লন্ডনে তরুণ প্রজন্মের মেধাবি ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের ‘শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল যুব, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া প্রবাসি পুরষ্কার ২০২৩ প্রদান

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনের রূপকার শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন আয়োজিত “Shaheed Captain Sheikh Kamal: Remembering a Valiant Freedom Fighter and a Youth Icon” শীর্ষক এক বিশেষ স্মারক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম তরুণ প্রজন্মের মেধাবি তিন ব্রিটিশ-বাংলাদেশিকে ‘ Shaheed Captain Sheikh Kamal Youth, Culture and Sports Diaspora Award 2023’ প্রদান করেন।

ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মকে শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জীবন, কর্ম ও বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদানের কথা জানানোর পাশাপাশি তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন ২০২২ সালে এই পুরষ্কার প্রবর্তনের ঘোষণা করে। এবছর প্রথমবারের মতো পুরষ্কারপ্রাপ্তরা হলেন ব্রিটেনে ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য প্রফেশনাল ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ফুটবল খেলোয়াড় লেস্টার সিটি ক্লাবের মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী, ইংলিশ টেস্ট ক্রিকেটে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি খেলোয়াড় এসেক্স কাউন্টি ক্লাবের রবীন দাশ এবং সংস্কৃতি ও মিডিয়া ক্ষেত্রে বিবিসি এশিয়া নেটওয়ার্কে জনপ্রিয় ব্রডকাস্টার নাদিয়া আলি।

 

এ উপলক্ষে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের উদ্যেশে এক বিশেষ ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, “বাংলাদেশের ক্রীড়া, সংস্কৃতি, এবং সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সদ্য-স্বাধীন দেশের পুন:গঠনে তরুণ সমাজকে সুসংগঠিত করে ক্যাপ্টেন শেখ কামাল যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন সেজন্য তিনি চির অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবেন।”

বাঙ্গালি অধ্যূসিত পূর্ব-লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে আয়োজিত এই স্মারক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালসহ ১৫ আগস্টের সকল শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, “অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ছিলেন এক নির্ভীক প্রাণশক্তির মূর্ত প্রতীক এবং উদ্দীপ্ত তারুণ্যের অগ্রদূত। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি ছিলেন একজন ট্রেইলব্লেজার, ট্রেন্ড সেটার, ভিসনারি ও যুবসমাজের আইকন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই প্রথম ফুটবল ও ক্রিটেকসহ ক্রীড়াজগতকের ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপন করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত আবাহনী ক্রীড়াচক্র আজও বাংলাদেশে ক্রিকেট ও ফুটবলের আলোর দিশারী।  তাঁর প্রতিষ্ঠিত শক্ত ভিত্তির ওপরই আজ বাংলাদেশ বিশ্ব-ক্রীড়াঙ্গনেও গৌরবোজ্জ্বল অবস্থান অর্জন করেছে। বাংলাদেশের ছাত্র ও যুব সমাজের কাছে এক অসাধারণ ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব শেখ কামাল খেলার মাঠ থেকে নাটকের মঞ্চ, সংগীত জগত এবং সদ্য-স্বাধীন দেশে তরুণদের সুসংগঠিত করতে যে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন তা বিশ্বের যেকোনো দেশের তরুণ সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করবে।”

হাইকমিশনার বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিলা ও পুরুষদের ফুটবল ও ক্রিকেটসহ ক্রীড়াঙ্গণের প্রতিটি  ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়ে শেখ কামালের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন।”

 

তিনি আরো  বলেন, “যুক্তরাজ্যে এখন প্রায় এক মিলিয়ন প্রবাসি ব্রিটিশ-বাংলাদেশি রয়েছেন যাদের নতুন প্রজন্ম মিডিয়া, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাদের মেধা ও নেত্রিত্বের স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে। এই তরুণ প্রজন্মকে শেখ কামালের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানাতে ও অনুপ্রাণিত করতেই বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের নামে পুরস্কার প্রবর্তন করেছে।” হাইকমিশনার শেখ কামালের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম অনুসরণ করে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মকে যুক্তরাজ্যে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চায় আরো সম্পৃক্ত হয়ে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির ও প্রবাসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করার আহ্বান জানান।

 

স্মারক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোজাম্মেল আলি, মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের অনুজ বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, বিবিসি-র সাবেক রাজনৈতিক ও ক্রীড়া বিশ্লেষক উদয় শঙ্কর দাস এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট কাউন্সিল ইউকে-র প্রেসিডেন্ট নঈম উদ্দিন রিয়াজ বক্তব্য রাখেন। তাঁরা বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও সামাজিক কর্মকান্ডে শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করেন।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতে হাই কমিশনার অতিথি এবং দূতাবাস-এর কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫- এর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ও তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানে শেখ কামালের জীবনের ওপর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় নির্মিত একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শণ করা হয়। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন শেখ কামালের জীবন ও কর্মের  ওপর এক বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করে।

 

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালকে উৎসর্গ করে জনপ্রিয় ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিল্পী ও বিশিষ্ট অভিনেতা প্রীতম আহমেদের গান এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোর শিল্পীদের মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশনা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × 5 =