সাবাশ আফগানিস্তান, আরো একটি মাইল ফলক জয়

সালেক সুফী

তুখোড় স্পিন বোলিং আর মারকুটে ব্যাটিং দিয়ে ভূমিকম্প বিদ্ধস্ত আফগানিস্তান ২০২৩ আরো এক অঘটন ঘটালো কাল চেন্নাই চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। ধীরগতির ঘূর্ণি উইকেটে বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবারের মোট চার জন উঁচুমানের স্পিন বোলার খেলিয়ে আফগানিস্তান দুর্ধর্ষ পাকিস্তানকে ২৮২/৭ রানে বেঁধে ফেলেছিলো।

উইকেট, পরিস্থিতি বিচারে সংগ্রহটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ছিল। কিন্তু জয়ের নেশায় নিবেদিত আফগানিস্তান পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিংকে তুলোধুনো করে অনায়েসে  মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ করে ৮ উইকেটের বিশাল জয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে থমকে দিলো।

এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তান শিরোপাধারী ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে চমক দিয়েছিলো। সম্ভবত আফগানিস্তানের এই দুটি জয় চলতি বিশ্বকাপের রসায়ন বা খোল নলচে পাল্টে দিতে কতটুকু ভূমিকা রাখবে। অন্তত বলা যায় ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তান দুটি দলের সেমিফাইনাল খেলা এখন অনিশ্চিত হয়ে গেলো।

সবাই হয়তো জানেন কাল বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বযুগের অন্যতম সেরা বাম হাতি স্পিন বোলার ভারতের বিষেন সিংহ বেদি পরলোক গমন করেছেন। ১৯৭০র দশক জুড়ে বেদি, প্রসন্ন, চারদরশেখর, ভেঙ্কটরাগবান স্পিন বোলিংকে শিল্পে পরিণত করেছিলেন।

কাকতলীয়ভাবে গতকাল বিশ্ব ক্রিকেটে উন্মেষ ঘটলো আরো একজন বাম হাতি রিস্ট স্পিনার আফগানিস্তানের ১৮ বছর বয়সী তরুণ নূর আহমেদের। আবির্ভাবেই নূর চমকে দিয়েছে ক্রিকেট বিশ্বকে।  নিয়ন্ত্রিত ফ্লাইট, চায়নাম্যান, আর্মার কি ছিল না।

পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানরা স্পিন ভালো খেলে। অথচ কাল নূরকে খেলতে রীতিমত হাসফাঁস করেছে বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম আফগানিস্তান চার চারজন বিশ্বমানের স্পিনার একসঙ্গে খেলিয়ে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।

বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেটসহ ৩টি উইকেট নিয়ে স্বর্ণালী অভিষেক হলো নূরের। পাকিস্তান ইনিংসে বাবর আজম (৭৪) এবং আব্দুল্লাহ শফিক ৫৮ রান করে প্লাটফর্ম গড়ে দিয়েছিলো।

শেষ দিকে ইফতিখার (৪০) এবং শাদাব খান (৪০) ষষ্ট উইকেট জুটিতে ৪২ বলে ৭৩ রান করে পাকিস্তানের স্কোর (২৮২/৭) কিছুটা ভদ্রস্থ করে। নূর ছাড়াও ভালো বোলিং করে রাশিদ খান, নবী, মুজিব।

উইকেটে অসম বাউন্স ছিল, স্পিন ধরছিল, রিভার্স সুইং হচ্ছিলো। তারপরেও জয়ের নেশায় কৃতকল্প আফগানিস্তান ব্যাটসম্যানরা সবাই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তুখোড় ব্যাটিং করেছে। গুরবাজ (৬৫), ইব্রাহিম জারদানের (৮৭) প্রথম উইকেট জুটিতেই যোগ হয়েছে ১৩০ রান।

সেখান থেকে ফিরে তাকায়নি রহমত শাহ (৭৭*) এবং হাসমাতুল্লাহ শাহিদী (৪৮*) । ওদের যোগাযোগে অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ হয়েছে ৯৬ রান।

১ ওভার হাতে ৮ উইকেটে জয় দিয়ে বিশ্বকাপে  আরো একটি উল্কাপাত ঘটালো আফগানিস্তান।হয়তো এই পরাজয়ে ছিটকে পড়বে শক্তিশালী পাকিস্তান। পাশাপাশি বাকি ম্যাচগুলোতে জয় পেলে কে জানে আফগানিস্তান হয়তো পৌঁছাবে সেমি ফাইনালে।

যাই হোক প্রথম দেখায় মুগ্ধতা ছড়িয়েছে ১৮ বছরের আফগান তরুণ নূর আহমেদ।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eighteen − 2 =