পেসার মোহাম্মদ সিরাজের আগুন ঝরান বোলিংয়ে এশিয়া কাপে ওয়ানডে ফরম্যাটের ১৬তম আসরে শিরোপা জিতলো ভারত। আজ টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারত ১০ উইকেটে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে শ্রীলংকাকে। এই নিয়ে সর্বোচ্চ আটবার এশিয়া কাপের শিরোপা জিতলো ভারত। বৃষ্টির কারণে ৪০ মিনিট পর খেলা শুরু হবার পর আড়াই ঘণ্টার মধ্যে শেষ হলো ফাইনাল।
শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ১৫ দশমিক ২ ওভারে ৫০ রানে অলআউট হয় গতবারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা। ৭ ওভারে ২১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন সিরাজ। শ্রীলংকার পক্ষে কুশল মেন্ডিস সর্বোচ্চ ১৭ ও দুশান হেমন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৩ রান করেন।
জবাবে ৬ দশমিক ১ ওভারে বিনা উইকেটে ৫১ রান তুলে ২০১৮ সালের পর আবারও এশিয়া কাপের শিরোপা জিতলো ভারত। মাঝে ২০২২ সালের শিরোপা জিতেছিলো শ্রীলংকা। এ ম্যাচে শ্রীলংকা মোট ৯২ ও ভারত ৩৭ বল খেলেছে। ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট ম্যাচের দিক দিয়ে এটি তৃতীয়। ১০৪ বলে ম্যাচ শেষ করার বিশ্ব রেকর্ড ২০২০ সালে করেছে নেপাল ও যুক্তরাষ্ট্র।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেন শ্রীলংকার অধিনায়ক দাসুন শানাকা। প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই শ্রীলংকার ওপেনার কুশল পেরেরাকে শিকার করেন ভারতের পেসার জসপ্রিত বুমরাহ। ভারতের উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলকে ক্যাচ দিয়ে ২ বল খেলে শূন্য হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন পেরেরা।
ইনিংসের পরের ওভারে মেডেন নেন সিরাজ। তবে ইনিংসের চতুর্থ ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে বিধ্বংসী রুপ দেখান সিরাজ। ৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি।
ওভারে সিরাজের প্রথম ডেলিভারিতে পয়েন্টে রবীন্দ্র জাদেজাকে ক্যাচ দিয়ে ২ রানে ফিরেন ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। তৃতীয় বলে লেগ বিফোর আউট হন সাদিরা সামারাবিক্রমা। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি রানের খাতা খুলতে না পারা সামারাবিক্রমা। পরের ডেলিভারিতে কভারে ইশান কিশানকে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে বিদায় নেন চারিথ আসালঙ্কা।
পরপর দুই বলে উইকেট নিয়ে হ্যাট্টিকের সুযোগ তৈরি করেন সিরাজ। কিন্তু বাউন্ডারি মেরে সিরাজকে হ্যাট্টিক বঞ্চিত করেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। তবে ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ২ বলে ৪ রান করা ধনাঞ্জয়া। সিরাজের তোপে ৪ ওভার শেষে ১২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে শ্রীলংকা। ওয়ানডে ইতিহাসে কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে দ্রুত পাঁচ উইকেট পতনের দ্বিতীয় ঘটনা এটি।
ইনিংসের ষষ্ঠ ও নিজের তৃতীয় ওভার বল করতে এসে উইকেট শিকার অব্যাহত রাখেন সিরাজ। ওভারের চতুর্থ বলে শ্রীলংকার অধিনায়ক শানাকাকে আউট সুইংয়ে বোল্ড করেন সিরাজ। শানাকাকে আউট করে ২৯তম ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ন করেন সিরাজ। এতে ষষ্ঠ ওভারে ১২ রানে ৬ উইকেট হারায় শ্রীলংকা। এর মাধ্যমে ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুত ৬ উইকেট হারানোর রেকর্ডে যৌথভাবে দ্বিতীয়স্থানে নাম লেখায় লংকানরা।
৩ ওভারে ৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান সিরাজ। ২০০২ সালের পর ওয়ানডেতে ভারতের হয়ে প্রথম ১০ ওভারে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারে এখন শীর্ষে সিরাজ।
১২ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর সপ্তম উইকেটে ৩৪ বলে ২১ রানের জুটি গড়েন শ্রীলংকার কুশল মেন্ডিস ও দুনিথ ওয়েলালাগে। ১২তম ওভারে ষষ্ঠ ওভার করতে এসে মেন্ডিস-ওয়েলালাগের জুটি ভাঙ্গেন সিরাজ। ৩টি চারে ১৭ বলে ৩৪ রান করা মেন্ডিসকে বোল্ড করে নিজের ষষ্ঠ উইকেট শিকার করেন সিরাজ।
মেন্ডিসের বিদায়ে ৩৩ রানে সপ্তম উইকেট হারায় শ্রীলংকা। এরপর লংকানদের শেষ ৩ উইকেট তুলে নেন পেসার হার্ডিক পান্ডিয়া। শেষ পর্যন্ত ১৫ দশমিক ২ ওভারে ওয়ানডে ফর্মেটে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ৫০ রানে অলআউট হয় শ্রীলংকা। তবে ৫০ ওভার ফর্মেটে ভারতের বিপক্ষে এটিই সর্বনিম্ন দলীয় রান লংকানদের। আর ওয়ানডেতে কোন ফাইনালেও এটিই সর্বনিম্ন দলীয় রান।
১৩ রানে অপরাজিত থাকেন নয় নম্বরে নামা দুশান হেমন্ত। দলের পক্ষে মেন্ডিস ও হেমন্তই কেবলমাত্র দুই অংকের কোটা স্পর্শ করতে সক্ষম হন। শ্রীলংকার পুরো ইনিংসে ৫টি বাউন্ডারি হয়।
ভারতের সফল বোলার সিরাজ ৭ ওভারে ১ মেডেনে ২১ রানে ৬ উইকেট নেন। এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। এ ম্যাচেই আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে উইকেটের হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সিরাজ। এছাড়া পান্ডিয়া ৩ রানে ৩ ও বুমরাহ ২৩ রানে ১ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ৫১ রানের সহজ টার্গেটে ইশান কিশানকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা শুভমান গিল। প্রথম দুই ওভারে ১৭ রান তুলেন গিল ও কিশান। পেসার প্রমোদ মদুশানের করা তৃতীয় ওভারে গিলের ৩টি চারে ১৫ রান পায় ভারত। পঞ্চম ওভারে ১টি করে চারে ১১ রান তুলেন গিল ও কিশান। এতে ৫ ওভার শেষে ৪৫ রান তুলে ফেলে ভারত।
ষষ্ঠ ওভারে গিলের বাউন্ডারিতে ৫ রান তুলে শ্রীলংকার স্কোর স্পর্শ করে ভারত। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে ১ রান নিয়ে ভারতের শিরোপা নিশ্চিত করেন কিশান। ৩টি চারে ১৮ বলে অপরাজিত ২৩ রান করেন কিশান। ৬টি বাউন্ডারিতে ১৯ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন গিল।
২৬৩ বল বাকী রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। সবচেয়ে বেশি বল হাতে রেখে এটিই বড় জয় ভারতের। সবচেয়ে বেশি বল হাতে রেখে ওয়ানডেতে কোন ফাইনাল জয়ের বিশ্ব রেকর্ড গড়লো ভারত। ওয়ানডেতে কোন ফাইনাল ১০ উইকেটে জয়ের তৃতীয় নজির এটি। এরমধ্যে ভারতই দু’বার ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতে।
বাসস