রাজনীতির মাঠে তারকাদের জয় পরাজয়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েও যেন এর রেশ কাটছে না। অনেক কারণেই এবারের নির্বাচন ছিল চমক জাগানিয়া। সেখানে বাড়তি চমক হিসেবে হাজির ছিলেন তারকারা। এর আগেও অনেক তারকা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তবে তবে এবারের মতো একসঙ্গে এতো তারকার আগ্রহ আগে দেখা যায়নি।

নির্বাচনে আসা তারকারা

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হতে মনোনয়ন চেয়েছিলেন অনেকেই। তাদের মধ্যে ছিলেন অভিনেতা মাসুম পারভেজ রুবেল, ফেরদৌস আহমেদ, শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, মাহিয়া মাহি, সামসুন নাহার সিমলা, সিদ্দিকুর রহমান, শাকিল খান, ডিপজল, ড্যানি সিডাক। তবে মনোনয়ন পান একমাত্র চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। ঢাকা১০ আসন থেকে তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে জয়ীও হয়েছেন। মনোনয়ন না পেয়ে অনেক তারকা সরে গেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। তবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে তিনি পাস করতে পারেননি।

এদিকে অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম আগের মেয়াদে যথাক্রমে নীলফামারী২ ও মানিকগঞ্জ২ আসন থেকে নির্বাচন করেছেন। আসাদুজ্জামান নূর জিতলেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মমতাজ বেগম এবার হেরে গেছেন। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো এবার বরিশাল২ আসন থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন সংগীতশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস। পাবনা২ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরেছেন সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী।

শোবিজের বাইরে খেলাধুলা থেকে ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দুই তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসান। দুজনেই আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা মার্কা নিয়ে জয়ী হয়েছেন। এই দুজনের মধ্যে সাকিব এবারই প্রথম নির্বাচন করলেন। তিনি মাগুরা১ (শ্রীপুর ও সদরের একাংশ) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। আর মাশরাফি দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হয়েছেন নড়াইল২ (লোহাগড়া উপজেলা ও সদরের একাংশ) আসনে।

আসাদুজ্জামান নূর

আসাদুজ্জামান নূর এবারও নীলফামারী২ আসনে জয়ী হয়েছেন। এ নিয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন তিনি। ঘোষিত ফলাফলে আসাদুজ্জামান নূর ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদীন পেয়েছেন মাত্র ১৫ হাজার ৬৮৪ ভোট।

ফেরদৌস আহমেদ

কয়েক বছর ধরে অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিতেও বেশ সক্রিয় চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। গত উপনির্বাচনে ঢাকা১৭ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে পাননি তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা১০ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জিতেছেন তিনি, পেয়েছেন ৬৫ হাজার ৮৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী শামসুল আলম আম প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ২৫৭ ভোট।

মমতাজ বেগম

মমতাজ বেগম ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনোনীত হন। ২০১৪ সাল থেকে মানিকগঞ্জ২ আসনে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মমতাজ। এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকে লড়েছেন তিনি। তবে মানিকগঞ্জ২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে হেরে গেলেন। নির্বাচনে ৮৮ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ। মমতাজ বেগম পেয়েছেন ৮২ হাজার ১৩৮ ভোট।

মাহিয়া মাহি

রাজশাহী১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি পেয়েছেন মাত্র ৯ হাজার ৯ ভোট। একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট। মাহিয়া মাহি শুরুতে আওয়ামী লীগের হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ২ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। দল ঘোষিত মনোনয়ন তালিকায় নাম না থাকায় পরে রাজশাহী১ আসনে মাহি স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনি।

নকুল কুমার বিশ্বাস

বরিশাল২ আসন থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস। এ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। মেনন ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৭৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। গামছা প্রতীকে নকুল কুমার বিশ্বাস পেয়েছেন ১২৩০ ভোট।

ডলি সায়ন্তনী

গায়িকা ডলি সায়ন্তনী পাবনা২ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ঘোষিত ফলাফলে ডলি সায়ন্তনী পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ৩৮২ ভোট। এই আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফিরোজ কবির। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৪২ ভোট। ভোট প্রদান শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন এই গায়িকা।

মাশরাফি বিন মর্তুজা

নড়াইল২ (লোহাগড়া উপজেলা ও সদরের একাংশ) আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। মাশরাফি ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ১০২টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ হাফিজুর রহমান হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪ হাজার ৪১ ভোট।

সাকিব আল হাসান

প্রথমবার নির্বাচনে এসেই চমক দেখিয়েছেন সাকিব আল হাসান। তিনি মাগুরা১ (শ্রীপুর ও সদরের একাংশ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮৮ ভোট পেয়েছেন। সদরের একাংশ ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের ১৫২ কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৪৮৫। এই আসনে প্রায় ৫০ দশমিক ০১ শতাংশ ভোট পড়েছে। সাকিবের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ কংগ্রেসের কাজী রেজাউল হোসেন ডাব প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৭৩ ভোট।

তারকাদের ঘিরে প্রত্যাশা ও সম্ভাবনা

প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনে তারকাদের অংশগ্রহণ বাড়তি উন্মাদনা হিসেবে কাজ করে। ভোটাররা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে তাদের নির্বাচত করেন। দেশবাসীরও থাকে প্রত্যাশা। সে অনুযায়ী আসাদুজ্জামান নূর, মাশরাফি বিন মর্তুজারা বেশ সাফল্য দেখিয়েছেন। টানা তাদের নির্বাচিত হওয়া তারই প্রমাণ দেয়। নতুন নির্বাচিত ফেরদৌস আহমেদ ও সাকিব আল হাসানকে ঘিরেও তৈরি হয়েছে প্রত্যাশা। তারা নিজেদের এলাকা তো বটেই, জাতীয় পর্যায়েও দেশ ও জাতির জন্য নিয়োজিত থাকবেন এমনকামনা সবার।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: নিবন্ধ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

one × 2 =