লেখক-গবেষক গোলাম মুরশিদের চিরবিদায়

বাংলাদেশের ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি, ভাষা, সাহিত্য রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবগুলো দিক নিয়ে তার পাণ্ডিত্য সুবিদিত

বরেণ্য লেখক ও গবেষক গোলাম মুরশিদ লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন, তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

তার ছাত্র প্রাবন্ধিক ও গবেষক স্বরোচিষ সরকার জানান, বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন গোলাম মুরশিদ। গত কিছুদিন ধরে তিনি লন্ডনের কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গোলাম মুরশিদের মরদেহ দেশে আনা হবে কিনা জানতে চাইলে স্বরোচিষ সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনার ছেলে তো আমেরিকায় থাকেন। ছেলে লন্ডনে যাচ্ছেন, তারপর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। আপাতত মরদেহ হিমঘরে রাখা হবে।”

১৯৩৯ সালের ৮ এপ্রিল বরিশাল জেলার ধামুরা গ্রামে গোলাম মুরশিদের জন্ম। বাংলাদেশের ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি, ভাষা, সাহিত্য ও রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবগুলো দিক নিয়ে তার পাণ্ডিত্য সুবিদিত।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ থেকে ১৯৭৭ সালে পিএইচডি করেন গোলাম মুরশিদ। তার গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন অধ্যাপক ডেভিড কফ।

গবেষণাকর্মটি ১৯৮৪ সালে ‘হিন্দু সমাজ সংস্কার আন্দোলন ও বাংলা নাটক’ নামে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়। উনিশ শতকের বাংলার সামাজিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে তিনি এই গবেষণায় উপস্থাপন করেন।

গোলাম মুরশিদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে উনিশ শতকের সামাজিক ইতিহাস নিয়ে। পিএইচডি করার পরপরই অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক শিবনারায়ণ রায়ের অধীনে তিনি পোস্ট ডক্টরাল কাজের সুযোগ পান।

এই গবেষণাকাজে তিনি দেখতে পান, উনিশ শতকের নারী জাগরণ মূলত পুরুষদের আগ্রহে এবং পুরুষদের প্রয়োজনে ঘটেছিল। গবেষণার শিরোনামের মধ্যেও ধারণাটির প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। ১৯৮৩ সালে রাজশাহী থেকে- Reluctant Debutante: Response of Bengali Women to Modernization নামে গবেষণাকর্মটি প্রকাশিত হয়।

এর দুই বছর পর ১৯৮৫ সালে বইটির একটি বাংলা সংস্করণ ঢাকার বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশ পায়। নাম দেওয়া হয়: ‘সংকোচের বিহ্বলতা: আধুনিকতার অভিঘাতে বঙ্গরমণী’। ২০১৬ সালে এর একটি সংস্করণ প্রকাশ করেছে ঢাকার প্রথমা প্রকাশন।

গোলাম মুরশিদের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে কালান্তরে বাংলা গদ্য (১৯৯২), যখন পলাতক (১৯৯৩), আশার ছলনে ভুলি এবং বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনার আদি-পর্ব (১৯৮৬), আঠারো শতকের গদ্য: ইতিহাস ও সংকলন, বিদ্রোহী রণক্লান্ত ইত্যাদি।

হাসান মুরশিদ ছদ্মনামে একটি উপন্যাসও লিখেছেন তিনি।

প্রবন্ধ সাহিত্যের জন্য গোলাম মুরশিদ ১৯৮২ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য সরকার ২০২১ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।

বিডিনিউজ২৪.কম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × three =