রান্নাঘর আপনার রুচির পরিচয়

ময়ূরাক্ষী সেন
নিজের স্বপ্নের বাড়ি নিয়ে আমাদের কতই না ভাবনা! বেড রুম কেমন হবে, ডাইনিং রুম কেমন হবে, বসবার ঘরটা কেমন হবে; সব কিছু নিয়ে যেন চিন্তার শেষ নেই। কিন্তু কখনো কি আলাদা করে নিজের রান্না ঘর নিয়ে ভাবার সুযোগ হয়েছে? একজন গৃহিনীর দিনের অনেকটা সময়টা কাটে রান্না ঘরে। শুধু গৃহিনী কেন একজন কর্মজীবী নারীরও অফিস ও বাইরের সব কাজ চুকিয়ে বাড়ি ফিরে ঢু মারতে হয় রান্নাঘরে। বলা যায় নারীদের রান্নাঘরের সাথে রয়েছে অন্যরকম সম্পর্ক। তাই যে জায়গায় নারীর এতোটা সময় কাটে, ভালোবেসে সবার জন্য নানা পদ তৈরি করে সে স্থানটাও হতে হবে সুন্দর গোছালো ও পরিষ্কার। এবারের রঙ বেরঙের আয়োজন কিভাবে আপনার বাড়ির ছোট রান্না ঘরটিকে করে ফেলতে পারেন পারিপাটি ও নজর কাড়া।

নকশা করুন
ছোট রান্নাঘরের জন্য সমান্তরাল অথবা সোজা নকশা উত্তম। একটু বড় জায়গা হলে তা নিজের মতো করে সাজানো যায়। যেমন এল অথবা ইউ আকারের নকশা করা যায়। তবে রান্নাঘরের বড় জানালা প্রয়োজন। জায়গা স্বল্পতা থাকলে ছোট জানালার সাথে পরিপূরক হিসেবে এগজস্ট ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন। এতে রান্নাঘরে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে। রান্নাঘরের পানি নিষ্কাশনের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। রান্না করে পানি নিষ্কাশনের সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি। তাই এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
দেয়াল সাজানো

রান্নাঘর বলে একে অবহেলা করবেন কেন? রান্নাঘরের দেয়ালও সাজান সুন্দর করে। চাইলে দেয়ালে কোনো শিল্পীর আঁকা ছবি টানাতে পারেন কিংবা ফুল লতাপাতার পেইন্ট করানো যেতে পারে। রান্নাঘরে গ্রামীণ পরিবেশের ছোঁয়া আনতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন কাঠের প্যানেল। আধুনিক লুকের জন্য ব্যবহার করতে পারেন ধূসর রঙের কাঠের প্যানেল। এছাড়া করতে পারেন প্যাচওয়ার্ক। একটা শক্ত কার্ডবোর্ড বা পাতলা প্লাস্টিকের উপর আপনার পছন্দের কাপড়ের টুকরোগুলো লাগিয়ে বানিয়ে ফেলুন পছন্দসই প্যাচওয়ার্কটি। তারপর মাউনটিং টেপ দিয়ে লাগিয়ে দিন দেয়ালে। এতে আপনার রান্নাঘর অনেক বেশি নান্দনিক হয়ে উঠবে।

রান্নাঘরের আলো
যেকোনো রান্নাঘরে গেলে দেখা যায় পর্যাপ্ত আলোর অভাব। দেখা যায় রান্নাঘরে মাত্র একটি লাইট রয়েছে। রান্নাঘরে ছুরি বটি নিয়ে কাজ করতে হয়। রান্নাঘরে দরকার পর্যাপ্ত আলো। আপনার রান্নাঘর সাজানোর সময় বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। কেবিনেটের নিচে লাইট দিয়ে সাজাতে পারেন। বাজারে এখন বিভিন্ন ঝাড়বাতি পাওয়া যায়, তা দিয়েও রান্নাঘর সাজাতে পারেন। এতে রান্নাঘরে বেশ আভিজাত্য চলে আসবে।

