মূকাভিনেতা পার্থ প্রতিম মজুমদারের জন্মদিন আজ

দেশের প্রখ্যাত মূকাভিনয় শিল্পী পার্থ প্রতিম মজুমদারের জন্মদিন আজ। ১৯৫৪ সালের আজকের এইদিনে পাবনা জেলার কালাচাঁদপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মূকাভিনয় বা মাইম শিল্পী হিসেবে দেশের পাশাপাশি বিশ্বেও তিনি প্রতিষ্ঠিত। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ফ্রান্স সরকারের পক্ষ থেকে শেভালিয়র উপাধি পেয়েছেন তিনি।

পার্থ প্রতিম মজুমদারের মূল নাম প্রেমাংশু কুমার বিশ্বাস। তার বাবার নাম হিমাংশু কুমার বিশ্বাস ও মা সুশ্রিকা বিশ্বাস। কণ্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদারের বাবা পাবনার জমিদার ও প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গসঙ্গীতশিল্পী ওস্তাদ বারীণ মজুমদার ছিলেন তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বারীণ মজুমদারের মেয়ে হারিয়ে যায়। তখন মেয়ে-হারানো বারীণ মজুমদারের অনুরোধে পার্থ ঢাকায় আসেন। তখন থেকেই তিনি পার্থ প্রতিম মজুমদার নামে পরিচিত।

পার্থের পড়াশোনা শুরু বাড়ি থেকে খানিক দূরে জুবিলী স্কুলে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষের পর বড় ভাইয়েরা তাকে কাকা শুধাংশু কুমার বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে কলকাতা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে চন্দননগরে পাঠিয়ে দেন। সেখানে ড. শীতল প্রসাদ ঘোষ আদর্শ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় পরিচয় হয় মূকাভিনয় শিল্পী যোগেশ দত্তের সঙ্গে।

পার্থ ১৯৬৬-১৯৭২ সাল পর্যন্ত কলকাতার যোগেশ দত্ত মাইম একাডেমিতে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে ভারতের চন্দননগর থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৭৬ সালে ঢাকা মিউজিক কলেজ থেকে স্নাতক হন। ১৯৮১ ও ১৯৮২ সালে মডার্ন কর্পোরাল মাইমের উপর ‘ইকোল দ্য মাইম’ এ শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৮২-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বিখ্যাত মূকাভিনয় শিল্পী মারসেল মার্সোর কাছে ‘ইকোল ইন্টারন্যাশনালি দ্য মাইমোড্রামা দ্য প্যারিস’ এ মাইমের উপর উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন।

পার্থ প্রতিম মজুমদার পৃথিবীর অনেক দেশে মূকাভিনয় প্রদর্শন করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথমবারের মতো মূকাভিনয় প্রদর্শন করেন। পরে ১৯৭৫-১৯৮১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪৮ বার মাইম প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া ঢাকার ড্রামাটিক আর্টস স্কুলে মাইমের শিক্ষকতার পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন থিয়েটার গ্রুপের ছেলেমেয়েদের নিয়ে কর্মশালা পরিচালনা করেন।

১৯৮২-১৯৮৫ সালে তিনি প্যারিসের বিভিন্ন থিয়েটারে ২৬টি শো করেন। এ ছাড়া লন্ডনে ২টি, গ্রিসে ২টি ও স্পেনে ২টি শো করেন। ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে মারসেল মার্সোর সঙ্গে আমেরিকা যান এবং সেখানে মার্সোর নির্দেশনায় ‘ইকোল ইন্টারন্যাশনাল দ্য মাইমোড্রামা দ্য প্যারিস-মারসেল মার্সো’ নামে একটি শো করেন।

১৯৮৫ সালের জুলাইয়ে মারসেল মার্সোর কোম্পানি ও ‘থিয়েটার দ্য লা স্পেহয়ার’ এর সঙ্গে যৌথভাবে ইতালিতে মাসব্যাপী ‘লে কারগো দ্য ক্রেপুসকুল’ ও ‘আবিম’ নামে দুটি মাইমোড্রামা প্রদর্শন করেন। ১৯৮৬ সালে মারসেল মার্সোর তত্ত্বাবধানে পার্থ প্রতিম মজুমদার মাইমের তত্ত্ব বিষয়ক গবেষণা কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাইম প্রদর্শন করেন। তার মূকাভিনয় নিয়ে কিছু ভিডিও নির্মিত হয়েছে। পার্থ বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। বর্তমানে তিনি ফ্রান্সে বসবাস করছেন।

পার্থ প্রতিম মজুমদার অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কলকাতা যোগেশ মাইম একাডেমি থেকে ‘মাস্টার অব মাইম’ উপাধি (১৯৮৭), একক মূকাভিনেতা হিসেবে এথেন্স, নিউ ইয়র্ক, ডেনমার্ক, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ (১৯৮৮), লন্ডনে অনুষ্ঠিত বেঙ্গলি লেটারেচার ফেস্টিভালে একমাত্র বাঙালি অতিথি শিল্পী (১৯৮৯), বার্দোতে ও ননত শহরের মেয়র কর্তৃক মেডেল প্রাপ্তি (১৯৯১), নিউ ইয়র্কের ফোবানা সম্মেলনে বিশেষ সম্মাননা (২০০০), ফ্রান্সের জাতীয় থিয়েটারের মোলিয়ার অ্যাওয়ার্ড (২০০৯), একুশে পদক (২০১০) ও ফ্রান্স সরকারের শেভালিয়র (নাইট) উপাধি (২০১১)।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

1 × 4 =