শেষ ম্যাচে জয় দিয়ে শিরোপা উদযাপন নাপোলির

অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো নাপোলি সমর্থকদের। রোববার  মৌসুমের  শেষ ম্যাচের পর  বহুল প্রতিক্ষীত সিরি-এ শিরোপা  নাপোলির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে, যে আনন্দ সমর্থকদের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছে প্রয়াত দিয়েগো ম্যারাডোনার ক্লাবটি। শিষ্যদের হাতে শিরোপা তুলে ধরার সুখস্মৃতি নিয়ে বিদায় নিয়েছেন কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তি।

তলানির দল সাম্পদোরিয়াকে কাল মৌসুমের শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে ২-০ গোলে পরাজিত করেছে নাপোলি। শিরোপা উদযাপন করতে কাল স্তাদিও দিয়েগো আরমান্ডো ম্যারডোনা স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ৩৩ বছরের অপেক্ষার প্রহর শেষে শিরোপা তুলে ধরার দৃশ্য কেউই মিস করতে চায়নি।

স্পট কিক থেকে ৬৪ মিনিটে গোল করে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন ভিক্টর ওশিমেন। দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটানো নাইজেরিয়ান এই স্ট্রাইকার এনিয়ে এবারের লিগে ২৬তম গোল করলেন। এর মাধ্যমে সিরি-এ ইতিহাসে কোন আফ্রিকান খেলোয়াড় হিসেবে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়েছেন ওশিমেন। ৮৫ মিনিটে দুর পাল্লার অসাধারন শটে ব্যবধান দ্বিগুন গিওভান্নি সিমিওনে। এর মাধ্যমে নাপোলির জয় নিশ্চিত হয়। ৩৮ ম্যাচে ৯০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ল্যাজিওর তুলনায় ১৬ পয়েন্ট এগিয়ে নাপোলি শিরোপার স্বাদ পায়।

আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে স্বাভাবিক ভাবেই ট্রান্সফার উইন্ডোতে ওশিমেনকে  পেতে বেশ কিছু ক্লাব আগ্রহ দেখাবে। আকর্ষনীয় প্রস্তাবে নাপোলি ছাড়বেন কিনা এ ব্যপারে ওশিমেন বলেছেন, ‘আমি জানিনা, ক্লাবের সভাপতি এ ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিবে। আমি নাপোলির মানুষদের ভালবাসি, তারাও আমার প্রতি অকুণ্ঠ ভালবাসা দেখিয়েছে। আমি শুধুমাত্র স্রোতের সাথে যেতে চাই।’

নাপোলির সাথে এক বছরের চুক্তি বাকি থাকলেও মৌসুম শেষে ক্লাব ছাড়ার ঘোষনা আগেই দিয়েছিলেন ৬৪ বছর বয়সী স্পালেত্তি। সবচেয়ে বেশী বয়সী কোচ হিসেবে সিরি-এ জয়ের কৃতিত্ব দেখানো স্পালেত্তি আপাতত তার পরিবারের কাছে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কোচিং ক্যারিয়ারে নাপোলির এই শিরোপার জয় স্পালেত্তির অভিজ্ঞতাকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। কোচ হিসেবে আগেও তার শিরোপা জয়ের বেশ কিছু রেকর্ড রয়েছে। স্পালেত্তি বলেছেন, ‘আমি নিজের কাছে সৎ থাকতে চেয়েছি। ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিলাম। নাপোলির প্রতি আমার ভালবাসার জায়গাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমনকি যখন ঘরে থাকবো তখনো এই ক্লাবের প্রতি পূর্ণ সমর্থন থাকবে।’

সমর্থকদের এখন একটাই প্রত্যাশা স্পালেত্তির স্থানে যেই আসুক না কেন অসম্ভব প্রতিভাবান এই দলটিকে যেন পরিপূর্ণ ভাবে কাজে লাগাতে পারে। বিশেষ করে ক্লাবের অন্যতম সফল স্ট্রাইকার ওশিমেনের  মত খেলোয়াড়দের যেন ক্লাব ছাড়তে না হয় সেই দিকগুলোর দিকেও মনোযোগী হতে হবে।

স্পালেত্তি বলেন, ‘আমি ক্লাবকে এই ছেলেগুলোর ওপড় আস্থা রাখতে  বলে দিয়েছি।  তাদের নিজেদের সেরাটা দেবার সুযোগ করে দিতে হবে।’

এদিকে কালকের ম্যাচের মাধ্যমে ইতালিয়ান সিরি-এ লিগকে আরো বিদায় জানিয়েছেন সাম্পদোরিয়ার অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার ফ্যাবিও কুয়ালিয়ারেলা। ৪০ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার সিরি-এ লিগে ১৮২ গোল করেছেন। সাম্পদোরিয়ার সমর্থকদের সাথে নাপোলির কাছ থেকেও অভিবাদন পেয়েছেন ফ্যাবিও। সাম্পদোরিয়ার তাদের প্রিয় তারকাকে বিদায় জানাতে গিয়ে ব্যানারে লিখেছে, ‘আমরা তোমাকে কখনই ভুলবো না’। ম্যাচের ৮৮ মিনিটে যখন তিনি বদলী বেঞ্চে চলে যান তখন সমর্থকরা তার প্রতি উষ্ণ অভিবাদন জানিয়েছে। ২০১০ সালে মাত্র এক মৌসুম নাপোলিতে কাটিয়ে জুভেন্টাসে পাড়ি জমিয়েছিলেন ফ্যাবিও।

দিনের আরেক ম্যাচে এসি মিলানের কাছে ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে রেলিগেশনের প্লে-অফে খেলতে বাধ্য হয়েছে ভেরোনা। প্লে-অফে তাদের প্রতিপক্ষ রোমার কাছে ২-১ গোলে পরাজিত স্পেজিয়া।

সান সিরোতে প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে অলিভার গিরুদের স্পট কিকে এগিয়ে যায় মিলান। ৭২ মিনিটে মার্কো ডেভিড ফারাওনির গোলে সমতায় ফিরে ভেরোনা। এরপর ম্যাচের শেষ ভাগে রাফায়েল লিয়াওর দুই গোলে মিলানের জয় নিশ্চিত হয়। এই জয়ে চতুর্থ স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করেছে আগের মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন মিলান।

এই ম্যাচের মাধ্যমে ফুটবকে বিদায় জানিয়েছেন এসি মিলানের ৪১ বছর বয়সী তারকা স্ট্রাইকার ইব্রাহিমোভিচ। ২০১৯ সালে ইতালিয়ান ফুটবলে ফিরে এসে মিলানের পুনরুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ইব্রা।

ঘরের মাঠে পাওলো দিবালার স্টপেজ টাইমের পেনাল্টিতে স্পেজিয়াকে পরাজিত করে রোমা ইউরোপা লিগে খেলা নিশ্চিত করেছে। এ কারনে শেষ ম্যাচে উদিনেসকে ১-০ গোলে পরাজিত করেও জুভেন্টাসকে ইউরোপা কনফারেন্স লিগ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

19 − three =