দেয়ালের রং
বলা হয় দেয়ালের রঙের সাথে রয়েছে মনের সম্পর্ক। তাই রান্নাঘরের দেয়ালের জন্য এমন রং নির্বাচন করুন যা দেখলে আপনার মন চনমনে হয়ে যায়। রান্নাঘর যত বেশি উজ্জ্বল হবে, তত কাজ করে আরাম পাওয়া যাবে। তাই রান্নাঘরের দেয়ালেও উজ্জ্বল কোনো রং করতে পারেন যেমন হলুদ, হালকা ধূসর, নীল। এতে আপনার রান্নাঘর আরো বেশি ফুটে উঠবে।

মেঝের ডিজাইন
রান্নাঘরের জন্য আদর্শ মেঝে হলো সিরামিকের টাইলস করানো। এতে দাগ লাগলে খুব সহজেই পরিষ্কার করা যায়। এমনকি মেঝেটি দেখতেও খুব চকচকে লাগে। যারা সিরামিকের টাইলস ব্যবহার করতে পারবেন না, তাদের জন্য বিকল্প হিসেবে বর্তমানে বাজারে বেশ কিছু ডিজাইনের ফ্লোর কভার পাওয়া যাচ্ছে। এটিও বেশ চমৎকার কাজে আসে। আপনি যদি মেঝেতে চীনামাটির বাসন পাথরওয়ালা কার্পেট ব্যবহার করেন তবে পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে বেশ কম সময় লাগবে।

কেবিনেট
রান্নাঘরে কেবিনেট একটা অতি দরকারি জিনিস। কেবিনেট থাকলে খুব সহজে সামগ্রি গুছিয়ে রাখা যায়, এতে অনেক জায়গাও বেঁচে যায়। চাইলে কেবিনেটের আলাদা ড্রয়ারের ব্যবস্থা করতে পারেন, এতে অনেক জিনিস রেখে দেওয়া যাবে যা প্রয়োজনের সময় হাতের নাগালেই থাকবে। আর মাঝে মাঝে রান্নাঘরের পুরোনো কেবিনেটগুলো রং করিয়ে নিতে পারেন। এতে রান্নাঘর অনেক বেশি প্রাণবন্ত লাগবে।

আসবাবপত্র
রান্নাঘরের আসবাবপত্র যাতে হয় প্রয়োজনীয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যা না রাখলেই না তা ছাড়া কোনো অপ্র?য়োজনীয় আসবাবপত্র না রাখার চেষ্টা করা উচিত। এতে রান্নাঘর অনেক বেশি খোলামেলা থাকবে। যত্ন করতে পারলে রান্নাঘরে সাদা আসবাবপত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে রান্নাঘর বেশ স্নিগ্ধ লাগে। কিন্তু রান্নাঘরে তেল ঝোল মসলা লেগে যাবার ভয় থাকে, তাই চাইলে কালো আসবাবপত্র বেছে নিতে পারেন।

নির্দিষ্ট জায়গায় রাখুন
রান্নাঘর গোছানোর সময় মাথায় রাখতে হবে যাতে কিছু জায়গা থাকে। যাতে করে রান্নাঘরের যাবতীয় কাজ যেমন ফল বা সবজি কাটা, ধোয়া মোছা ইত্যাদির জন্য রান্না ঘরে জায়গা থাকে। তা না হলে স্বচ্ছন্দে কাজ করা যাবে না। এই ব্যাপারটি রান্নাঘর নির্মাণের সময়ই খেয়াল রাখতে হবে।

ফ্রিজ
রান্নাঘর বড় হলে রান্নাঘরেই ফ্রিজ রাখুন এতে আপনার কাজ খুব সহজ হয়ে যাবে। ফ্রিজ থেকে এটা সেটা নামাবার জন্য বার বার অন্য ঘরে যেতে হবে না। এতে পরিশ্রম কম হবে ও সময়ও বাঁচবে।

