সালেক সুফী
ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে কাল অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপটি নানা কারণেই ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেমী ফাইনাল দৌড়ে থাকা পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান চাইছিলো নিউ জিল্যান্ডের পরাজয়। তাহলে নিজেদের শেষ ম্যাচে বড় জয় নিয়ে ওদের শেষ মুহূর্তে আয়রন ডোম ভেঙে সেমী ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হত। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রার্থনা ছিল নিউজিল্যান্ড জিতে যেন টিম টাইগার্সদের ৮ম স্থানে টুর্নামেন্ট শেষ করে ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার সুযোগ করে দেয়। ঝড় বৃষ্টি হয়ে ম্যাচ পন্ড হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাহলে হয়তো বিপদে পড়তো নিউজিল্যান্ড। বৃষ্টি ম্যাচে বিঘ্ন ঘটায় নি। শ্রীলংকার সীমিত সঞ্চয় ১৭১ রানের জবাবে পরিকল্পিত ব্যাটিং করে ২৩.২ ওভারে ১৭২/৫ করে ৫ উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয় নিউ জিল্যান্ড। রান রেট উন্নত করে বলা যায় পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের দুয়ার বন্ধ করে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। অপরদিকে শ্রীলংকার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার সুযোগ দুরূহ সমীকরণের মুখে পরে। বাংলাদেশ শেষ খেলায় বিশাল ব্যাবধানে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত না হলে খেলতে পারবে ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। বলা যায় অলৌকিক কিছু না ঘটলে ভারত , দক্ষিণ আফ্রিকা , অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের সেমী ফাইনাল খেলা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গাছে।
আমরা জানি কিউই পাখিরা উড়তে জানেনা। আর তাই এখন কিউই নামে আর ক্রিকেট খেলেন ওরা। ব্ল্যাক ক্যাপসরা কাল ছিল উড়ন্ত অপ্রতিরুদ্ধ। টস জয় করে শুরুতে পেস বান্ধব উইকেটে গতির সঙ্গে সিম মুভমেন্ট দিয়ে হকচকিয়ে দিলো তুখোড় বাম হাতি পেসার টরেন্ট বোল্ট ( ৩/৩৭) . এবং টিম সউদী। ওদের যোগাযোগে ৪.৪ ওভারেই ৩২ রানেই ৩ উইকেট হারানো শ্রীলংকা দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। উইকেটে গ্রিপ এবং টার্ন ছিল। নিজেদের পরিকল্পনায় প্রতি আক্রমণ করে খেলছিল কুশল পেরেরা। বিচক্ষণ কেন উইলিয়ামসন সঠিক সময়ে লকি ফার্গুসনকে আক্রমণে এনে ২৮ বলে ৫১ রান করা পেরেরাকে সাজ ঘরে। প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৯.৩ ওভারে ৭০ রানে ৫ উইকেট হারানো শ্রীলংকার প্রতিরোধ দুর্গ ভেঙে পরে. উইকেটে টার্ন ছিল , মেধাবী বাম হাতি স্পিনার মিচেল সান্টনার স্পিনের মায়াবী জালে শ্রীলংকার মিডল অর্ডারকে চেপে ধরে। দুই একটি ক্যাচ না ফস্কালে ১১৩ রানে ৮ উইকেট হারানো লংকান ইনিংস হয়তো ১৫০ রানের নিচেই গুটিয়ে যেত. তবে প্রশংসা করতে হয় শ্রীলংকার লেজের সারির ব্যাটসম্যানদের। শেষ উইকেট জুটিতে মহিষ ঠিকশানা ( ৩৯*) এবং দিলশান মধুশঙ্কা (১৯), ৪৩ রান যোগ করে শ্রীলংকান ইনিংস ১৭১ পর্যন্ত প্রলম্বিত করে। কাল কিন্তু নিউজিল্যান্ড মাত্র ৪ জন প্রথম চয়েস বলার নিয়ে ঝুঁকি নিয়েছিল। শেষ দিকে গ্রিপিপিং উইকেটে রাচীন রাভিন্দ্রা ভালো বোলিং ( ২/২১) করে জানান দেয় অদূর ভবিষ্যতে চৌকষ খেলোয়াড় হয়ে বিকশিত হবার সম্ভাবনা আছে ওর।
বৃষ্টিতে খেলা পন্ড আ হলে ১৭২ রান তুখোড় নিউজিল্যান্ড বাটিংয়ের জন্য মামুলি ছিল. . দুই উঁচুমানের বাম হাতি ওপেনার ডেভন কোনওয়ে (৪৫) এবং রাচীন রাভিন্দ্রা (৪২) প্রথম উইকেট জুটিতে মাত্র ১২.২ ওভারে ৮৬ রান তুলে সহজ করে দেয় নিউ জিল্যান্ড মিশন। কেন উইলিয়ামসনের পরিকল্পনা ছিল দ্রুত রান তুলে নেট রান রেট উন্নত করা. আর এই প্রচেষ্টায় দ্রুত কিছু উইকেট পতন ঘটে। তার পরেও মাত্র ২৩.২ ওভারে ১৭২/৫ রান করে শুধু জয়ই মাত্র তুলে নেয় নি নিউ জিল্যান্ড সেমী ফাইনাল সম্ভাবনার দুয়ার পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের জন্য রুদ্ধ করে দিয়েছে। গাণিতিক ভাবে পাকিস্তানের সম্ভাবনা থাকলেও অলৌকিক কিছু ঘটাতে হবে পাকিস্তানকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ওদিকে শ্রীলংকা হেরে যাওয়ায় বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ৮ম স্থানে টুর্নামেন্ট শেষ করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার যোগ্যতা অর্জন করার।