শেরে বাংলায় বাঘ সিংহের তুমুল লড়াই

সালেক সুফী: নিজেদের অভয়ারণ্যে তীব্র লড়াইয়ের পর লায়ন্সদের কাছে হেরে গেলো টিম টাইগার্স।  কাল শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের তিন ম্যাচের  ওডিআই সিরিজের প্রথম ম্যাচ।  উইকেটে বাউন্স ছিল, ছিল টার্ন। সফরকারী দলে ছিল মার্ক উড, জোফরা আর্চার, ক্রিস ওকসের মতো গতিময় বোলার। আদিল রাশিদ আর মঈন আলীর মত অভিজ্ঞ স্পিনার। টস জয় করে বাংলাদেশের তরুণ শান্ত (৫৮) আর অভিজ্ঞ রিয়াদের (৩১) লড়াকু ব্যাটিং ভর করে ২০৯ রানের মামুলি সংগ্রহ করেছিল।  সেই মামুলি পুঁজি নিয়েই তুমুল লড়াই করলো বেঙ্গল টাইগার্স।  সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করা সেই ম্যাচে ডেভিড মালানের একক কৃতিত্বে (১১৪*) ৮ বল বাকি থাকতে ৩ উইকেটে জয় পেলো ইংল্যান্ড। টাইগার্স অনুরাগীদের হৃদয় ভাঙা এই ম্যাচটি থেকে হতাশ হবার কিছু নেই। অনেক কিছুই ছিল শিক্ষণীয়। যদি বাংলাদেশ ৫০ ওভার ব্যাটিং করে আরো ২০ রান যোগ করতে পারতো জয় আরো কঠিন হতো সফরকারীদের।

দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বাংলাদেশ কখনো জয় পায়নি ইংল্যান্ড দলের বিরুদ্ধে।  জিতেছে দেশে এবং বিদেশে ওডিআই ম্যাচ। ২০১১ এবং ২০১৫ বিশ্বকাপেও জয়ী হয়েছে। এবার ঘরের মাঠে এসেছে সুযোগ।  লড়াই করে প্রথম ম্যাচটি হারলেও ঢাকায় আজ বাদে কাল আরো একটি আর চট্টগ্রামে আছে একটি ম্যাচ।  হতাশ না হয়ে নিজেদের সেরাটি দিলে সিরিজ জয় এখনো আওতার বাইরে নয় বাংলাদেশ দলের।

কাল টস জয় করে স্পোর্টিং উইকেটে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তামিম। ইংল্যান্ড দলের বোলিং আক্রমণ বিশ্ব সেরা।  অনেক দিন পর দলে ফিরে জোফরা আর্চার, মার্ক উডের সঙ্গে গতির ঝড় তুললো।  সঙ্গী সিম, সুইং নিয়ে ক্রিস ওকস।  অনেক দিন পর ফিরে এসে অধিনায়ক তামিম স্বভাবসুলভ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্ট্রোক নিলেও পারলো না ইনফর্ম লিটন দাস (০৭)। বিকশিত নাজমুল শান্তর বাটে ছিল আত্মবিশ্বাস।  ভালো খেলতে থাকা তামিমকে ( ২৩)  তীব্র গতির গুড লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বলে ফিরিয়ে দিলো উড।  লড়াই করছিলো শান্ত-মুশফিক জুটি। ১৫০ কিলোমিটার গতিতে সঠিক লেংথে বল করছিলো আর্চার-উড।  সঙ্গে যুক্ত আদিল রশিদের লেগ স্পিন, গুগলি, টপ স্পিন আর মঈন আলীর বাঁহাতি স্পিন।

যুগল স্পিন আক্রমণে মুশফিক (১৬) , সাকিব (৮) ঝরে গেলে পথ হারলো বাংলাদেশ। দুজনের আরো একটু রয়ে সয়ে খেলা প্রাসঙ্গিক ছিল। লড়াই করে ৫৮ রানে শান্ত ফিরে যাবার আগে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের (৩১) সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৫৩ রানের জুটি গড়েছিল। শেষ দিকে তাসকিন (১৪), তাইজুল (১০) যুদ্ধ করে দলীয় সংগ্রহ ২০৯ নিয়ে যায়। উঁচু মানের ইংলিশ বোলিংয়ের বিরুদ্ধে আরো একটু নিজেদের নিবেদন করে ব্যাটিং করলে ২৩৫-২৪০ রান করা খুব একটা কঠিন ছিল না। সেটি সম্ভব হলে ইংল্যান্ড দলের জয় কঠিন হতো। সফরকারী দলের চার বোলার উড (২/৩৪ )। মঈন (২/৩৫), আর্চার (২/৩৭), আদিল রশিদ (২/৪৭) ছিল সফল বোলার। বাংলাদেশ আবারো উপলব্ধি করলো শীর্ষস্থানীয় দলগুলোর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে লেগ স্পিন বোলার কত প্রয়োজন।

মামুলি সংগ্রহ নিয়েও বাংলাদেশ মুষড়ে পড়েনি। প্রথম বলেই সাকিব নিজের বলে জেসন রয়কে ফেরাতে পারতো। যাহোক ওভারের শেষ বলে ফিরিয়েছে ওকে। এরপর তাসকিন আর সাকিব নিজেদের সেরা নিবেদন করে ইংলিশ দলকে প্রতিটি রানের জন্য সংগ্রাম করতে বাধ্য করেছিল। ফিল সল্ট, জেমস ভিন্স, জস বাটলার কেউ হালে পানি পেলো না। দুর্যোগ মুহূর্তে রক অফ জিব্রাল্টার হয়ে দাঁড়ালো ডেভিড মালান।  ওর একক সংগ্রামী ইনিংস (১৪৮ বলে অপরাজিত ১১৪) ইংল্যান্ডকে কোনঠাসা অবস্থান থেকে কৃতিত্বপূণ জয় এনে দিলো।

তাইজুল ( ৩/৫৪), মেরাজ (২/৩৪) ছাড়াও ভালো বোলিং করেছে তাসকিন আর সাকিব।  ২১০ টার্গেট পেরুতে সফরকারীদের ৪৮.৪ ওভার খেলতে হয়েছে। মামুলি সংগ্রহ নিয়েও  হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর বাংলাদেশের পরাজয় থেকে অনেক কিছুই শিখবার আছে।  এমন লড়াকু মনোভাব চায় কোটি কোটি ক্রিকেট অনুরাগী। ম্যাচ জয় করার জন্য ডেভিড মালানকে সাধুবাদ দিবো অকুন্ঠ চিত্তে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

sixteen − thirteen =