জিম্বাবুয়ের কিংবদন্তি ক্রিকেটার হিথ স্ট্রিক মারা গেছেন

সাবেক জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ও বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক মারা গেছেন। ফেসবুকে রবিবার তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন স্ত্রী নাদিনে স্ট্রিক। ক্যানসারে আক্রান্ত স্ট্রিককে নিয়ে এর আগেও মৃত্যু গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে এবার ৪৯ বছর বয়সীর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তার পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ ও সাবেক জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটার জন রেনি। স্পোর্টসস্টারকে তিনি বলেছেন, ‘সকালে নিজের মাটাবেলেল্যান্ডের ফার্মে স্ট্রিক মারা গেছেন। ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে তিনি শান্তিতে মৃত্যু বরণ করেছেন।’

কয়েক সপ্তাহ আগে সাবেক সতীর্থ হেনরি ওলোঙ্গার সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী স্ট্রিকের মৃত্যু গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে অবশ্য স্ট্রিক নিজেই জানান তিনি এখনও বেঁচে আছেন। ওলোঙ্গা অবশ্য সেই ঘটনার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু ক্যানসারে আক্রান্ত স্ট্রিক তখন জীবনের শেষ মুহূর্তে লড়াই করছিলেন।

জিম্বাবুয়ের কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার টেস্টে ২১৬ উইকেট এবং ওয়ানডেতে ২৩৯ উইকেট শিকার করেছেন। ক্রিকেট ছাড়ার পর বিভিন্ন দলের কোচেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। দায়িত্ব পালন করেছেন আইপিএলেও। তবে শেষ অবশ্য হয়েছে বিতর্ক সঙ্গী করে। আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ধারা ভঙ্গ করে ২০২১ সালে আট বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞার শাস্তি পেয়েছিলেন।

ক্যারিয়ারে জিম্বাবুয়ের হয়ে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ও ওয়ানডেতে শততম উইকেট শিকারি ক্রিকেটার ছিলেন। দেশের হয়ে প্রথম শততম টেস্ট ও হাজার রান পূরণ করা ক্রিকেটার তিনি। তাছাড়া ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের হয়ে দুইশ উইকেটের পাশাপাশি দুই হাজার রানের অধিকারী একমাত্র ক্রিকেটারও তিনি। স্ট্রিক টেস্ট ও ওয়ানডে অভিষেক করেছিলেন ১৯৯৩ সালে। তার পর ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে পান দলের অধিনায়কত্ব।

হিথ স্ট্রিক জিম্বাবুয়ের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারদের একজন। ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই পেসার। খেলেছেন ৬৫ টেস্ট ও ১৮৯ ওয়ানডে। বাংলাদেশ জাতীয় দলে বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে একমাত্র বোলার হিসেবে টেস্টে ১০০ উইকেট শিকার করেছেন স্ট্রিক। ১২ বছরের ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় একটা নড়বড়ে বোলিং ইউনিটকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও দারুণ অবদান রাখতেন। টেস্টে ২১৬ উইকেটের পাশাপাশি তাই রান ১৯৯০। ১১টি ফিফটির সঙ্গে সেঞ্চুরিও রয়েছেন একটি। ওয়ানডেতে ২৩৯ উইকেটের সঙ্গে রান করেছেন ২৯৪৩।১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে করাচিতে টেস্ট অভিষেকে উইকেটশূন্য ছিলেন স্ট্রিক। তবে রাওয়ালপিন্ডিতে পরের টেস্টেই ৮ উইকেট নিয়ে জানান দেন নিজের সামর্থ্যের।

২০০৫ সালে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন স্ট্রিক। পরে কোচিং ক্যারিয়ারে জড়ান। ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আইসিসি দুর্নীতি বিরোধী বিধির বেশ কয়েকটি ধারা ভঙ্গের দায়ে ২০২১ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তাকে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন স্ট্রিক।

গত মে মাসে খবর আসে, কোলন এবং যকৃতের ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ট্রিক। ক্যান্সার তখন ছিল চতুর্থ স্তরে। দক্ষিণ আফ্রিকার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে। তখনই চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, স্ট্রিকের বেঁচে ফেরাটা হবে অলৌকিক।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

4 × 1 =