঁছে দেয়। প্রায় স্বাভাবিকভাবেই হাঁটতে পারেন তিনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউরোলিংকের মস্তিষ্কে চিপ বসানোর ব্যবস্থা বাজারে চালু হওয়ার আগে এর বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।

ডিপ ফেইক প্রযুক্তির হুমকি
কোনো ব্যক্তির চেহারা ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আসলের মতো দেখতে কিন্তু নকল বা ভুয়া ছবি তৈরির প্রযুক্তি, যাকে বলা হয় ‘ডিপ ফেইক’। এর নেতিবাচক ব্যবহারের কারণে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। মাইক্রোসফটের প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথের মতে, এআই খাতে ডিপ ফেইক বড় ধরনের হুমকি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে এ কথা বলেন তিনি। ওপেনএআই, চ্যাটজিপিটির আগমন এই খাতকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাই কোন ছবি-ভিডিও আসল আর কোনটা নকল বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা তা শনাক্তে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে গেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগনে বিস্ফোরণের একটি ভুয়া ছবি সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যা নিয়ে দেশটির শেয়ার মার্কেটসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এমন কিছু ছবি বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে জানা যায়, ছবিগুলো ভুয়া ছিলো।

বর্তমানে বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ছোট কোম্পানিগুলোও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর প্রযুক্তি আনতে কাজ করছে। এসব এআইয়ের ব্যবহার ও কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়ন করতে কাজ করছেন ওয়াশিংটনের আইনপ্রণেতারা।

স্মার্টফোনে ম্যাসেজ লিখে দেবে এআই
স্মার্টফোন থেকে দ্রুত বার্তা পাঠাতে নিজেদের মেসেজেস অ্যাপে ‘ম্যাজিক কম্পোজ’ সুবিধা পরীক্ষামূলকভাবে যুক্ত করেছে গুগল। এতে ব্যবহারকারীর প্রয়োজন বুঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা লিখে দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি। বর্তমানে মেসেজেস অ্যাপে বার্তা লেখার সময় পরবর্তী শব্দ লেখার সুপারিশ পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী নির্দিষ্ট লোকজন ম্যাজিক কম্পোজ সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। গুগল বলছে, ব্যবহারকারীর সর্বশেষ পাঠানো বার্তাগুলোর তথ্য পর্যালোচনা করে নতুন করে পুরো বার্তা লিখে দেবে এআই টুলটি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেখা বার্তাগুলো পাঠানোর আগে সম্পাদনাও করা যাবে। ফলে ভুল বার্তা পাঠানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে ব্যস্ততার সময় দ্রুত পরিচিতদের বার্তা পাঠানো যাবে।

তবে মেসেজেস অ্যাপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে বার্তা লেখার সুবিধা চালু হলেও, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহার করা যাবে না। এই সুবিধা ব্যবহারের জন্য অ্যাপের সেটিংস মেনু থেকে পেনসিল আইকনে ক্লিক করে ম্যাজিক কম্পোজ সুবিধা চালু করে নিতে হবে। চালুর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর মেসেজেস অ্যাপে বার্তা লিখে দেবে এই এআই টুল। অদূর ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশে এই সুবিধা চালুর কথা রয়েছে।
মনের কথাও লিখে দেবে এআই

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি বা এআই ব্যবহার করে মনের কথা লেখায় রূপান্তর করতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। তাদের দাবি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে প্রথমবারের মতো মনের কথাকে অর্থপূর্ণ শব্দে রূপান্তর করতে পেরেছেন। নতুন এ পদ্ধতি চালু হলে বাকপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সহজে নিজের মনের কথা অন্যদের বোঝাতে পারবেন। অন্য মানুষের মনের কথা জানার জন্যও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা তিনজন ব্যক্তির মস্তিষ্ক পর্যালোচনা করে মনের কথা শনাক্তের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা মনের কথাকে শব্দ বা বাক্যে প্রকাশ করতে পারে। নিজেদের উদ্ভাবনের কার্যকারিতা পরখ করতে গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের শব্দহীন সিনেমা দেখান। পরে সিনেমার গল্প কল্পনা করতে বলেন। পরবর্তীতে তাদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে কল্পনা করা গল্পের সারাংশ জানতে সফল হন বিজ্ঞানীরা।

