মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে সর্বাধুনিক মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি। আধুনিক এ প্রযুক্তির মেশিনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাত্র ৩০ মিনিটেই মেডিকেল বর্জ্যকে সাধারণ বর্জ্যে পরিণত করা সম্ভব। এতে করে একদিকে যেমন জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে, অন্যদিকে এটি পরিবেশবান্ধবও।

দেশের ৩টি বড় হাসপাতাল পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমাতে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সর্বাধুনিক মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু হয়েছে। পরিবেশবান্ধব এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোনো জীবাণুও অবশিষ্ট থাকে না। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন  ও  প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতিতে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হচ্ছে। যার মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে এই তিন প্রতিষ্ঠানের গজ, ব্যান্ডেজ, কাপড়, সিরিঞ্জ, সুঁই, বোতল, স্যালাইন ব্যাগ, নল, ছুরি-কাঁচি, মানুষের শরীর থেকে কেটে ফেলা অংশ মিলিয়ে ৩ হাজার কেজিরও বেশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত কর্মীরা হাসপাতালের মেডিকেল ও অন্যান্য বর্জ্য হাসপাতাল থেকে এনে মেশিনে দিচ্ছেন এবং আধা ঘণ্টা পর পানিহীন শুকনো অবশিষ্ট অংশ মেশিন থেকে বের হয়ে আসতে থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এখন পর্যন্ত এটাই বিশ্বে সর্বাধুনিক ও জনপ্রিয় প্রযুক্তি। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, চীন, কম্বোডিয়া, তুরকিস্তান, ইজবেকিস্থান, রাশিয়া, তাজাকিস্থান, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ৬০ টিরও অধিক দেশে এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

এ বিষয়ে মাইক্রোওয়েভ মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ট্রেড ভিশন লিমিটেডের ম্যানেজার শাহেদুজ্জামান বাসসকে বলেন, যে মেডিক্যাল বর্জ্যে জীবাণু থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয় সেগুলো এই মেশিনের ফেলা হয়। মেশিনটির ভেতরে থাকা ধারাল ব্লেড দ্রুত ঘোরানোর মাধ্যমে সব কিছুই মুহূর্তেই ডাস্ট হয়ে যায় এবং টেক্সটাইল মিলের ফেলে দেয়া সুতার মতো দেখা যায়। এর ফলে বর্জ্যগুলো আগের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম জায়গা দখল করে এবং ২৫ শতাংশ ওজন কমিয়ে ফেলে। কেউ ইচ্ছা করলে জীবাণুমুক্ত বর্জ্যগুলোকে কাজে লাগাতেও পারে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সর্বাধুনিক মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতি ব্যবহার সম্পর্কে টাঙ্গাইল সদর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. এস কে এম শুয়াইবুর রহমান জানান, এই মেশিন ব্যবহার করার ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমে এসেছে। এটি দেশের সব হাসপাতালে ব্যবহার করলে ভালো হয়। পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের মতো এই বর্জ্য রিসাইক্লিং করে এর থেকে সুবিধা নেয়া যেতে পারে।

এ বিষয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল বলেন, মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি ব্যবহার খুবই ভালো। সব বর্জ্য একদম ক্রাশ করে জীবাণু মুক্ত করে সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়। এতে কোন ধরণের ঝুঁকি থাকে না।

এ বিষয়ে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মোস্তাক হোসেন বলেন, বর্জ্য পরিশোধনে আধুনিক প্রযুক্তির মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার খুবই ভালো। সহজে এতে বর্জ্য ক্রাশ করে জীবাণু মুক্ত করা যায়। এতে ঝুঁকি কম।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × 1 =