বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার খোজিন আজ সোমবার বলেছেন, মস্কো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (এনপিপি) প্রকল্পের মূল ঋণ পরিশোধ শুরুর সময়সীমা দেড় বছর পিছিয়ে দিয়েছে। নতুন সূচি অনুযায়ী, প্রথম কিস্তি পরিশোধ করা হবে ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৮ সালে। খবর বাসস
রাষ্ট্রদূত ঢাকায় রাশিয়ান ফেডারেশনের দূতাবাসে আয়োজিত ‘২০২৫ সালের রাজনৈতিক ফলাফল’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এতে তিনি ও ঊচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বাণিজ্য, জ্বালানি সহযোগিতা এবং জনগণ-জনগণ পর্যায়ের বিনিময় সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি নিয়ে ব্রিফ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে আন্তঃসরকারি ঋণচুক্তি (আইজিসিএ) সংশোধনের পর সংশোধিত ঋণ পরিশোধ সূচিতে উভয় পক্ষ একমত হয়।
তিনি জানান, রাশিয়া ও বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদিত সংশোধিত প্রোটোকলের মাধ্যমে মূল ঋণ পরিশোধ শুরুর সময় ১৮ মাসের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
‘আইজিসিএর মেয়াদ বৃদ্ধি এবং লেটার অব ক্রেডিট নবায়নের ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আর্থিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত হয়েছে,’ রাষ্ট্রদূত বলেন। তিনি যোগ করেন, এটি বাংলাদেশের এই প্রধান জ্বালানি উদ্যোগের প্রতি রাশিয়ার অব্যাহত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
রূপপুর এনপিপির অগ্রগতি সম্পর্কে ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত খোজিন বলেন, বর্তমানে কাজের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১ কমিশনিং, যা প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, চূড়ান্ত নির্মাণ ও স্থাপন কাজ, স্টার্ট-আপ ও সমন্বয় কার্যক্রম, পাশাপাশি বাধ্যতামূলক পরিদর্শন ও নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়াগুলো একসঙ্গে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘স্থাপনাটি কমিশনিংয়ের দিকে নিয়মতান্ত্রিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে।’
আলেক্সান্ডার খোজিন জোর দিয়ে বলেন, প্রকল্পটির সফল ও সময়মতো বাস্তবায়ন রুশ পক্ষ এবং বাংলাদেশের গ্রাহক ও তদারকি কর্তৃপক্ষের সমন্বিত কাজের ফল।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, শিগগিরই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।
‘আগামী বছরেই আমরা বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে প্রথম মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করার পরিকল্পনা করছি,’ তিনি বলেন। এটিকে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন, যা প্রকল্পটির পূর্ণমাত্রায় পরিচালনার প্রস্তুতি নিশ্চিত করবে।
পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে রূপপুর প্রকল্পের তহবিল ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে রাশিয়া কোনো মন্তব্য করে না।
তবে তিনি উল্লেখ করেন, যন্ত্রপাতি উৎপাদন ও সরবরাহসহ বিভিন্ন মাইলফলক অর্জনের ক্ষেত্রে যথাযথ নথিপত্র, সনদায়ন ও যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রকল্পজুড়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত খোজিন বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গত তিন বছর ধরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য লেনদেন বার্ষিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রয়েছে। এ সময়ে রাশিয়া বাংলাদেশে যন্ত্রপাতি, গম, সার ও অন্যান্য কৃষিপণ্য রপ্তানি করেছে এবং বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক ও বস্ত্রপণ্য আমদানি করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারে রাশিয়া ধারাবাহিক ভূমিকা রেখে চলেছে। ২০২৫ সালে প্রায় ২০ লাখ টন রুশ গম বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়েছে।
পটাশসহ বিভিন্ন সার এবং সরিষার বীজের সরবরাহও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি, রুশ ভেটেরিনারি ভ্যাকসিন রপ্তানি এ বছর ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, জ্বালানি সহযোগিতা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি হিসেবে রয়ে গেছে। তিনি উল্লেখ করেন, পারমাণবিক জ্বালানির পাশাপাশি গ্যাস অনুসন্ধান, এলএনজি সরবরাহ বিষয়ে আলোচনা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্ভাবনাতেও রাশিয়ার সম্পৃক্ততা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রুশ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে সৌরসহ অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগে প্রস্তুত।
শ্রম অভিবাসন খাতেও সহযোগিতা সম্প্রসারিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ইস্যু করা ওয়ার্ক পারমিটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
শিক্ষা খাতও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আরেকটি ঐতিহ্যবাহী স্তম্ভ হিসেবে রয়ে গেছে। রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।