স্পিচ ডিকোডিং নামে পরিচিত ভাষা মডেলটি ব্যবহার করে মূলত একজন মানুষের মস্তিষ্কের ভাবনা, কল্পনা বা ইচ্ছাগুলো জানার সুযোগ পাওয়া যায়। বর্তমানে বেশ কিছু যন্ত্র বা ডিকোডার নন-ইনভেসিভ কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে সংক্ষিপ্তভাবে মনের কথা জানাতে পারে। তবে সংগ্রহ করা তথ্য সঠিকভাবে প্রকাশ করতে না পারায় তা পূর্ণাঙ্গ ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।

হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করবে এআই
বর্তমানের তুলনায় দ্রুত ও নির্ভুলভাবে হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করবেন চিকিৎসকরা। এআই প্রযুক্তিনির্ভর অ্যালগরিদম তৈরি করেছেন স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তাদের দাবি, সিওডিই-এসিএস নামের অ্যালগরিদম ৯৯ দশমিক ৬ শতাংশ নির্ভুলভাবে হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে পারে। ফলে বুকে ব্যথার চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা যাবে।

ইতিমধ্যে স্কটল্যান্ডের প্রায় ১০ হাজার রোগীর ওপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর অ্যালগরিদমটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। হার্ট অ্যাটাকের শঙ্কা রয়েছে কি না খতিয়ে দেখতে তারা নিয়মিত রোগীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। বয়স, লিঙ্গের পাশাপাশি ইসিজি ফলাফল, চিকিৎসা ইতিহাস সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষামূলকভাবে অ্যালগরিদমটি ব্যবহার করে দ্বিগুণের বেশি রোগীর হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করা সম্ভব হয়। প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে চিকিৎসকরা হার্ট অ্যাটাকের বুকের ব্যথা ও অন্য কোনো কারণে বুকের ব্যথার রোগীদের আলাদা করতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। নতুন এই অ্যালগরিদম বর্তমান পদ্ধতির তুলনায় আরো নিখুঁতভাবে এবং দ্রুত হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে সক্ষম।

১২০ বছর ধরে জ্বলছে বাতি
শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য। ১২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লিভারমোর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে থাকা একটি বাতি ১২০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে জ্বলছে। কার্বন ফিলামেন্টের তৈরি বাতি বা লাইট বাল্বটি মাঝখানে কেবল লোডশেডিংয়ের কারণে বন্ধ হয়েছিল। ১৯৭২ সালে সবচেয়ে প্রাচীনতম বাতির স্বীকৃতি হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠে বাতিটির। পরে ১৯৭৬ সালে বাতিটি লিভারমোর-এর আরেকটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে স্থানান্তর করা হয়। ব্যাটারি ব্যাকআপ সংযোগ থাকায় এটি নিরবচ্ছিন্নভাবে এখনো জ্বলছে। এমনকি বিদ্যুৎ চলে গেলেও।

প্রথম ১৯০১ সালে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের গ্যারেজের দরজার পেছনে লাগানো হয় বাতিটি। সুনির্দিষ্ট তারিখ জানা না গেলেও বাতিটি লাগানোর উদ্দেশ্য ছিল, অন্ধকারে গ্যারেজে থাকা দমকল কর্মীদের সরঞ্জাম দ্রুত খুঁজে বের করতে পারা। ধীরে ধীরে বাতিটি দমকল কর্মীদের কাছে শুভ কামনার প্রতীক হয়ে উঠে। তাই আগুন নেভানোর সরঞ্জাম নিয়ে অভিযানে যাওয়ার আগে দমকল কর্মীরা বাতিটি দোলাতো। বাতিটি যেন দমকল কর্মীদের ১২০ বছরের ইতিহাসের কথা বলে। ঐতিহাসিক বাতিটি দেখতে প্রতিদিন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটিতে জার্মানি, জাপান, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক যান।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: টেক ট্রেন্ড

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × 4 =