স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতকে ভর্তুকি ও অদক্ষতা থেকে বের করে আনার পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। খবর বাসস।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার একটি নতুন যুগে চলে যাচ্ছে, আমাদের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য এই আমদানি খাতের রূপান্তর প্রয়োজন।’
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং এ খাতে দক্ষতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়ায় ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিদ্যুতের শুল্ক নির্ধারণের জন্য এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছি। আমরা ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি) সংশোধন করছি এবং মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ বাড়াতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির নীতির পুনর্মূল্যায়ন করছি।’
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে-জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে নিট শূন্য কার্বন নিঃসরণ অর্জনের জন্য বাংলাদেশের আনুমানিক ৩.৫ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার বার্ষিক ট্রানজিশন ফাইন্যান্সের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সরকার স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি)-র থেকেও দূরে সরে যাচ্ছে এবং আরও টেকসই বিদ্যুৎ নীতি বাস্তবায়ন করছে।
বিপিডিবি-এর একজন কর্মকর্তার মতে, দেশে ৬ ফেব্রুয়ারি ১১,৫৪১-মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, যেখানে গত বছরের ৩০ এপ্রিল দেশে সর্বোচ্চ ১৬,৪৭৭-মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়েছিল। বর্তমানে, দেশে ১৩৩টি ক্যাপটিভ প্ল্যান্টে ৩১,১৪৪-মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে এবং বিদেশি উৎস থেকে ২৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে।
মোট ট্রান্সমিশন লাইনটি ১৬,০৬০ সার্কিট কিলোমিটারে প্রসারিত করা হয়েছে এবং গ্রিড সাবস্টেশনের ক্ষমতা বেড়ে ৭৩,৯৯১ মেগাভোল্ট অ্যাম্পিয়ার (এমভিএ) হয়েছে, ৩০ জুন, ২০২৪ পর্যন্ত সারা দেশে ৬৪৮৭২৪.৭২ কিলোমিটার বিতরণ লাইন রয়েছে।
মোট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৭ লাখ এবং ৪ কোটি ৮৭ লাখ সেচ সংযোগ রয়েছে। সিস্টেম লস এখন ৭.২৫ শতাংশ।
ফাওজুল কবির বলেন, গত বছরের আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণের পর বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
উপদেষ্টা বলেন, সরকার অসদাচরণ রোধে বদলি ও নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য ৩০ নভেম্বর, ২০২৪-এ কুইক এনহ্যান্সমেন্ট অফ ইলেক্ট্রিসিটি অ্যান্ড এনার্জি সাপ্লাই (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ বাতিল করে ইতোমধ্যেই একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
এছাড়াও, সরকার আগামী ২০ বছরের জন্য প্রতি বছর ৫ মিলিয়ন টন পর্যন্ত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আর্জেন্ট এলএনজির সাথে একটি হেড অফ চুক্তি (এইচওএ) স্বাক্ষর করেছে।
এইচওএ ছিল একটি নন-বাইন্ডিং চুক্তি, যার অর্থ কোন পক্ষই নথিতে তালিকাভুক্ত শর্তাবলিতে সম্মত হতে বাধ্য ছিল না।
২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এবং আর্জেন্ট এলএনজির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জোনাথন বাস এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
সরকার বেসরকারি খাতে সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে ১২টি গ্রিড-যুক্ত সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য একটি উন্মুক্ত দরপত্র জারি করেছে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি), বিদ্যুৎ খাতের একমাত্র কর্তৃপক্ষ হিসাবে, প্রকল্পগুলোর জন্য সম্ভাব্য দরদাতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে একাধিক সংবাদপত্রে দরপত্র প্রকাশ করেছে।
মোট ৩২৩ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ১২টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে নোয়াখালীর শুধারামে ১০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ১৮ মেগাওয়াট, নীলফামারীর সবুজপাড়ায় ২০ মেগাওয়াট, মৌলভীবাজারে ২৫ মেগাওয়াট, বাজিতপুরে ২৫ মেগাওয়াট, কিশোরগঞ্জে ২০ মেগাওয়াট, চাঁদপুরে ২০ মেগাওয়াট। উখিয়া, টেকনাফে (কক্সবাজার), ঢাকার নবাবগঞ্জে ৩৫ মেগাওয়াট, কুড়িগ্রামে ৪৫ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ৪৫ মেগাওয়াট এবং ময়মনসিংহের ভালুকায় ৪৫ মেগাওয়াট।