বেসিন
রান্নাঘরে বেসিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ আসবাব। রান্নাঘরের বেসিন বড় রাখার চেষ্টা করবেন। যাতে এতে হাঁড়ি পাতিল থেকে শুরু করে সব কিছুই সহজে ধোয়া যায়। সেক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন স্টিলের বড় বেসিন। চুলার পাশে বেসিন রাখার চেষ্টা করবেন।

তাক
রান্নাঘরে তাক ব্যবহার করতে ভুলবেন না। এতে আপনি ছুরি, কাঁচিসহ অনেক কিছু খুঁটিনাটি গুছিয়ে রাখতে পারবেন, যা থাকবে হাতের নাগালেই। রান্নাঘরে তাক থাকলে আসবাবপত্র কম লাগে। চেষ্টা করবেন, রান্নাঘরের তাক যাতে খোলা তাক হয়। এতে এমনি হুটহাট জিনিসপত্র পেয়ে যাবেন। আর দরজাসহ তাক দিতে চাইলে সেখানে রোজ দরকার হয় না তেমন জিনিস রেখে দরজা লাগিয়ে রাখবেন।
রান্নাঘর পরিষ্কার রাখুন

রান্নাঘরকে যত সুন্দর করেই সাজানো হোক না কেন, যদি সঠিকভাবে পরিষ্কার না হয় তবে কোনো সৌন্দর্য সঠিকভাবে ফুটে উঠবে না। রান্না করার সময় তরকারি বা মশলা চুলার স্ল্যাবে লেগে যেতে পারে। তাই প্রতিবার রান্না শেষে চুলার স্ল্যাব পরিষ্কার করেন নিন। প্রতিদিন পরিষ্কার না করলে এই দাগ বসে গেলে পরবর্তীতে ওঠানো খুব কষ্টকর হয়ে যাবে। রান্নাঘরে স্টেইনলেস স্টিলের সিঙ্ক পরিষ্কার করার পর কাপড়ে খানিকটা অলিভ কিংবা কোকোনাট তেল লাগিয়ে তা দিয়ে সিঙ্ক মুছে নিতে পারেন। রান্নাঘরের কোনো পাত্র চকচকে রাখতে চাইলেও এই পদ্ধতি ফলো করতে পারেন। কাঠের জিনিসের চকচকে ভাব ধরে রাখতে চাইলে কিছুটা লবণ ছিটিয়ে তাতে অল্প লেবুর রস দিয়ে হালকা ঘষে নিন। রান্নাঘরের প্রতিটি জিনিস যখন পরিষ্কার থাকবে তখন এমনিতেই চকচকে ভাব বজায় থাকবে।

পরিশেষে রান্নাঘর কিভাবে সাজাবেন, কেমন নকশা হবে তা নির্ভর করছে রান্নাঘরের আকারের উপর। আপনার বাড়ির রান্নাঘরটি কেমন সেই বিষয়টি মাথায় রেখে রান্নাঘর সাজানোর পরিকল্পনা করুন। রান্নাঘরে একটা স্যাঁতস্যাঁতে ভাব কিংবা আঁশটে গন্ধ থাকে। তাই চেষ্টা করবেন রান্না ঘরটিতে যাতে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। বাড়ির রান্নাঘরটি আপনার সবচেয়ে আপন জায়গা। তাই রান্নাঘরকে অবহেলা করবেন না। যত্ন করে রান্নাঘরটি সাজান ও খেয়াল রাখবেন রান্নাঘরটি যেন হয় স্বাস্থ্যসম্মত। বাড়ির অন্য সব ঘরে মতো রান্নাঘরটিও দিবে আপনার রুচির পরিচয়। রান্নাঘর ছোট হোক কিংবা বড় একে সাজালে হয়ে উঠবে প্রশান্তির এক স্থান।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ইন্টেরিয়র

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twenty − 18 =